তার মানে সে সম্ভবত মোরিনোকে চতুর্থটায় নিয়ে গিয়েছে–ন** মাউন্টেনে।
স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে জানতে চাইলাম কোন ট্রেন ধরে সেখানে যাওয়া যাবে। তারপর টিকেট কেটে ট্রেনে উঠে পড়লাম।
ন** মাউন্টেনের কাছে স্টেশনে নেমে আবার বাস নিতে হলো। চারদিকে আঙুরের ক্ষেত। বাস থেকে ক্ষেতে লাগানো আঙ্গুরের বিজ্ঞাপন দেখতে পেলাম।
খুনি এখানে এলে অবশ্যই গাড়ি দিয়ে এসেছে। লাশ সে কোথায় ফেলতে পারে? নিশ্চয়ই পাহাড়ের গভীরে দুর্গম কোথাও হবে, যেখানে মোরিনোর চিৎকার কেউ শুনতে পারবে না। জায়গাটা কোথায় হতে পারে সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই নেই।
বাসে আমি আর ড্রাইভার ছাড়া কেউ ছিল না। বাসের ভেতর এলাকার একটা ম্যাপ লাগানো ছিল। ওটা দেখে আর ড্রাইভারের সাথে কথা বলে বের করার চেষ্টা করলাম খুনি কোথায় গিয়ে থাকতে পারে। সে জানাল আমি যেদিক থেকে এসেছি সেদিক থেকে যারা ন**মাউন্টেনে ঘুরতে আসে তারা সবসময়ই এই বড় রাস্তা দিয়েই আসে।
পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার রাস্তার সামনে এসে আমি বাস থেকে নামলাম। রাস্তাটা যথেষ্ট প্রশস্ত। খুনি যদি গাড়ি নিয়ে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে।
রাস্তা ধরে হেঁটে উঠতে লাগলাম। পাকা রাস্তা হলেও কোন ট্রাফিক ছিল না সেখানে।
বনের কাছে গিয়ে রাস্তা থেকে বিভিন্ন দিকে সরু সরু রাস্তা চলে গিয়েছে। খুনি এর যে কোনটা দিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। যতদূর যাচ্ছি রাস্তা তত সরু হয়ে আসছে। উপর থেকে বনের মাঝে ছোট ছোট গ্রাম চোখে পড়ছিল। ছোট ছোট বাড়ি ঘর।
চূড়ার কাছাকাছি যেতেই একটা ছোট পার্কিং লট চোখে পড়ল। সাথে ছোট একটা বিল্ডিং, দেখে মনে হল অবজারভেটরি হবে। এর পর আর গাড়ি যেতে পারবে না। বেশি হাঁটা লাগেনি তাই সেদিনের মত কাহিল হইনি।
মোরিনোর মৃতদেহ খুঁজছিলাম।
গাছপালার ভেতর দিয়ে পথ চলে গেছে। আশেপাশের যে শাখা পথ ছিল সেগুলো দিয়ে হেঁটেও খুঁজলাম।
আকাশ মেঘলা ছিল বলে বনের মধ্যেও বেশ অন্ধকার। গাছের ডাল পালার ভেতর দিয়ে যতটুকু সম্ভব দূরে দেখার চেষ্টা করলাম। কোনো বাতাস নেই। চারপাশে খালি পোকামাকড়ের গুঞ্জন।
ন**মাউন্টেন বিশাল জায়গা। সেখানে একটা লাশের টুকরা টাকরা খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ ছিল না। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হলাম। হেঁটে আবার যখন বাস স্টপে ফেরত আসলাম তখন পুরো কাহিল, জামাকাপড় ঘামে ভিজে গিয়েছে।
রাস্তার সাথে অল্প কিছু বাড়িঘর ছিল। উপরে যাওয়ার রাস্তার পাশের এক বাগানের বুড়োকে জিজ্ঞেস করলাম আগেরদিন কোন গাড়ি যেতে দেখেছে কিনা। সে মাথা নাড়ল। তার বাসার লোকজনকে ডেকে একই প্রশ্ন করল। কিন্তু কেউ কোন গাড়ি দেখেনি।
তাহলে মোরিনো ঐ মেসেজটা কেন পাঠাল? খুনি কি ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? ও তো বোকা মেয়ে না, অন্যদের মত এত সহজে ওকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব নয়।
নাকি আমি একটু বেশিই কল্পনা করছি? হয়তো তাকে কেউ বন্দি করেনি?
বাস স্টপে বসে আবার নোটবুকটা খুলে পড়তে লাগলাম। খুনের বিবরণ থেকে খুনি সম্পর্কে জানার জন্য যে দক্ষতা আর ট্রেইনিং দরকার সেটা আমার নেই।
কপাল থেকে ঘাম বেয়ে নোটবুকের উপর পড়ে কালি মাখিয়ে গেল। লেখা পড়া যাচ্ছিল না। পানিতে নষ্ট হয় এমন কালি ব্যবহার করেছিল খুনি।
কোথায় বসে খুনি এই লেখাগুলো লিখত? খুন করে ফিরে বাসায় বসে? আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে সে খুনের সময় ওখানে বসে কিছু লিখত কিনা। নিশ্চয়ই সে তার স্মৃতি থেকে লিখত, কল্পনার রং মেখে।
বাস এলে উঠে দাঁড়ালাম। হাত ঘড়িতে তিনটার বেশি বাজে। পাহাড় ছেড়ে আবার শহরে ফিরে যাচ্ছি আমি।
৪
মোরিনো সবসময় যে কফি শপটায় যায় সেটা ছিল স্টেশনের কাছে একটা আরকেডের মাঝামাঝি। আমাকে জায়গাটার কথা জানিয়েছিল আগে, কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি।
ও যেরকম বলেছিল, জায়গাটায় আলো খুব কম। আঁধারে বরং আমি সস্তি বোধ করছিলাম। হালকা মিউজিক বাজছিল, কেউ খেয়াল করছি মনে হচ্ছিল না।
আমি কাউন্টারে গিয়ে বসলাম।
শপের পেছন দিকে বাথরুমের সাইন দেখা যাচ্ছে। বাথরুমের সামনে ফ্লোরের দিকে তাকালাম, যেখানে মোরিনো নোটবুকটা পেয়েছে।
কফি শপে আমি ছাড়া মাত্র একজন কাস্টমার ছিল। স্যুট পরা একজন তরুণী। জানালার পাশে বসে কফি খেতে খেতে ম্যাগাজিন পড়ছিল।
দোকানের মালিক আমার অর্ডার নিতে এলে জানতে চাইলাম ঐ তরুণী এখানে প্রায়ই আসে কিনা।
সে মাথা ঝাঁকাল। মুখ শুকনো। বুঝতে পারছে না এই প্রশ্নের মানে কি।
“জরুরি কিছু না, এমনি। আপনার সাথে হ্যান্ড সেইক করলে কোন সমস্যা আছে?”
“হ্যান্ড সেইক..? কেন?”
“উপলক্ষটি চিহ্নিত করে রাখার জন্য।”
দোকানের মালিকের চেহারা নিরীহ ভদ্র গোছের। বয়স আছে, কিন্তু আবার মধ্যবয়স্ক বলার মত বয়সও না। মলিন ত্বক। কালো টিশার্ট পরা, যে কোন দোকানে যেমন পাওয়া যায়। চুলগুলো যত্ন করে আঁচড়ানো।
প্রথমে সে আমাকে একজন অদ্ভুত কাস্টমার ভেবেছিল। কারন সম্ভবত আমি সোজা তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম দেখে।
সে গিয়ে তাড়াতাড়ি আমার জন্য কফি নিয়ে এল।
“আমার একজন বান্ধবি আছে, নাম মোরিনো। আপনি কি ওকে চেনেন?”
“হ্যাঁ নিয়মিত আসে এখানে।”
আমি জানতে চাইলাম ও এখনো বেঁচে আছে কিনা।