“একা মরবে না?”
“আমি একা পচে মরব না!”
“তুমি বলতে চাইছ, তোমার সাথে অন্য কেউও মরবে? যে ছেলের কথা কালকে বললে সে?”
“সে আমাকে একা মরতে দেবে না।”
মেয়েটা ওর কবরে শুয়ে কাঁদছে? ওর গলা একটু ভেজা ভেজা শোনাল। কিন্তু তারপরেও সেখানে একটা প্রতিজ্ঞার সুর ছিল।
সেইকি ওর বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে জানতে চাইল, সেফ উপহাস করার জন্য। হাই স্কুলে পড়া বাচ্চা ছেলেমেয়ে, তাদের প্রেম হলো দুই দিনের প্রেম। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওর নার্ভাস লাগছিল। ওর মাথার উপর একটা বড় কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে, যেকোন সময় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার অপেক্ষায়।
“আমি বুঝতে পারছি না…তুমি এই অবস্থায় এমনভাবে কিভাবে কথা বলতে পারছ। মোরিনো…তুমি এখানে মাটির নিচে একা পচে মরবে…একা। আর কোন কিছু তোমার কপালে নেই।” সেইকি এ কথা বলে ওখান থেকে চলে এল।
মেয়েটার কথাগুলো শোনার সময় ওর মনে পড়ছিল অফিসে ওর অল্পবয়স্কা কলিগ ওকে যে প্রশ্ন করেছিল-ও কখনো বিয়ে করবে কিনা।
যেকোন গভীর সম্পর্ক থেকে ওকে কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে, যেরকম গভীর সম্পর্ক পরিবার কিংবা বন্ধুদের মধ্যে থেকে থাকে।
বেচে থাকার জন্য এছাড়া ওর সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। অন্য মানুষদের দিকে ও হাসত আর ফালতু আলোচনায় যোগ দিত ঠিকই, কিন্তু ওর মন কখনো কারো সাথে যুক্ত হত না। মেয়েটার কথাগুলো ওকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
সেইকি ঠিক করল কিছু একটা পেটে দিয়ে নিজেকে শান্ত করবে। যদিও ওর ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিন্তু কিছু খেলে হয়তো ভালো লাগবে।
সে ঠিক করল বাইরে খেতে যাবে। স্যুটের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে জ্যাকেটের পকেটে পুল। তারপর জুতা পরে দরজার দিকে যেতে গিয়ে একটা খটকা লাগল।
সেইকি সব সময় ওর অফিসের ব্যাজ সাথে রাখে। ব্যাজসহ আইডি কার্ডটা একটা বাদামি রঙের চামড়ার কেইসে রাখা ছিল। আর সেটা ওয়ালেটের সাথে একই পকেটে থাকত সবসময়। কিন্তু গত রাতের পর সেটা ওর চোখে পড়েনি আর।
সেইকি আবার জুতো খুলে রুমে ফিরে গেল, যেখানে স্যুটটা ঝুলছিল। যে পকেটে ওয়ালেটটা রাখা ছিল সেটায় হাত ঢুকাল। কিছু নেই ভেতরে। অন্য পকেটগুলোও চেক করল। আইডি কার্ডের কোন চিহ্ন নেই কোথাও। আশেপাশে তাকাল, ফ্লোরের কোথাও পড়েছে কিনা। ম্যাগাজিনগুলো তুলে টেবিলের উপর রাখল, ফুটোন তুলে নিচে দেখল। কোথাও নেই।
জিনিসটা ও শেষ কখন দেখেছিল? অফিসে ওর সাথে ছিল, পরিস্কার মনে আছে। অন্য কোথাও কি পড়েছে?
দ্রুতই সেইকি একটা উত্তর খুঁজে পেল, আর উত্তরটা পেয়ে ওর মাথা ঘোরাতে লাগল। যতই ও ব্যাপারটা উপেক্ষা করতে চাইল ততই আরো সন্দেহ বাড়তে লাগল।
আইডি কার্ডটা যদি কোথাও পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেটা মেয়েটার সাথে মারামারি করার সময়ই পড়েছে…গত রাতে, পার্কটার কাছে। মেয়েটা যখন চিৎকার দিয়েছিল তখন ওর কনুই এর গুতা লেগেছিল সেইকির বুকে। তখন নিশ্চয়ই ধাক্কা লেগে পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল আইডি কার্ডটা।
বাগান থেকে পাখিদের ডানা ঝাঁপটানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ওর বাসার চারপাশের গাছগুলোতে অনেক পাখির বাসা। সকালে বাগানে হাঁটার সময় সে পাখির গান শুনতে পায়। কিন্তু আজকে পাখির গান ওর কানে অশুভ শোনাচ্ছিল, যেন আসন্ন কোন দুর্যোগের সংবাদ দিচ্ছে তারা।
আগেরদিন রাস্তার ঝরা পাতাগুলো পরিস্কার করা হয়েছিল। তখনও আইডি কার্ডটা সেখানে ছিল না। কিন্তু আজকে যদি সেটা সেখানে পাওয়া যায় তাহলে…লোকগুলো জানবে যে আইডি কার্ডটার মালিক গত রাতে কি ভোরে এদিক দিয়ে গিয়েছিল।
আইডি কার্ডটা কার তা জানা কোন সমস্যাই না, সেইকির নাম পরিস্কার করেই লেখা আছে। বলা মুশকিল কতজন লোক দুটো ব্যাপারকে একসাথে মিলিয়ে দেখবে মেয়েটার চিৎকার আর নিখোঁজ হওয়ার সাথে ওর আইডি কার্ডটা সেখানে পড়ে থাকার কোন সংযোগ আছে। ভালো হয় যদি কেউ পাওয়ার আগেই সেটা খুঁজে পাওয়া যায়।
সেইকি দ্রুত ওর জুতো পড়ে বাইরে গেল। পার্কটা খুবই কাছে, গাড়ি বের করার কোন মানে হয় না, দৌড়েই চলে যাওয়া যাবে।
কিন্তু বাইরে যাওয়ার আগে সে ঠিক করলে মেয়েটাকে কিছু কথা বলবে। গাছগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে পোর্চের সামনের অংশটায় গেল। দেয়ালের কাছে বাঁশের খুঁটিগুলোর সামনে গিয়ে থেমে গেল।
বাঁশের খুঁটিগুলোর ভেতর থেকে মেয়েটার হাসির শব্দ ভেসে আসছিল। ভাঙা রেকর্ডের মত সে অবিরাম হেসে চলছে।
ওদের সমস্ত আলোচনায় মেয়েটা কখনো নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করেনি। কখনো চিৎকার করেনি, বরং শান্তভাবে কথা বলেছে সেইকির সাথে, নিজের অনুভুতির উপর পুরোপুরি দখল বজায় রেখেছে, ভেঙে পড়েনি।
মাটির নিচের বাক্সের মধ্যে কি ভয় মেয়েটাকে পাগল করে ফেলল?
সে এতটা সময় এত চুপচাপ ছিল যে এখন এই হাসি ওর স্বভাবের সাথে মিলছে না। সেইকি কিছু বলার সাহস না পেয়ে সেখান থেকে সরে এল।
৩
সেইকি যখন পার্কে পৌঁছাল ততক্ষণে দুপুর হয়ে গিয়েছে। পরিস্কার দিন হলে সূর্য এসময় মাথার উপর থাকত। কিন্তু আজকে ঘন মেঘগুলো সূর্য পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে, সেই সাথে ঠান্ডা হাওয়া বইছে।
পার্কটা ছোট, ছিমছাম। আবাসিক এলাকাটার একদম মাঝখানে অবস্থিত।
পুরো জায়গাটা চেইন লিঙ্ক বেড়া দিয়ে ঘেরা যাতে বাচ্চা ছেলে পেলে দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে না পড়ে। সেইকি সাইডওয়াক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পার্কের ভেতরে তাকাল। ভেতরে একটা ভোলা জায়গায় প্লে গ্রাউন্ড।