“কিন্তু মেয়েটার ব্যাগে একটা আইডি কার্ড ছিল..”
“মোরিনো ওর কার্ডটা হারিয়ে ফেলেছিল। আর এই মেয়েটা কার্ডটা পেয়ে মোরিনোকে ফেরত দিতে যাচ্ছিল। মোরিনো আজকে সকালে স্কুলে আমাকে বলেছে সেটা। সেজন্যই আমি বুঝেছি যে আপনি ছবি দেখে তিলের কথা জেনেছেন। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ওকে গাড়ি চাপা দিয়েছেন, চেহারা বোঝার উপায় ছিল না তাই ছবি দেখে আন্দাজ করে নিয়েছেন তিলটার কথা।”
সেইকি নিজের হাত দুটোর দিকে তাকাল। যখন ও মেয়েটাকে গাড়িতে ঢোকাচ্ছিল তখন মার খেয়ে মেয়েটার চেহারার অবস্থা এমনিতেও ভয়াবহ ছিল। আর কফিনে ঢুকানোর সময় ও ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকায়নি। ধরেই নিয়েছিল আইডি কার্ডের মেয়েটা আর এই মেয়েটা একই মেয়ে।
ধীরে ধীরে সেইকি ও ওর ভুলের পরিধি অনুভব করতে শুরু করল। ঐদিন সকালে মেয়েটা কেন পাগলের মত হাসছিল? এখন সেইকি বুঝতে পারছে মেয়েটা হাসছিল কারণ ও মেয়েটাকে আরেকজনের নামে ডেকেছিল। সেইকির ভুল ধরতে পেরে সে হাসছিল।
সেইকি গর্তের দিকে তাকাল। মেয়েটার পাশে বয়ফ্রেন্ডটা বসে আছে। সেইকি ওদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানত না। ওদের প্রেমের গভীরতা সম্পর্কে ওর কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু ওর সাথে মেয়েটার যেটুকু কথা হয়েছিল তা থেকে কিছুটা আঁচ করেছিল। ঐ ছোট অন্ধকার জায়গাটায় চাপা পড়লেও মেয়েটা কখনো সেইকির কাছে হার মানেনি। মেয়েটার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ছেলেটা ওকে উদ্ধার করতে আসবে।
ছেলেটা ওর পাশে বসে আছে এখন। আর কোন কথা বলছে না, চুপ করে কফিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
“সেইকি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি মেয়েটাকে আপনার বাড়িতে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন কিন্তু তখন আমার কোন ধারণা ছিল না কোথায় লুকিয়েছেন। কিন্তু যে মুহূর্তে আপনি দেখলেন মোরিনো বেঁচে আছে, ঘোরাফেরা করছে, আপনার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। বাগানের দিকে তাকালেন। তারপর সেখানে ছুটে গেলেন। তখন আমি আন্দাজ করে নিলাম যে আপনি ওকে বাগানে কোথাও মাটি চাপা দিয়েছেন।”
ছেলেটা মোরিনো ইয়োরুকে ইচ্ছা করেই ওর সেলফোন থেকে ফোন করেছিল, সেইকির কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্য। আর প্রতিক্রিয়া দেখেই সে বাগানের ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিল।
“তুমি…”
সেইকি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও কথা হারিয়ে ফেলল। কে এই ছেলে? ক্লাসমেটের জন্য প্রতিশোধ নিতে আসা কেউ? কিন্তু ছেলেটার কথা বলার ভঙ্গিতে কোন রাগের চিহ্ন ছিল না, ছিল না
সেইকির অপরাধের প্রতি কোন ধিক্কার। একদম শান্ত, নরম গলায় কথাগুলো সে সেইকিকে বলছিল।
এই ছেলের সাথে দেখা না হলে হয়তো ওর অপরাধ কোনদিন ধরা পড়ত না। কেন এই ছেলে এসবের সাথে জড়িয়ে পড়ল?
তখন ওর আইডি কার্ডের কথা মনে পড়ল। আইডি কার্ড খুঁজতে গিয়েই ছেলেটার সাথে দেখা।
“আমার আইডি কার্ড…ওটার কি হল?” সেইকি জিজ্ঞেস করল।
ছেলেটা মাথা নাড়ল। “ও, আপনি তাহলে আইডি কার্ড খুঁজছিলেন সেখানে?”
ছেলেটা ওর আইডি কার্ড দেখেনি।
“তোমার কাছে না থাকলে ওটা কোথায় গেল..?”
“শেষ কখন দেখেছেন সেটা?”
“অফিসে, আমার জ্যাকেটের পকেটে.” তারপর হয়তো…সে মুহূর্তে আরেকটা আইডিয়া ওর মাথায় এল।
“তুমি একটু ওর জামাকাপড় পরীক্ষা করে দেখবে.. সেইকি মেয়েটার দিকে আঙুল তুলে ইশারা করল। কবরটার কাছে যাওয়ার কোন ইচ্ছা ওর নেই। “হয়তো ওর কাছেই আছে আইডি কার্ডটা।”
গাড়ির ভেতর ও মেয়েটাকে ওর জ্যাকেট দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, আর মেয়েটার যদি আগেই জ্ঞান ফিরে থাকে…
ছেলেটা সেইকির পাশ থেকে সরে গিয়ে নিশ্চুপ বয়ফ্রেন্ত্রে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বুকে মেয়েটার পকেটগুলো হাতড়ে দেখল।
“এই যে এখানে,” সে সোজা হয়ে বলল, হাতে আইডি কার্ডটা। আর এই যে ওর নিজের আইডি কার্ড। স্কার্টের পকেটে ছিল।”
কার্ড দুটো সে সেইকির হাতে দিল।
তার মানে সারাটা সময় আইডি কার্ডটা মেয়েটার কাছে ছিল। সে হয়তো আইডি কার্ডটা নিয়েছিল ওর পরিচয় জানতে। পরে বাক্সের ভেতর নিজের সাথে রেখেছিল কোনদিন লাশ পাওয়া গেলে যাতে খুনিকে চিহ্নিত করা যায়। ওর এইসব কাজই সেইকির জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছিল।
মেয়েটা মাটির তলে থেকেও ওকে খেলায় হারিয়ে দিয়েছে। যে মুহূর্তে ও তাকে কবর দিয়েছে সেই মুহূর্তেই নিজের অজান্তে ফাঁদে পা দিয়েছে।
“সেইকি, আপনি..” ছেলেটা ওর আইডি কার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে।
সেইকি বুঝতে পারছিল ছেলেটা কি ভাবছে। সেইকি হাঁটুর সাথে মাথা লাগিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।
“হ..হ্যাঁ,”
ও চায়নি কেউ ব্যাপারটা জানুক।
সেইকি মুখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকাতে পারছিল না। ছেলেটার দৃষ্টি ওর শরীরে যন্ত্রণা সৃষ্টি করছিল। লজ্জায় ওর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল।
ছেলেটা দেখে ফেলেছে যে আইডি কার্ডটায় বিভাগীয় পুলিশ ডিপাটমেন্টের নাম সোনালি অক্ষরে লেখা। সেই সাথে সেইকির ছবি আর র্যাঙ্কও লেখা।
এরকম হওয়ার কথা ছিল না। সেইকি অনেক পরিশ্রমী ছিল, লোকজন ওকে বিশ্বাস করত। ও যখন টহল দিত তখন সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ করত। কৌসুকির বাবা-মা ওকে নিজেদের সন্তানের মত বিশ্বাস করতেন। একটা সময় ছিল যখন ও বিশ্বাস করত ওর মত দয়ালু মানুষের এ পেশায় আসা উচিত। আর এখন ও আইনের সাথে বেঈমানি করেছে, নিজের অবস্থানের সাথে বেঈমানি করেছে, নিজের দাদির সাথে করেছে যে কিনা ওকে লক্ষ্মী ছেলে বলত। এই দুনিয়ার সবকিছুর সাথে ও বেঈইমানি করেছে।