“ও সব সময় আমার উপর নির্ভর করত।”
আমরা লম্বা এক মুহূর্ত চুপ করে বসে থাকলাম। বাতাসে অদ্ভুত একটা টানটান ব্যাপার ছিল। আমি আবার ওর দিকে তাকালাম।
“মোরিনো ইয়ুর ব্যাপারে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমি সব খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে নিশ্চিত নই কিন্তু..”
মোরিনো আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দূরে তাকাল, তারপর চোখ বন্ধ করে ফেলল। ওর চোখের গাঢ় দাগগুলোর উপর চোখের পাতাগুলো কাঁপছিল।
“আমি ধরে নিয়েছিলাম তুমি জানবে,” সে কর্কশ কন্ঠে বলল। সে জানতে চাইল কি কি জেনেছি আমি।
“ইয়ু মারা গিয়েছিল আট বছর বয়সে, এখন থেকে নয় বছর আগে, আমি বললাম। মোরিনো ওর চোখ খুলল না। “নয় বছর আগে সেই দিনে, ছাউনির ভেতর তুমি ওর দেহ ঝুলতে থাকা অবস্থায় পেয়েছিলে তারপর তোমার নানিকে গিয়ে বলেছিলে। কিন্তু তুমি আগেই জানতে যে মৃতদেহটা সেখানে ছিল। তুমি বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে কারো আসার অপেক্ষায় ছিলে যাতে তুমি অভিনয় করতে পার যে তার চোখের সামনেই তুমি মৃতদেহটা আবিস্কার করেছ।”
আমি চুপ করলাম, ওর প্রতিক্রিয়া খেয়াল করছিলাম। সে এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল তারপর বলল আর কিছু বলার আছে কিনা।
“তুমি এর আগেই জানতে যে তোমার বোন মৃত। কিন্তু তুমি অভিনয় করছিলে, সত্য লুকাতে চাইছিলে। আমি চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করছিলাম কেন তুমি এরকম কিছু একটা করতে পার। তারপর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, তোমার বোনের মৃত্যুর সাথে তোমার কোনভাবে সম্পর্ক ছিল।”
মোরিনো মাথা ঝাঁকাল।
আমি বলে চললাম, “ইয়ু সিলিঙের বিম থেকে দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। একটা ছিল ওর গলায় প্যাঁচানো, আরেকটা বুকে, যাতে শরীরের ভার নিতে পারে।”
আট বছর বয়সি মেয়েটা কাঠের বাক্সের উপর থেকে লাফ দিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য হয়তো মনে হচ্ছিল যে ও গলার দড়িটা দিয়ে ঝুলছে। কিন্তু আসলে সে তার বুকের দড়িটা দিয়ে ঝুলছিল যাতে পড়ে না যায়।
এরপর আরেকজন মেয়ে এল, যার চেহারাও একই রকম। সেই মেয়েটা দেয়ালের পাশ থেকে একটা কাঁচি তুলে নিল। তারপর ঝুলতে থাকা মেয়েটার কাছে গিয়ে বুকের সাথে দড়িটা কেটে দিল।
দড়িটা কেটে ফেলায়, মেয়েটা শুধু গলার দড়িটা দিয়ে ঝুলছিল।
“তুমি ওকে খুন করেছিলে।”
মোরিনো অল্প খানিকটা চোখ খুলল, আমার দিকে তাকাচ্ছিল না কোন কিছুর দিকেই তাকাচ্ছিল না।
“পায়ের ছাপের কথা কিছু শুনোনি? ছাউনির কোথাও আমার পায়ের ছাপ ছিল না।”
আমি কল্পনা করলাম মেয়েটা খালি পায়ে ঝুলে আছে। বৃষ্টিতে মাটি ভিজে নরম হয়ে ছিল।
“না, ছাউনির সবখানে তোমার পায়ের ছাপ ছিল। কিন্তু কেউ সত্যটা বুঝতে পারেনি। দড়ি কেটে ওকে খুন করার পর তুমি মাটিতে সবখানে তোমার পায়ের ছাপ দেখতে পেলে। আর তুমি বুঝতে পারলে যে কেউ ওগুলো দেখলে সন্দেহ জাগবেই। সুতরাং তোমাকে কিছু একটা করতেহবে..”
মোরিনো ঝুলন্ত লাশ আর মাটিতে পায়ের ছাপ দেখে বুঝল ঝামেলায় পড়ে গিয়েছে। তারপর সে দেখল জুতোগুলো মাটিতে সাজিয়ে রাখা। তখন সে একটা বুদ্ধি বের করল।
সে নিজের জুতো জোড়া খুলে, একটা বাক্সর উপর উঠে গেল। খেয়াল রাখল যেন নতুন করে কোন পায়ের ছাপ পড়ে। তারপর ঝুলন্ত লাশের নিচে রাখা জুতোজোড়া নিয়ে পড়ল, আর নিজেরগুলো সে জায়গায় রেখে দিল।
এখন পায়ের ছাপগুলো মৃত মেয়েটার হয়ে গেল।
“তারপর তোমার একমাত্র কাজ ছিল কুকুরের দরজাটা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। ঐ জায়গার মাটি তখনো শুকনো ছিল, তাই কোন ছাপ পড়েনি মাটিতে।”
অবশেষে মোরিনো ওর চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল। “কিন্তু আমার মোটিভ কি?”
“ঘৃণা।” আমি বললাম।
মোরিনোকে খুবই দুঃখি দেখাল। “তুমি যখন বললে ‘মোরিনো ইয়ুর ব্যাপারে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি,’ আমি বুঝতে পেরেছিলাম ধরা পড়ে গিয়েছি।”
আমি মাথা ঝাঁকালাম।
ব্যাপারটা আমাকে হতবাক করেছিল-কেন ওর নানি এত নিশ্চিত ছিলেন যে সামনে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা ইয়োরু ছিল? ওরা তো যমজ, একদম একইরকম দেখতে-কেউ আলাদা করে চিনতে পারত না ওদেরকে।
কিন্তু ও যদি কালো জুতা পড়ে থাকে তাহলে সন্দেহ করার কোন সুযোগ ছিল না।
“এই নয় বছর নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট করে লুকিয়ে রাখতে হয়েছে যে তুমি আসলে মোরিনো ইয়ু।”
মোরিনো আসলে মোরিনো ইয়োরু না, ও হল মোরিনো ইয়ু।
***
একদল মেয়ে হল দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।
মোরিনো ইয় চুপ করে তাদের হাসাহাসি শুনল কিছুক্ষনের জন্য, ওদের কণ্ঠস্বর কমে কমে আবার নিরব হয়ে যাওয়া পর্যন্ত।
“তুমি ঠিকই ধরেছ,” সে বলল। “আমিই ছোট বোনটা। আমিই সবসময় কান্নাকাটি করতাম, আমার উপরই সব আদেশ করা হতো।” তারপর ভুরু কুঁচকে আমাকে প্রশ্ন করল। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?”
“ইয়ু জানত না, লোকজন আত্মহত্যা করার আগে জুতো খুলে নেয়। ঐ ব্যাপারটাই সবকিছু পরিস্কার করে দিয়েছে। তোমরা যখন আত্মহত্যা আত্মহত্যা খেলতে তখন হয়তো ইয়োরু তোমাকে বলেছিল কিন্তু আমার ধারণা তুমি ভুলে গিয়েছিলে।”
আমি ওকে বললাম ওদের বাড়িতে যেসব ড্রয়িং দেখেছি। যে ড্রয়িংগুলোতে তারা নিজেদের আত্মহত্যা খেলার ছবি এঁকেছিল।
“ঐ ডুয়িংগুলো করা হয়েছিল নয় বছর আগের গ্রীষ্মের ছুটির সময়, ইয়োরুর মৃত্যুর ঠিক আগে আগে। তার মানে হলো ড্রয়িংগুলো ঐ সময়ে, মৃত্যুর আগে ইয়োরুর ব্যক্তিত্ব কেমন ছিল তাও তুলে ধরে।”