সে নিশ্চয়ই দূর থেকে খেয়াল করেছে সেইকিকে।
“কিছু হারিয়েছেন বুঝি?” ছেলেটা প্রশ্ন করল।
“উমম,” সেইকি বিড়বিড় করল, কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ও চাইছে ছেলেটা চলে যাক কিন্তু সেটা বললে অদ্ভুত দেখাবে। হয়তো ও উত্তর না দিয়ে নিজের কাজ করলে দেখবে ছেলেটা চলে গিয়েছে।
“আপনি কি আশেপাশেই থাকেন?” সেইকি উত্তর না দেয়ায় ছেলেটা প্রশ্ন করল।
“হ্যাঁ,”
“আপনার নামটা জানতে পারি কি?”
কোন চিন্তা না করেই ও ছেলেটাকে সত্যি নাম বলে দিল।
“সেইকি? কিছু না মনে করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি? প্রশ্নটা একটু অদ্ভুত, তবে..”
“অদ্ভুত প্রশ্ন?”
“আমি আপনার বেশি সময় নেব না। কালকে রাতের চিৎকারটার ব্যাপারে,..আপনি কি কিছু জানেন?”
সেইকির মনে হলো কেউ খপ করে ওর হৃদপিণ্ড চেপে ধরেছে।
“চিৎকার..? কিসের চিৎকার..?”
“গতকাল রাত্রে নয়টার দিকে কাউকে এখানে চিৎকার দিতে শোনা গিয়েছে। আশেপাশে থাকে এমন একজন আমাকে জানাল। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনার বাসা এখান থেকে দূরে, বোধহয় শুনতে পাননি সেজন্য।” সেইকির প্রতিক্রিয়া দেখে ছেলেটা বলল।
সেইকি মাথা ঝাঁকাল, ছেলেটার বক্তব্যর সাথে একমত পোষণ করে।
“আসলে হয়েছে কি, আমার একজন ক্লাসমেট গতরাতে বাড়ি ফেরেনি। আজকে অর্ধদিবস স্কুল ছিল অথচ সে স্কুলেও আসেনি।”
সেইকি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারল না। ছেলেটা ওর চেয়ে অন্তত দশ বছরের ছোট হবে, কিন্তু ওর চোখগুলো ভীতিকর লাগছিল সেইকির কাছে। সে টের পেল পোশাকের নিচে প্রচুর ঘামছে। ছেলেটা মেয়েটার কথা বলছে..
“আমার ক্লাসমেট এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে প্রতিদিন, তাই আমি ভাবছিলাম গত রাতের চিল্কারের সাথে ওর কোন সম্পর্ক আছে কিনা..”
অবশ্যই আছে। সেইকি মেয়েটাকে জ্যান্ত কবর দিয়েছে। মেয়েটা কি তোমার ভালো বন্ধু?”
“আমার তো তাই ধারণা,” ছেলেটা একই সুরে উত্তর দিল। এই ছেলের কথাই কি মেয়েটা বলেছিল?
যেভাবে ছেলেটা উত্তর দিল তাতে তো মনে হচ্ছে, না। ছেলেটার ভাবসাব খুবই শান্ত, এমনভাবে মেয়েটার কথা বলছে যেন অপরিচিত কোন মানুষ। বিশ্বাস করা কঠিন যে তাদের মধ্যে গভীর কোন সম্পর্ক আছে।
“তো তোমার নিখোঁজ ক্লাসমেটের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বলে এখানে এসেছ?”
“আরে নাহ। ঘুরতে এসেছি বলতে পারেন।”
“ঘুরতে মানে..?”
“পুলিশ স্টেশনে শহরের একটা ম্যাপ টাঙ্গানো থাকে, লাল দাগ দেয়া।”
“যেসব জায়গায় ভয়াবহ এক্সিডেন্ট হয়?”
“হ্যাঁ, আপনি জানেন সেটার কথা? আমি ভেবেছি আমি ছাড়া কেউ জিনিসটা কখনো খেয়াল করেনি। আমার শখ হলো লাল দাগ দেয়া জায়গাগুলোর প্রত্যেকটায় ঘুরতে যাওয়া। যেখানে মানুষগুলো মারা গিয়েছিল, যেখানে ওদের জীবনের ইতি ঘটেছিল সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা, পায়ের নিচে রাস্তার পিচ অনুভব করা…এখানে আসার কারণও একই। সেই শখ। ভয়াবহ ঘটনা ঘটা জায়গাগুলো দেখতে যেতে আমার ভালো লাগে। আর আমার এমনও মনে হয়, যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে হয়তো সেই জায়গায় ঘটনাটা ঘটার দৃশ্য আবার দেখতে পাব।”
ছেলেটা পকেট থেকে হাত বের করে চেইন লিঙ্ক বেড়াটা ধরল। বেড়াটা কেঁপে উঠল, ধাতব ঝাঁকির শব্দ হলো। ছেলেটা সোজাসুজি সেইকির চোখে তাকিয়ে আছে।
কথাগুলো সেইকির হৃদস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিচ্ছিল। সে কি এই কারনে ওকে এসব কথা বলল কারণ ও মেয়েটাকে কিডন্যাপ করেছে তা জানে বলে? সেইকি চিন্তাটা বাতল করে দিল। প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু ওর বুক ধুকপুকানি কমলো না, দুশ্চিন্তা দূর হলো না।
পাখির চিৎকারের শব্দে সেইকি উপরের দিকে তাকাল। একটা নিঃসঙ্গ কাক উড়ে যাচ্ছে ঠান্ডা ধূসর আকাশের ভেতর দিয়ে। কালো ঠেটিটা সোজা সেইকির দিকে তাক করা।
দাঁড়াও দাঁড়াও। সেইকির মাথায় একটা চিন্তা এল।
হতে পারে ছেলেটা ওর আইডি কার্ডটা খুঁজে পেয়েছে–আর মেয়েটার চিৎকারের সাথে সেটার সম্পর্ক অনুমান করে নিয়েছে। আর ধরে নিয়েছে কালপ্রিটটা আইডিটার জন্য এখানে আসবেই…
আর এখন সেটা লুকিয়ে রেখে ছেলেটা ওকে পরীক্ষা করছে। আসলেই কি এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
“তো আমার এই নিখোঁজ ক্লাসমেট…আপনার কি ধারণা সে কোথায় থাকতে পারে?” ছেলেটা প্রশ্ন করল। আবারো সে ঠান্ডা চোখে সেইকির প্রতিক্রিয়ার উপর নজর রাখছে।
সেইকির ইচ্ছে করছিল ছুটে দৌড় দিতে। ছেলেটা বেড়ার ওপাশে আছে। ওকে ধরতে হলে, পার্কের ঢোকার গেট পর্যন্ত পুরোটা ঘুরে আসতে হবে ওকে। ততক্ষণে ও পালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে…ছেলেটা যদি সত্যি ওর আইডি কার্ড হাতে পেয়ে থাকে তাহলে পুলিশের কাছে গিয়ে সেইকির সন্দেহজনক ব্যবহার খুলে বললেই..
“আপনি কি কিছু জানেন নাকি এ ব্যাপারে?”
“না কিছু জানি না আমি।”
“ওহ আচ্ছা, আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো কিছু জানবেন।”
“কেন এরকম মনে হলো?…”
“হয়তো একটু বেশিই চিন্তা করছিলাম। কারণ আপনি বললেন আপনি চিৎকার শুনতে পাননি।”
“তো কি হয়েছে..?”
“ব্যাপারটা মিলল না। আমি শুধু চিল্কারের কথা বলেছি। কিন্তু যখন নিখোঁজ ক্লাসমেটের কথা বললাম, আপনি জানতে চাইলেন মেয়েটা আমার ভালো বন্ধু কিনা। মেয়েটা’, আমি একবারও বলিনি আমার ক্লাসমেট মেয়ে নাকি ছেলে। আপনি কী করে জানলেন, সে একজন মেয়ে?”