“হেল্প।”
শুধু একটা শব্দ, আর কিছু নেই।
আমি তাড়াতাড়ি উত্তরে লিখলাম : “কি হয়েছে?”
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেও কোনো উত্তর এল না। এরপর আমি ওকে ফোন করলাম। কল ঢুকছিল না-হয় ফোনটা বন্ধ নয়তো নষ্ট।
সন্ধ্যায় মোরিনোর বাসায় ফোন করলাম। অনেক আগে একবার ও আমাকে ওর বাসার ফোন নাম্বার দিয়েছিল। এমন না যে সে ভেবেছিল আমি ওকে কখনো ফোন করব, বরং দেখাতে চেয়েছিল যে নাম্বারটা ডায়াল করতে গেলে বাটনের অক্ষরগুলো দিয়ে কাকতালীয়ভাবে একটা অর্থ দাঁড়ায়, যে কারনে নাম্বারটা মনে রাখা সহজ ছিল।
ওর মা ধরলেন। মহিলার গলার স্বর বেশ উঁচু আর অনেক দ্রুত কথা বলেন।
আমি তাকে জানালাম যে আমি ওর সাথে পড়ি, ক্লাসের কিছু ব্যাপারে মোরিনোর সাথে কথা বলা দরকার, সেজন্য ফোন করেছি।
কিন্তু মোরিনো বাসায় ছিল না।
ওকে আক্রমণ করা হয়েছে এই চিন্তা বাদ দিলাম। কিন্তু নোটবুকের লেখাগুলো যেহেতু, সত্যি, সুতরাং সেদিন খুনি সম্ভবত মোরিনোর সাথে একই ক্যাফেতে উপস্থিত ছিল। আর সম্ভাবনা আছে, সে মোরিনোকে মিজুশুশি নানামির মত সাজগোজে দেখেছে। যে মেয়েকে কিছুদিন আগেই খুন করেছে, প্রায় তার মত হুবহু আরেকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে খুনি নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়েছে সে। হয়তো তার প্রলোভন…কিন্তু মোরিনোকে আসলে লক্ষ্যবস্তু করার সম্ভাবনা খুবই কম। হাজার হোক এরকম সাজগোজ করা মেয়ের সংখ্যা কম নয়।
খুনি ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছে এই সন্দেহ করার সবচেয়ে বড় কারন হলো, সম্ভবত খুনি আর মোরিনোর বাসা কাছাকাছি। তারা একই কফি শপে ছিল। যদি না শুধু ঐদিনের জন্য খুনি দূরের কোন কফি শপে এসে থাকে, তাহলে মোরিনোর সাথে তার প্রতিদিন দেখা হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ভালই।
সে রাত পুরোটা সময় ধরে আমি এসব চিন্তা করলাম! হয়তো মোরিনো এর মধ্যেই খুন হয়ে গিয়েছে। হয়তো কোনো পাহাড়ের চূড়ার ওর টুকরো টুকরো করা শরীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
এসব কল্পনা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
***
পরদিন আবার ওর বাসায় ফোন করলাম।
মোরিনো তখনও বাসায় ফেরেনি। ওর মায়ের বক্তব্য অনুসারে, এই প্রথম সে সারা রাত বাইরে ছিল, তাও আবার বাসায় না জানিয়ে। মহিলা দুশ্চিন্তা করছিলেন।
“তা বাবা, তুমি কি ওর বয়ফ্রেন্ড?” মোরিনোর মা জিজ্ঞেস করলেন।
“জি না একদমই না,”
“ঠিক আছে, লজ্জার কিছু নেই, আমি সবই জানি।”
মোরিনোর মায়ের মনে কোন সন্দেহ নেই যে তার মেয়ের একজন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে। মোরিনোর কখনোই কোন বন্ধু বান্ধব ছিল না। আর এলিমেন্টারি স্কুলের পর এই প্রথম কেউ ফোন করে ওর খোঁজ নিচ্ছে।
“ইদানিং ও উজ্জ্বল রঙের সব জামাকাপড় পরছে, তখনই বুঝলাম নিশ্চয়ই ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড হয়েছে।”
ফোনের বিল কত আসবে তা নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হতে লাগল।
“আচ্ছা একটু দেখবেন ওর রুমে কোন ছোট বাদামি রঙের নোটবুক আছে কিনা?”
মহিলা ফোন রেখে গিয়ে দেখে আসলেন। একটু বিরতির পর আবার তার গলা শোনা গেল। “ওর ডেস্কের উপর ওরকম কিছু একটা আছে, ওটার কথাই তুমি বলছ কিনা বুঝছি না…।”
এর মানে হল নোটবুকটা মোরিনোর সাথে ছিল না। সাথে থাকলে আর খুনি যদি ওকে সেটা পড়া অবস্থায় দেখত তাহলে অবশ্যই মুখ বন্ধ করার জন্য আক্রমণ করত।
আমি মোরিনোর মাকে জানালাম, নোটবুকটা নিতে আসছি। মহিলার থেকে বাসার ঠিকানা নিলাম।
ফোন রেখেই সাথে সাথে বের হলাম। ওর বাসা স্টেশন থেকে খুব একটা দূরে না, কিন্তু আগে কখনো যাই নি।
স্টেশনের পেছনের একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের চারতলায় থাকত ও।
সেখানে গিয়ে বেল বাজালাম। মোরিনোর মা-ই দরজা খুললেন, কোনো সন্দেহ নেই, কারন গলার স্বর ফোনের মত একইরকম।
“আস আস, ভেতরে আস।”
ভদ্রমহিলা এপ্রন পরেছিলেন। তাকে দেখতে ঠিক সাধারণ গৃহিণীদের মতই লাগছিল। মোরিনোর থেকে একদম আলাদা। এরকম একজন মহিলার গর্ভে কী করে মোরিনোর মত সন্তান জন্মাল ভেবে আমি অবাক হলাম।
ভেতরে গেলাম না। নোটবুক নিয়েই বিদেয় হওয়ার ইচ্ছা আমার। উনি নোটবুকটা এনে আমার হাতে দিলেন। জিজ্ঞেস করলাম ভেতরের লেখা পড়েছেন কিনা।
তিনি মাথা নাড়লেন। “এত ছোট হাতের লেখা পড়ার ধৈর্য আমার নেই।”
নোটবুকের চেয়ে তার আগ্রহ বেশি আমাকে নিয়েই।
“দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হওয়ার পর মোরিনো হঠাৎ নিয়মিত ক্লাসে যেতে লাগল। এখন আমি বুঝতে পারছি কারণটা কি!”
আগের বছর নাকি মোরিনো বলত স্কুল খুবই বোরিং। আর প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। আমার এ তথ্য জানা ছিল না। ওর চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের মত, ওর আগ্রহ অনাগ্রহও অস্বাভাবিক। আর ও কারো সাথে মিশতেও পারত না। বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতো। খুবই স্বাভাবিক যে ও স্কুলে যেতে পছন্দ করত না।
আমি ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম শেষ কখন মোরিনোকে দেখেছেন। “গতকাল দুপুরে…যতদূর মনে পড়ে। বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন।”
“যাওয়ার আগে কিছু বলেছিল?”
মোরিনোর মা মাথা নাড়লেন। “তুমি কি ওকে খুঁজে দেখবে?” যখন চলে আসছিলাম তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, “যদি সে এখনো বেঁচে থাকে।”
ওর মা ভাবলেন আমি মজা করছি, হেসে ফেললেন তিনি।
***
স্টেশনের দিকে ফিরতে ফিরতে নোটবুকটা খুলে পাহাড়ের তালিকাটা বের করলাম। যেই তালিকাটা খুনি তৈরি করেছিল লাশ রাখার জন্য। এটা স্পষ্ট যেসব পাহাড়ের পাশে ⃣ চিহ্ন দেয়া সেগুলো তার সবচেয়ে পছন্দ ছিল। মাত্র চারটার পাশে এই চিহ্ন ছিল। এখন পর্যন্ত এই চারটার তিনটাতেই লাশগুলো পাওয়া গিয়েছে।