‘কারণ আছে। প্রতিদিন সকালে আমি এখান দিয়ে হাইস্কুলে পরে একটা মেয়েকে যেতে দেখি। আজকে দেখিনি। সেজন্য বললাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম তুমি তার কথা বলছ।”
ছেলেটা মাথা ঝাঁকাল। “একটা শুকনা মেয়ে, লম্বা চুল?”
“হ্যাঁ-ফ্যাকাসে ত্বক, বাম চোখের নিচে একটা তিল আছে, সেইকি মেয়েটার আইডি কার্ডে দেখা ছবিটা মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু আর কতক্ষন ওর এই কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে? বোঝাই যাচ্ছে ছেলেটা ওকে সন্দেহ করেছে। সেইকির অস্বস্তিবোধ আরও বেড়ে গেল। মনে হচ্ছিল কেউ একজন হাত দিয়ে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরে ধীরে ধীরে চাপ বাড়াচ্ছে।
“আপনি ঠিক আছেন? আপনাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে।”
“গরমে কাহিল হয়ে পড়েছি।”
“দাঁড়ান, আমি আসছি।”
ছেলেটা বেড়া ছেড়ে হেঁটে পার্কের গেটের দিকে গেল। দোলনার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর স্কুল ব্যাগ তুলে নিল কাঁধে। পার্ক থেকে বেরিয়ে সেইকির দিকে আসতে লাগল, চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ওর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত।
সেইকি ওর দুশ্চিন্তা থেকে সৃষ্ট ঘাম ফ্র থেকে মুছে ফেলল।
“গতকাল থেকে…শরীরটা একটু খারাপ যাচ্ছে।”
“এরকম অবস্থায় আমার সাথে কথা বলার জন্য জোর করায় আমি ক্ষমা চাইছি। বলেছিলাম আপনার বেশি সময় নেব না, কিন্তু নিয়ে ফেলেছি…হয়তো আপনার কোথাও গিয়ে একটু বিশ্রাম নেয়া উচিত।”
“হ্যাঁ…” সেইকি এক মুহূর্ত চিন্তা করার ভান করল, তারপর জানা উত্তরটাই বলল। “আমার বাসাই মনে হয় সবচেয়ে কাছে হবে।”
সেইকি পরিকল্পনা করল কয়েক কদম হেঁটে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করবে। ছেলেটা দৌড়ে আসবে ওকে ধরতে। সেইকি সেই সুযোগ নিয়ে ছেলেটাকে বলবে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সাহায্য করতে। তারপর ছেলেটাকে খুন করে আস্তে ধীরে পকেট-টকেট চেক করে দেখা যাবে। কিন্তু অভিনয় করার কোন প্রয়োজন পড়ল না।
“আপনাকে সুস্থ দেখাচ্ছে না-আমি কি আপনাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিব?” ভ্রু কুঁচকে বলল ছেলেটা। তাহলে তো ভালোই হলো।
“ধন্যবাদ, খুব ভালো হয়। ওদিকে যেতে হবে…”
তারা একসাথে হাঁটতে লাগল। সেইকি মাঝে মাঝে কেঁপে উঠল। ওর আসলেই খারাপ লাগছিল তাই অসুস্থ অভিনয় করতে একটুও সমস্যা হল না।
হাঁটতে হাঁটতে সেইকি অনুমান করার চেষ্টা করল ছেলেটা কে হতে পারে। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, আর এখন একসাথে হাঁটছে। বাসায় পৌঁছানোর পর সেইকি কি করবে? কিভাবে ছেলেটাকে খুন করবে?
সেইকির আবারো মাথা ঘোরাতে লাগল। সেই সাথে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ছেলেটাকে অন্য শিকারগুলোর মত খুন করার পরিকল্পনা করতে শুরু করল।
ওর মনের ভেতরের একটা অংশ অনুনয় করতে লাগল এরকম ভয়ঙ্কর কাজ না করার জন্য। কিন্তু ছেলেটা যদি ওর আইডি কার্ডটা পেয়ে থাকে আর ওর সাথে মেয়েটার সম্পর্ক অনুমান করে থাকে তাহলে সেইকির সামনে আর কোন পথ খোলা নেই ওকে খুন করা ছাড়া। অন্যথায় সারা দুনিয়া ওর কৃতকর্মের কথা জেনে যাবে।
ওর অফিসের লোকজন যখন জানবে আসল সেইকি একজন পশু, তখন কি ভাববে? যেই লোক নিজের বাগান থেকে ফুল নিয়ে আসত অফিস সাজানোর জন্য সেই মানুষ তলে তলে একজন খুনি? একজন পশু যে কিনা থুথুরও যোগ্য নয়? এই খবর পেয়ে কি তাদের মন খারাপ হবে? তারা কি রাগান্বিত হবে? ওদের কথাবার্তা যেন সেইকির কানে ভোলো করতে লাগল, লজ্জায় সেইকি মুখ তুলে তাকাতে পারছিল না, লজ্জার শিখাগুলো যেন জ্বলে উঠে ওকে গ্রাস করে নিতে চাইছিল।
এরকম কোন কিছু সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না। ছেলেটাকে মরতেই হবে। সেইকি চোখগুলো চেপে বন্ধ করে রাখল, নিজেকে বার বার এই কথাটা বলতে লাগল, কান্না আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করল।
অল্প সময়েই ওরা বাড়ির কাছে পৌঁছে গেল। রাস্তায় আসতে আসতে ওরা কি কথা বলেছিল তা সেইকির মনে নেই, জরুরি কিছু ছিল না মনে
“সুন্দর বাড়ি,” ছেলেটা সামনে তাকিয়ে বলল।
“হ্যাঁ কিন্তু পুরোনো। আসো ভেতরে আসো।”
গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। গাড়ি আসা যাওয়ার সুবিধার্থে গেটটা সবসময় ভোলাই থাকে। ছেলেটা ড্রাইভওয়েতে থেমে গেল, বাড়ির পাশের গ্যারেজটার দিকে চেয়ে আছে। গ্যারেজের দরজাগুলোও খোলা, আর একটা কালো গাড়ি ওদের দিকে মুখ করে আছে। সেইকি গাড়িটার পেছনের সিট থেকে মেয়েটার সব চিহ্ন পরিস্কার করে ফেলেছিল। কোথাও কোন রক্ত নেই, কোন চুল নেই, একদম কিছু নেই। তারপর গ্যারেজের দরজা খোেলা রেখে গিয়েছিল।
“আপনার কি একটাই গাড়ি? আপনি কি পুরো বাড়িতে একাই থাকেন নাকি?”
“হ্যাঁ।”
ছেলেটা বাগানের উপর চোখ বুলাল।
“অনেক গাছ তো?”
“গাছ লাগানো আমার শখ। এটা আমার ব্যক্তিগত ছোট বন।”
তারপর ওর অনুমতি নিয়ে ছেলেটা বাগানের দিকে গেল। সেইকিও পেছন পেছন গেল।
মেঘলা আকাশের নিচে সেইকির জন্মানো সবকিছু গাঢ় সবুজ দেখাচ্ছিল। ছেলেটা এক সারি চিরহরিৎ গাছ পার হলো, মনে হলো মুগ্ধ। “বাগানটা বেশ বড়।”
চিরহরিৎ গাছের সারির পর বাগানের খোলা জায়গা যেটা বাড়ির দক্ষিণ দিকের অংশ, পোর্চ আর দেয়ালের মাঝামাঝি অবস্থিত। অনেকগুলো ফ্লাওয়ার বেড পাথর দিয়ে ফ্রেম করা ছিল, কিন্তু ভেতরে খালি। চারা নেই, শুধু শুকনো মাটি।
দেয়ালের কাছে কিছু বাঁশের খুঁটি পোঁতা, যেখানে মর্নিং গ্লোরি লাগানো হয়েছিল, এখন খালি খড়কুটো পরে আছে। আর সেগুলোর নিচে…