সেই গ্রীষ্মের দিনে আনন্দ চারদিকে খেলা করছে। ইয়ুকা আর আমি ঘাসের মধ্যে দৌড়ে খেলতে গিয়ে খালি জায়গাটা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি ইয়ুকার উপর লাফ দেয়ায় ও পড়ে গিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য আমার দুশ্চিন্তা হয়েছিল ব্যথা পেল কিনা। কিন্তু ওকে হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। আমি ওর পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। একসাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম দু-জনে। সূর্যের আলো আমাদের শরীর গরম করে তুলছিল, আমাদের ঘামের গন্ধ আর আশেপাশের ঘাসের গন্ধ আমাদের নাক ভরে তুলছিল…
চোয়ালের মধ্যে ঝুলে থাকা জন্তুটার নড়াচড়া ততক্ষণে থেমে গেছে। আমার মুখ বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জটার শরীর শীতল হয়ে আসছে সব শব্দ কমে যাচ্ছে আমাদের চারপাশে।
আমি খুন করায় পারদর্শি হয়ে উঠেছি। জানি না এটা কোন ভালো কাজ কিনা কিন্তু ইয়কা আমাকে শিখিয়েছে কী করে আমার চোয়ালটাকে একটা অস্ত্রে পরিণত করা যায়।
মৃত জিনিসটা থেকে সমস্ত উষ্ণতা বেরিয়ে গেছে, শুধু পড়ে আছে এক দলা ঠান্ডা মাংস।
ও আমাকে শিখিয়েছে, আমি আবারো ভাবলাম।
কুকুরটাকে নিয়ে ইয়ুকের সামনে রেখে ওর মুখের দিকে তাকালাম। ও আমার চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি বুঝতে পারছিলাম ও কী চাইছে। ওর শক্তি আমার ভেতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মনে হয়।
ও কেন আমাকে দিয়ে এই প্রাণীগুলোকে খুন করাল?
আগে এর কারণ বুঝিনি-কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। এতদিন আসলে ইয়ুকা আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সে আমাকে এসব প্রাণী খুন করতে বাধ্য করেছে যাতে আমার অনেকবার মৃত্যু-অভিজ্ঞতা হয়। আর এই অভির কারনেই যখন প্রয়োজন হবে তখন সঠিক পদক্ষেপ নিতে আমার মধ্যে যেন কোন দ্বিধা না হয়।
ইয়ুকা ঐ লোকটার সাথে লড়াই করতে পারবে না। কিন্তু আমি আমার ধারালো দাঁত দিয়ে ওকে রক্ষা করতে পারব।
ইয়ুকা মাথা ঝাঁকাল। সে বুঝেছে, আমি এখন বুঝতে পেরেছি। সে আমার কাজ দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমার আর কোন প্রশিক্ষনের প্রয়োজন নেই, ওকে বললাম আমি।
লোকটা রাতে ঘুমাতে আসবে। আমরা সকালে ব্যাপারটা ফয়সালা করব। ইয়ুকা ফিসফিস করে সেটা আমাকে বলল।
আমি মৃত জন্তুটাকে নিয়ে গর্তটায় ফেলে নদীর পানিতে রক্ত আর লোম ধুয়ে ফেললাম। এখন আমরা বাসায় যাব-অপেক্ষা করব সকালের জন্য।
ইয়কা আর আমি ব্রিজের নিচের খোলা জায়গাটা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ঠিক যে মুহূর্তে আমরা ঘাসে দেয়াল ঠেলে ঢুকতে যাব তখন থমকে দাঁড়ালাম। ইয়ুকা ততক্ষনে ঘাসের ভেতর ঢুকে গেছে। থেমে ঘুরে দাঁড়াল ও।
“কি হলো?” আমি টের পাচ্ছি ও জানতে চাইছে।
আমি ওর দিকে তাকালাম, তারপর আমার পেছনের ঘাসের ভেতর খুঁজলাম। এক মুহূর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিল কিছু একটা অদ্ভুতভাবে নড়তে দেখেছি।
কিছু না, আমি ভাবলাম। চল, যাওয়া যাক। আমি ইয়ুকার দিকে ফিরে দৌড়ে ওর পাশে গেলাম।
হয়তো ওখানে কেউ একজন ছিল। আমি নিশ্চিত কেউ একজন সেখানে ছিল-ঐ একই লোক, যে আমাদের পিছু নিয়েছিল, আমাদেরকে ধরার চেষ্টা করছে। আর এখন সে লুকিয়ে দেখে ফেলেছে আমরা কী করছিলাম।
এতদিন আমি ধরা পড়া নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এখন আর সেই ভয় নেই। আমি জানি আমাকে কী করতে হবে, এসব নিয়ে আমার আর কোন দুশ্চিন্তা নেই। আমাদের আর কোন প্রাণী হত্যা করতে হবে না। আমার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের আর পিছু নেয়া ছায়াকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
আমরা সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম। আমি আরেকবার পিছু ফিরে ঘাসের সমুদ্রের দিকে তাকালাম, অন্ধকারে ডুবে আছে ওটা। যে ওখানে লুকিয়ে আছে তাকে বলতে চাইছি, আমি আর ইয়ুকা কী করতে যাচ্ছি। আমি তাকে বলতে চাইছি ইয়ুকার সাথে কী হয়েছে আর কেন সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আমিও এখন তা চাই।
***
“হ্যালো..?” সেলফোনের অপর পাশ থেকে মোরিনোর ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওর গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে কিভাবে কেউ অন্য কাউকে এই ভোরবেলায় ফোন করতে পারে তা ওর ধারনার বাইরে।
জানালা দিয়ে বাইরে আলো ফুটছে এখন। আমি মাত্র তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছি, কিন্তু আমার ঘুমের অভ্যাসকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যে কারনে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হলে আমার কোন সমস্যা হয় না।
আমি ওকে জানালাম, কিডন্যাপারকে খুঁজে পেয়েছি।
“ওহ্, আচ্ছা,” বলে সে ফোন রেখে দিল। ওকে ঐদিনে রাস্তায় দেখা ছোট মেয়েটা আর তার গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুরটার কথা বলার কোন সুযোগই পেলাম না। কিডন্যাপার কে সেটার চেয়ে ঘুমানো অনেক বেশি জরুরি মোরিনোর কাছে।
আমার ফোন বাজল। মোরিনো। কলটা ধরতেই সরাসরি মূল কথায় চলে গেল সে।
“ছবি তুলেছো?”
আমি বললাম, ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়েছিলাম কিন্তু অন্ধকারে কোন ছবি তোলার মত অবস্থা ছিল না। ব্রিজের নিচে যথেষ্ট আলো পাইনি, তাই ছবিতে কিছুই ওঠেনি।
“ওহ, আচ্ছা,” বলে আবার ফোন রেখে দিল সে।
আমি পোশাক বদলে রুম থেকে বের হলাম। বাসার লোকজন তখনো গভীর ঘুমে, পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। জুতা পরে বের হয়ে দেখি পুবের আকাশ লাল হয়ে আছে। কালো আকৃতি ধারন করেছে ল্যাম্পপোস্টগুলো।
“কাল সকালে,” গত রাতে ব্রিজের নিচে মেয়েটাকে ফিসফিসিয়ে বলতে শুনেছিলাম। ছোট কুকুরটা হত্যা করার পর গোল্ডেন রিট্রিভারের কানে কানে বলছিল সে।