ওর মতামতগুলো শুনে মনে হল আত্মহত্যার জন্য আদর্শ দড়ি কিরকম হওয়া উচিত সে ব্যাপারে ও একজন বিশেষজ্ঞ। “এরকম চিকন তার হলে গলা কেটে যাবে। ইলেকট্রিক কর্ড বেশ শক্ত, কিন্তু দেখতে ভালো না।”
“প্লাস্টিকেরগুলো কেমন?” নিচের সেলফে রাখা প্লাস্টিকের তারগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলাম, শুধু ও কী বলে তা দেখতে।
অভিব্যক্তিহীন চেহারা নিয়ে ও মাথা নাড়ল। “ওগুলো প্রসারিত হয়। সমস্যা সৃষ্টি করে। এখানে আর কিছু দেখার নেই।”
দোকানের অন্য অংশে বিভিন্ন ধরনের চেইন পাওয়া গেল। একদম দুই সেন্টিমিটার পুরু মোটা ভারি চেইন থেকে এক কি দুই মিলিমিটারের সুক্ষ্ম চেইন পর্যন্ত সব। টয়লেট পেপারের মত রোল করে সেলফে রাখা ছিল। কাছাকাছি একটা মেশিন ছিল যেখান থেকে প্রয়োজন মত চেইন কেটে নেয়া যেত।
“এটা দেখ-খুবই পাতলা, কিন্তু এখানে লেখা এটা নাকি একশ পাউন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে, সে বলল, আঙুলের ফাঁকে একটা চিকন রুপার চেইন ধরে রেখেছে। গলায় পেঁচিয়ে দেখল। ধাতব চেইনটা আলো পড়ে চকমক করে উঠল। “দারুন দেখতে, এটা পড়লে একটা লাশকেও দেখতে ভালো লাগবে…কিন্তু এটা দিয়ে আত্মহত্যা করতে গেলে গলা কেটে মাংসে ঢুকে যাবে।”
চেইনটা আগের জায়গায় রেখে দিল। ওর প্রয়োজনের সাথে সেটা যায় না।
আত্মহত্যা করতে গেলে কিরকম দড়ি লাগবে সেই চিন্তা ভাবনার পেছনে সে অনেকটা সময় ব্যয় করল।
আমি যদি কাউকে গলায় পেঁচিয়ে মারতে চাই তাহলে কিরকম দড়ি খুঁজব? দোকানের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে আমিও এই চিন্তা করতে লাগলাম।
“গলায় সুড়সুড়ি লাগুক তা আমি চাই না,” আমি যখন ওকে হাতে বোনা খসখসে দড়ি দেখালাম তখন সে বলল। “পুরনো ফ্যাশনের দড়িগুলো দরকার, যেগুলো গ্রামের ফার্মগুলোতে ব্যবহার করে।”
ও যখন ফোর্থ গ্রেডে পড়ত তখন শহরের বাইরে এক জায়গায় থাকত, পাহাড়ি এলাকায়। এখান থেকে দুই ঘণ্টার ড্রাইভ।
“আমার মা যেখানে জন্মেছিল আর বড় হয়েছে, সেখানে আমার নানা নানির একটা ছোট ফার্ম আছে। আমার বাবা প্রতিদিন দু-ঘন্টা ড্রইভ করে কাজে যেত আর দুই ঘন্টা ড্রাইভ করে ফিরত।”
পরে ওরা সেখান থেকে চলে আসে ওর বাবার এই ডাইভিঙের ঝামেলা এড়াতে। এসব আমার কাছে নতুন খবর।
“আমি সবসময় ভেবেছি আত্মহত্যা করতে হলে তুমি হাতের রগ কাটবে, দড়িতে যে ঝুলতে চাইবে তা ভাবিনি,” আমি বললাম।
ও ওর হাত দুটো তুলে ধরল। এগুলোর কথা বলছ?”
ওর হাতগুলো একদম সাদা লাইনের মত দেখতে। একটা পরিস্কার কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে। আমি কখনো এই দাগুগুলো সম্পর্কে জানতে চাইনি তাই জানি না কেন সে হাত কাটতে গিয়েছিল।
“এগুলো আত্মহত্যা করতে গিয়ে হয়নি, সেফ হঠাৎ ইচ্ছা হলো…”
ওর জীবন অনুভূতিহীন মনে হলেও আসলে কিছু অনুভূতি অবশিষ্ট ছিল। আর সেগুলো এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এরকম ভয়াবহ কিছু ঘটাতে পারে। ওর বাইরের অভিব্যক্তিহিন অবস্থাটা অনেকটা থারমোফ্লাস্কের মত, বাইরে থেকে স্পর্শ করলে ভেতরের তাপ বোঝা যায় না। ভেতরে যাই ঘটুক ্না কেন তা বাইরের পৃষ্ঠ পর্যন্ত আসে না।
কিন্তু এরকম অনুভূতি যখন খুব শক্তিশালী হয়ে পড়ে তখন কিছু একটা করতে হয়। কেউ কেউ খেলাধুলা কিংবা ব্যায়াম করে, অন্যরা নিজেদের শান্ত করতে জিনিসপত্র ভাঙে। কিন্তু মোরিনো এই দুই দলের কোনটাতেই পড়ে না, সে তার নিজের উপরই নিজের অনুভূতিগুলোর প্রয়োগ ঘটায়।
হঠাৎ একটা পরিচিত গলায় আমার নাম শুনলাম।
ঘুরে দেখি আমার বোন, সাকুরা, একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে অবাক দৃষ্টি। ওর হাতে ডগ ফুডের ব্যাগ। শপিঙে বেরিয়েছে।
মোরিনো ঘুম ঘুম চোখ করে ছিল। ব্যাগের উপর কুকুরের ছবি দেখে সে কেঁপে উঠল।
সাকুরা আমাকে জানাল সে আমাকে এখানে দেখে কতটা অবাক হয়েছে, তারপর মোরিনোর দিকে তাকাল।
মোরিনো অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। সে যে সাকুরাকে এড়াতে চাইছিল তা নয়। ব্যাগের উপর কুকুরের ছবি এড়াতে অন্যদিকে তাকিয়েছিল। কোন সেলফে “কুকুর” লেখা থাকলে সেটার ধারে কাছেও ওকে টেনে নেয়া যাবে না।
“আর তোমার সুন্দরি বন্ধুটি কে?” সাকুরা জিজ্ঞেস করল, কৌতূহলি। আমি দ্রভাবে ওকে বুঝিয়ে বললাম সাকুরা ওকে যা ভাবছে সে সেরকম কেউ নয়। সে আমার কথা বিশ্বাস করল বলে মনে হলো না।
“ওকে। আম্মু আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। কুকুরের খাবার কিনলাম আর যাওয়ার সময় ড্রাই ক্লিনারস থেকে কাপড় তুলতে হবে।”
সাকুরা ওর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে পড়ল। ওর হাতের লেখা আমার চেয়ে হাজার গুণ ভাল। ওর সামনে পরীক্ষা, পড়াশোনা নিয়ে দৌড়ের উপর থাকার কথা, কিন্তু তারপরেও কেউ কোন কাজের অনুরোধ করলে সেটা ফেলতে পারে না।
“তারপর পাশের বাসা থেকে কিছু টোফু আর পিচ্চি কমলা নিতে হবে। আর বাসায় ফেরার পর কুকুরটাকে হাটাতে নিয়ে যেতে হবে।”
সে মোরিনোর দিকে হাসিমুখ করে হাত নাড়ল।
মোরিনো ব্যস্ত ছিল কুকুরের ছবি যাতে চোখে না পড়ে সেই নিয়ে। এক হাতে সেলফে ভর দিয়ে নিজের চোখ ঢেকে রেখেছিল।
সাকুরা চলে যাওয়ার পর আমি বললাম, “এখন তাকাতে পার।”
মোরিনো সোজা হয়ে দাঁড়াল, তারপর যেন কিছুই হয়নি ভাব করে সেলফের ভেতর এক রোল তার পরীক্ষা করতে লাগল।
“তোমার বোন ছিল নাকি মেয়েটা?”