“প্লিজ…আমি জানি…দয়া করে আর কিছু বোল না..” ও অনুনয় করল। ওর হাঁটু মাটিতে নামানো, মুখ নিচু করে আছে। সেইকি টের পেল ছেলেটা ওর দিকে এগিয়ে আসছে।
“তাকান আমার দিকে, ছেলেটা বলল।
ইতস্তত করে সেইকি ওর দিকে তাকাল। ছেলেটা আইডি কার্ডটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রেখেছে।
সেইকি মাথা বো করে কার্ডটা হাতে নিল। উঠে দাঁড়ানোর কোন ক্ষমতা ওর ছিল না।
“সেইকি, আমার কিছু প্রশ্ন ছিল। যখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনি মোরিনো আর মেয়েটার মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন তখন আমার ধারণা ছিল আপনি হয়তো একটা এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলেছেন। যে কারনে আপনি মেয়েটা কেমন দেখতে তা বুঝতে পারেননি। পুরো ব্যাপারটার এরকমই একটা ব্যাখ্যা হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছিল।”
সেইকি আইডি কার্ডটা শক্ত করে চেপে ধরে ছেলেটার কথা শুনছিল।
“কিন্তু কোথাও কোন রক্তের দাগ নেই, না পার্কের ওখানে, না মাটিতে, না আপনার গাড়িতে। আর এখন মেয়েটাকে পরীক্ষা করে বুঝলাম আঘাত পেলেও, দুএকটা হার ভাঙলেও, একমাত্র ইঞ্জুরি আসলে গলার কাছে ক্ষতটা। যেটা দেখে মনে হচ্ছে আত্মহত্যা। তার মানে এক্সিডেন্টে ওকে খুন করে এখানে এনে মাটি চাপা দেননি আপনি।”
সেইকি মাথা ঝাঁকাল। ছেলেটা এসে ওর হাঁটুতে হাত রাখল। “তাহলে কেন কবর দিয়েছেন ওকে?”
ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছিল না মেয়েটার মৃত্যুর জন্য সেইকিকে দায়ি করছে, সে সেফ জানতে চাইছিল। সেইকি প্রশ্নটার কোন সহজ উত্তর খুঁজে পেল না বলার জন্য। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে মাথা নাড়ল। “জানি না। আমি ওকে কবর দিয়েছি কারণ আমার ইচ্ছা হয়েছিল।”
যা সত্যি তাই ও উত্তরে বলল।
কেন ও কৌসুকিকে খুন করেছিল? কেন ওকে ভুতে পেয়েছিল যে জ্যান্ত মানুষ ধরে ধরে কবর দিতে হবে?
কোন কারণ নেই এর পেছনে। সেইকি এই দু-জনকে কবর দিয়েছিল কারণ ওর জন্মই হয়েছিল যেন এই কাজ করার জন্য।
“আমি ওদের দুজনকে কবর দিয়েছি কারণ আমার ইচ্ছা হয়েছিল।” ও আবার বলল। ওর বুক ব্যথা করছিল। এই উত্তর কোন মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। ওর হাত কাঁপছিল, আইডি কার্ডটা হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল। “আমি..”
কিভাবে ও বেঁচে থাকবে? ওর সত্যিকারের সত্ত্বার অস্তিত্ব জেনে যাওয়ার পর? কি ভয়াবহ জঘন্য একটা সত্য। ওর সামনে আর কি করার আছে এরপর?
কেন এরকম একটা হৃদয় নিয়ে ওকে জন্ম গ্রহণ করতে হল? কেন ও অন্য মানুষদের মত সাধারণ কেউ হতে পারল না? ওর মনের ভেতর প্রশ্নের পর প্রশ্ন জাগছিল, আর হৃদয় ভেসে যাচ্ছিল দুঃখ কষ্টে।
একজন সাধারণ মানুষের মতই তো সে বাঁচতে চেয়েছিল, খুন থেকে কোন আনন্দ পাওয়ার জন্য নয়। সে কখনো চায়নি মানুষজনকে জ্যান্ত কবর দিয়ে আনন্দ পেতে, মাঝরাতে গর্ত খুঁড়ে নিজেকে শান্ত করতে…সে শুধু কারো কোন ক্ষতি না করে বাঁচতে চেয়েছে।
বেশি কিছু তো চায়নি। অল্পতেই ও খুশি ছিল। ওর চাওয়া ছিল একটা সাধারণ জীবনের-যেমন ওর ইস্ত্রি করা শার্ট পরা কলিগের মত, কিংবা বাচ্চাদের ছবি ডেস্কে রাখা ওর বসের মত। ওরকম সৌভাগ্যবান হলে কত ভালোই না হত?
সেইকির গাল বেয়ে অশ্রু নেমে এল। সে ওখানেই হাঁটু মুড়ে বসে থাকল, অশ্রুগুলো ওর গাল বেয়ে নেমে মাটিতে হারিয়ে গেল। তার কোন ধারণা ছিল না এরপর আর কি করার আছে। পুরো দুনিয়া অন্ধকারে ঢেকে গেল, তার মনে হচ্ছিল অদৃশ্য এক কফিনে আটকা পড়ে গিয়েছে সে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ওর।
***
কিছুক্ষনের জন্য ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। হুঁশ ফেরার পর সেইকি দেখল ও পোর্চে বসে আছে। চারপাশে তখনো অন্ধকার, কিন্তু পাখির ডাক শুনে বোঝা যাচ্ছিল ভোরের সময় হয়ে এসেছে।
ঘরের বাতি জ্বলছে, আর কেউ সেখানে হাঁটাহাঁটি করছে। সেইকির শরীরে কোন শক্তি ছিল না যে উঠে গিয়ে দেখে। ওর হাতগুলো তখনো কাঁপছিল।
ও মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, একসময় ছেলেটা এসে হাজির এল।
ওদের মধ্যে চোখাচোখি হলে ছেলেটা জিজ্ঞেস করল এখন ভালো বোধ করছে কিনা। জানা গেল ছেলেটাই ওকে পোর্চে নিয়ে এসেছে।
“আমার মনে হয় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে।”
“আপনি অনেক কান্নাকাটি করেছেন এতক্ষন।”
সেইকি নিজের গালে হাত দিয়ে দেখল তখনো ভেজা।
“আশা করছি আমি যে অনুমতি ছাড়া বাড়ির ভেতরে গিয়েছিলাম সেজন্য আপনি রাগ করেননি,” ছেলেটা বলল।
সেইকি আবার বাগানের দিকে তাকাল। ও যে গর্ত খুঁড়েছিল তার কোন চিহ্নও নেই। চারটা খুঁটি আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। এক সেকেন্ডের জন্য ওর মনে হল ঘটনাগুলো ওর কল্পনা ছিল।
“ঐ বাঁশের খুঁটিগুলো কফিনের সাথে লাগানো হয়েছিল যাতে ভেতরের মানুষটা নিঃশ্বাস নিতে পারে, তাইনা?” ছেলেটা সেইকিকে জিজ্ঞেস করল। জানা গেল ছেলেটা গর্তটা আবার ভরাট করে ফেলেছে। কিন্তু কেন? আর সাথে সাথে পুলিশ ডাকেনি কেন?
মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডটাকে আশেপাশে দেখা গেল না। সে কি বাড়ির ভেতরে? ঘুমাচ্ছে? নাকি সেইকির মত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে?
মেয়েটা বিশ্বাস করত ওর বয়ফ্রেন্ড ঠিকই ওকে খুঁজে বের করবে আর ওকে একা ফেলে যাবে না। সেইকি ওদের ভালবাসার স্বপ্ন ভাঙার মূল্য কখনোই পরিশোধ করতে পারবে না।
সেইকি ঘুরে বাড়ির ভেতর তাকাল।
ছেলেটা ওর সেল ফোন দিয়ে কাউকে ফোন করছিল।
“আমি রাস্তায় তোমার আইডি কার্ডটা খুঁজে পেয়েছি,” ছেলেটা ফোনে বলল। বোঝা গেল ও আসল মোরিনো ইয়োরুর সাথে কথা বলছিল।