“তোমার কোন ধারণা আছে, কী ধরনের মানুষ এর পেছনে আছে?” লাঞ্চ ব্রেকে কেমিস্ট্রি লেকচার হলের কোণায় বসে মোরিনো আমাকে প্রশ্ন করল, তার হাতে বই।
আমি মাথা নাড়লাম, কোন ধারণা নেই।
“প্রথমত, কেউ কেন ঐ প্রাণীটাকেই চুরি করবে? পশুপাখি বিক্রির দোকানে বিক্রি করার জন্য?” মোরিনো এমনভাবে প্রশ্ন করল যেন ওর মাথায় আসছে না কেন এই বিশেষ প্রাণীটা চুরি করতে যাবে কেউ!
“আমার সন্দেহ আছে কিডন্যাপার টাকা চায় কিনা-পেট শপে যে সব পিওরব্রিড বিক্রি হয় সেগুলো সেখানে থাকতে থাকতে বড় হয়ে যায়। প্রায় কেউই ওগুলো কেনে না।”
কেউ মার্কেট থেকে নিলে গবেষণার জন্য নেয়, পোষার জন্য নয়। পোষা কুকুর মানুষদের বিশ্বাস করে, যে কারনে সেগুলোর দেখাশোনা করা বন্য কুকুরের চেয়ে সহজ। ব্ল্যাক মার্কেটে ভালো দাম পাওয়া যায় বলে আমি শুনেছি। . “কুকুর কিডন্যাপিঙের একমাত্র কারন যেটা হতে পারে বলে আমার মনে হয়, সেটা হলো, ওগুলোকে নিয়ে নির্যাতন করা। কিছু মানুষ আছে যারা ইন্টারনেট থেকে পরিত্যক্ত কুকুর-বিড়াল সংগ্রহ করে এসব করার জন্য।”
“তার মানে বলতে চাইছে, কিডন্যাপার মজা করার জন্য প্রাণীগুলোকে চুরি করে খুন করছে? সাংঘাতিক তো।” মোরিনো বলল।
কিন্তু এখানে একটা ঝামেলা আছে। ব্যাপারটা যদি তা-ই হয় তাহলে নির্যাতনটা করা হচ্ছে কোথায়? বাসায় তো অবশ্যই না। যখন খবরে মাঝে মাঝে পার্কে পোষা প্রাণীর লাশ পাওয়ার খবর পাওয়া যায় তখন প্রাণী নির্যাতন সংক্রান্ত অনেক কথাবার্তা হয়। কিন্তু ইদানিংকালের মধ্যে এরকম কোন খবর আমার কানে আসেনি।
***
সেই বুধবার আর বৃহস্পতিবার, স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে, যেসব বাড়ি থেকে পোষা কুকুর নিখোঁজ গিয়েছে সেগুলোতে গিয়ে খোঁজ নিলাম। প্রতিদিন একটা করে। বাড়ির লোকজন একটুও সন্দেহ করেনি, আমি আসলেই স্কুলের পত্রিকায় কাজ করি কিনা। সবাই যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছে।
কিন্তু অপরাধির ব্যাপারে আমি নতুন কোন ভালো তথ্য খুঁজে পেলাম না। দুই বাড়িতেই চুরি যাওয়া কুকুরগুলো ছিলো মাট, আর একদম ছোট। একজনের মালিক আধ খাওয়া খাবার পড়ে পেয়েছে, আরেকজন পায়নি।
শুক্রবার আমি আরেকটা বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাসে চরলাম। যে তথ্য পেয়েছি তাতে এই বাসা থেকেই সবার আগে চুরি গিয়েছিল, আর আমার বাসা আর স্কুল থেকেও জায়গাটা সবচেয়ে দূরে। নদীর পাশের বাড়িগুলোর একটা।
ম্যাপের ঠিকানারগুলোর সাথে মিলিয়ে সহজেই বাড়িটা খুঁজে পেলাম। নতুন বাড়ি। বেল বাজালাম। কেউ মনে হলো নেই ভেতরে।
বাড়ির সাথে ছোট একটা টিউলিপের বাগান, আর একটা খালি ডগ হাউজের সামনে খাবারের থালা রাখা। প্লাস্টিকের থালা। খানিকটা নোংরা। উপরে বাচ্চাদের মত আঁকাবাঁকা করে লেখা মার্বেলের থালা।
সেখান থেকে বের হয়ে আবার বাস নিয়ে ফেরত চলে এসে বাসার সামনে বাস স্টপে নামলাম।
আজকে শুক্রবার, আরেকটা কুকুর আজকে চুরি হওয়ার কথা। এসব যখন ভাবছিলাম, কে জানি আমাকে ডাক দিল। ঘুরে দেখি সাকুরা, জুনিয়র হাই স্কুলের ইউনিফর্ম পরে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সাথে তাল মেলাতে সাইকেল নিয়ে জোরে জোরে হাঁটতে লাগল।
সে সবসময় বাসায় ফেরার আগে ক্রাম স্কুলে যায়, সেখানে কয়েক ঘন্টা পড়াশোনা করে। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম এত তাড়াতাড়ি এসে সে কী করছে।
“কাহিনী হয়েছে, ক্রাম স্কুলে যেতে পারিনি আজকে,” বলল সে। ওকে কিছুটা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সাইকেল সোজাসুজি টানতেও পারছে না।
“আবার কিছু দেখেছো?” আমি ওর থেকে সাইকেল নিয়ে বললাম।
মাথা ঝাঁকাল সে।
সাকুরার শনির সমস্যা আছে। আমি বলব এটা ওর গুণ কিন্তু ও এটাকে অভিশাপ হিসেবেই দেখে। সেটা হলো, ও প্রায়ই মৃত লাশ খুঁজে পায়।
প্রথমবার এমন হলো যখন ও এলিমেন্টারি স্কুলে পড়ত। স্কুল থেকে পাহাড়ে একটা টিপে নিয়ে গিয়েছিল। ফার্স্ট গ্রেডে ছিল ও, অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। তো একসময় ও একটা ডোবার কাছে গিয়ে হাজির হয় আর দেখে পানিতে একজন মানুষের লাশ ভাসছে।
দ্বিতীয়বারের ঘটনা এর চারবছর পর। সাকুরা ওর এক বন্ধুর পরিবারের সাথে সমুদ্র দেখতে গিয়েছিল। এবারও সে কিভাবে যেন আলাদা হয়ে পড়ে। সাগরে ভেসে এসে পাথরে আটকে থাকা একটা লাশ খুঁজে পায়।
তৃতীয়বারের ঘটনা আরো তিনবছর পরের, জুনিয়র হাইস্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ঘটনা। ওর ভলিবল ক্লাব ক্যাম্পে গিয়েছিল। জগিংয়ের সময় রাস্তা ভুলে অন্যদিকে চলে যায়। একটা নির্জন এলাকায় গিয়ে হাজির হয়। পায়ের নিচে মড়মড় শব্দ হতেই দেখে একটা মানুষের মাথার খুলির উপর পা পড়েছে ওর।
প্রতিবার লাশ পাওয়ার পর ওর মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। পরের এক সপ্তাহ জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।
“কেন আমার সাথেই এমন হতে হবে?” কাঁদতে শুরু করল সে।
ওর লাশ খুঁজে পাওয়ার চক্রের মধ্যে সময় ধীরে ধীরে কমে আসছে। চতুর্থ বার লাশ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা এই বছরে কিংবা আগামি বছরে ছিল। ওর যখন আরো বয়স হবে তখন হয়তো প্রতি দুই-তিন মিনিটে একটা করে লাশ চোখে পড়বে কে জানে!
“তো, আজকে কি খুঁজে পেলে?” আমি ওকে প্রশ্ন করলাম।
“ক্রাম স্কুলে যাওয়ার পথে আমি কিছু একটা দেখেছি…তারপর শরীর খারাপ লাগছিল তাই ক্লাস না করে চলে এসেছি।”