লোকটা আমার কথা শুনেস্থির হয়ে গেল।
আস্তে করে কাপটা নামিয়ে রেখে আমার দিকে ভালো করে তাকাল। ওর চোখ ঘোলাটে দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আলোর ভেতর থেকে দুটো ব্ল্যাকহোল তাকিয়ে আছে।
আমার মনে হয়েছিল ঐদিন থাকা অন্য কাস্টমারদের চেয়ে এই লোকের খুনি হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি-এখন জানলাম আমার অনুমান সঠিক।
“কি বলতে চাও?” সে বোকা সাজার ভান করল।
আমি নোটবুকটা বের করলাম। সেটা দেখে হালকা ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।
“সেদিন মোরিনো এটা খুঁজে পেয়েছিল।”
নোটবুকটা নিয়ে খুলে দেখল সে।
“আমি আশ্চর্য হয়েছি, তুমি ধরতে পেরেছে জিনিসটা আমার।”
“অন্তত এর অর্ধেক আসলে স্রেফ জুয়া ছিল। আমি তাকে বললাম কিভাবে ন**মাউন্টেনে গিয়ে মোরিনোর লাশ খুঁজেছি, তারপর কী চিন্তা করে এখানে এসেছি।
***
নোটবুকটা হারানোর পর খুনি কি চিন্তা করছিল? আমি সেটা কল্পনা করার। চেষ্টা করছিলাম।
সে কেন এই নোটবুকটা লিখেছে? মনে রাখার জন্য? কোন রকম রেকর্ড রাখার জন্য আমি নিশ্চিত ছিলাম, সে এটা বার বার পড়েছে, আর ওর কাছে নোটবুকটার যথেষ্ট মূল্য ছিল। সুতরাং নোটবুকটা যে হারিয়ে গিয়েছে তা সে অবশ্যই খেয়াল করেছে।
নোটবুকটা সে কোথায় রেখেছিল হয় পকেটে না হয় কোন ব্যাগে। যেহেতু মেঝেতে পড়ে ছিল, সুতরাং পকেট থেকেই পড়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। হয়তো বাথরুমে হাত ধুতে গিয়েছিল সে, রুমাল বের করার সময় পকেট থেকে নোটবুকটা পড়ে যায়।
তারপর কখন সে টের পেল, নোটবুকটা তার পকেটে নেই? দশ মিনিট পর? কয়েক ঘন্টা পর? আমি নিশ্চিত ছিলাম, ঐদিন শেষ হওয়ার আগেই সে হারানোর ব্যাপারটা টের পেয়েছিল।
সে নিশ্চয়ই মনে করার চেষ্টা করেছে শেষ কখন নোটবুকটা দেখেছে। তারপর যেখানে পড়তে পারে সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে।
আমি বাজি ধরতে রাজি আছি, সেরকম জায়গা আসলে কমই ছিল। কারন সে কিছুক্ষণ পর পরই নোটবুকটা খুলে পড়ত। সুতরাং শেষ যেখানে পড়েছে তার থেকে কাছাকাছি কোথাওই হারানোর কথা।
তারপর নিশ্চয়ই খুনি সেখানে খোঁজাখুঁজি করেছে, কিন্তু পায়নি। বুঝতে পেরেছে একজন নোটবুকটা পেয়ে নিয়ে গিয়েছে। এবং সে যদি পড়ে ফেলে তাহলেই শেষ! পুলিশ তৃতীয় ভিক্টিমের লাশ পেয়ে যাবে। লাশ পাওয়া সমস্যা না। সমস্যা হল যদি তারা নোটবুকে খুনির হাতের ছাপ পেয়ে যায়। কিংবা হাতের লেখা মিলিয়ে ধরে ফেলে।
আমার ক্ষেত্রে যদি এমন হত তাহলে আমি কি করতাম? অবশ্যই চতুর্থ আরেকজনকে খুন করতে যেতাম না। পুলিশ কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। হাজার হোক নোটবুকটা পাওয়া গিয়েছে এমন জায়গায় যেখানে খুনির আসা যাওয়া রয়েছে। পুলিশ ধরে নেবে খুনি আশেপাশেই আছে। এমন অবস্থায় কোন রিস্ক নেয়া চলে না।
কিন্তু কয়েকদিন পার হয়ে গেল। মিজুগুশি নানামির লাশ উদ্ধার হল না। কারন আমি বা মোরিনো কেউই নোটবুকটা পেলেও পুলিশের হাতে দিইনি।
খুনি প্রতি রাতে খবর দেখেছে, লাশ উদ্ধার হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে। নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত সে আবার খুন করতে চায় না…কিন্তু এদিকে আবার মোরিনো উধাও।
মোরিনো লুকিয়ে থেকে মজা করছে এরকম চিন্তা বাদ দিয়ে আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম খুনি কি করছে। আমি যদি খুনি হতাম আমি চতুর্থ একজন ভিক্টিম কেন বেছে নিতাম?
* আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না
* আমি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসি। পুলিশ আমাকে ধরতে পারবে না, ওদের মাথায় এত ঘিলু নেই।
* ধরা পড়লেও আমার কিছু আসে যায় না
* কেউ নোটবুকটা পায়নি, পেলেও কেউ নোটবুকটা পড়েনি
* পড়লেও বিশ্বাস করেনি
কিংবা আরেকটা হতে পারে যে নোটবুক যে হারিয়েছে তা সে টের পায়নি। এই হলো সব সম্ভাবনা…কিন্তু আমি আরেকটা থিওরির পক্ষে বাজি ধরলাম। আমার মনে হচ্ছিল খুনি ভেবেছে :
* কেউ নোটবুকটা পেয়েছে কিন্তু পড়তে পারেনি, যে কারনে পুলিশের হাতে দেয়নি ওটা। আর সে কারনেই মিজুশি নানামির লাশ এখনো উদ্ধার হয়নি।
কফি শপের মালিক আগ্রহের সাথে আমার এসব কথা শুনলেন।
“তাহলে কি থেকে তোমার মনে হলো, আমিই খুনি?”
নোটবুকটা তার থেকে নিয়ে খুললাম আমি। যেখানে আমার ঘাম লেগে লেখা নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে অংশটা দেখালাম। আপনি জানতেন আপনি কি কালি ব্যবহার করছেন। আপনি জানতেন, পানি লেগে ভিজে গেলে কেউ আর এর লেখা পড়তে পারবে না। আমি ধরে নিয়েছি খুনি ভেবেছে সে বাইরে কোথাও নোটবুকটা ফেলেছে, দোকানের ভেতর না। মোরিনো আমাকে বলেছিল সেদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছে খুনি জানত, সে বৃষ্টির সময়ে জিনিসটা হারিয়েছে।”
খুনি ভেবেছে নোটবুকটা যদি দোকানের মধ্যে পাওয়া যেত তাহলে সেটা পুলিশের হাতে পৌঁছত। কিন্তু মিজুগুশি নানামির লাশ পাওয়ার কোন খবর নেই। তার মানে খুনি ধরে নিয়েছে সে অবশ্যই বৃষ্টির মধ্যে বাইরে হারিয়েছে জিনিসটা। আমি ভাবলাম। সেক্ষেত্রে নোটবুকটা ভিজে যাবে, পড়ার অবস্থায় থাকবে না।
মোরিনো বলেছিল সেদিন বৃষ্টির মধ্যে একমাত্র যে বাইরে গিয়েছিল সে হল কফি শপের মালিক।
এত কিছু হিসাব করে আমি জুয়া খেলেছিলাম, সে-ই খুনি। আমি থামলে লোকটা বাঁকা হাসি দিল।
“আমি আসলেই ভেবেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে বাইরে কোথাও ফেলেছি নোটবুকটা,” সে স্বীকার করল। “মোরিনো উপরের তলায় আছে।”