আমার ধারণা পাভলভকে চুরি করা হয়েছে কারন ও সাইজে ছোট। কোলে করে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল। আমার বোনের বান্ধবির যে কুকুর চুরি হয়েছে সেটাও ছোট ধাঁচের কুকুর। মনে হচ্ছে কিডন্যাপার তাহলে শুধু ছোট ধরনের কুকুরই চুরি করছে।
কিন্তু কেন যেসব কুকুর বহন করা সহজ সেগুলোই চুরি করতে হবে? একটা সম্ভাবনা হলো, কিডন্যাপারের কাছে কোন গাড়ি বা অন্য কোন যানবাহন নেই বড় কুকুর বহন করার মত। হ্যাঁ, ব্যাপারটা খাপ খাচ্ছে। সেজন্যই বড় কুকুর এড়িয়ে যাচ্ছে কিডন্যাপার।
এখন পর্যন্ত যা যা তথ্য জোগাড় করতে পেরেছি তাতে যেসব এলাকার কুকুর চুরি গিয়েছে কোনটাই বড় কুকুর নয়। গাড়িওয়ালা চোর হলে এলাকা বদল করত। এক এলাকায় এত চুরি করে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়াত না।
একটা আর্টিকেলের কথা মনে পড়ল আমার, একটা অ্যানালাইসিস দেখিয়েছিল কারন ছাড়া খুনের উপর। মজা করতে গিয়ে খুন’-আর্টিকেলে খুনির শিকার খোঁজার ধরন নিয়ে বলেছিল। খুনি নিজের অজান্তেই এমন সব শিকার নির্বাচন করত যারা কিনা শারীরিকভাবে তারচেয়ে দূর্বল। যেমন, তার সব শিকার ছিল লম্বায় পাঁচ ফুটের কম। একজনও পাঁচ ফুট তিনের ধারে কাছে ছিল না। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় খুনির উচ্চতা পাঁচ থেকে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির মধ্যে। নিখোঁজ কুকরের কেসেও একই সম্ভাবনা কাজে লাগতে পারে।
বাসায় ফিরে দেখি, বাবা ফিরেছে অফিস থেকে, সবাই ইতিমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। আমি তাদেরকে বললাম যে শপিং মলে গিয়েছিলাম। তারপর গল্পে যোগ দিলাম। গল্পের মাঝে সাবধানে অন্য টপিকে গেলাম যেন কেউ কিছু সন্দেহ না করে। আশেপাশের বাসাগুলোতে কারা কারা কি কুকুর রাখে জানতে চাইলাম।
“ঐ বাড়িতে একটা কুকুর আছে খুবই কিউট। আমি জানি না কেন ওরা কুকুরটাকে ঘরের বাইরে রাখে। কুকুরটা একদমই ছোট,” সাকুরা বলল।
“হয়তো অনেক চেঁচামেচি করে,” বাবা বললেন।
আমি ঠিকানা নিলাম। আজকে মঙ্গলবার রাত। সুতরাং কিডন্যাপার হয়তো আজকে ঐ বাড়িতে হামলা করলেও করতে পারে, কে জানে?
***
যে বাড়িটা নিয়ে কথা হচ্ছিল সেটা ছিল একটা জাপানি কন্সট্রাকশনের পুরনো বাড়ি। দেয়ালের উপর দিয়ে চারদিকে তাকালাম। একটা বড় বাগানের শেষ মাথায় ডগ হাউজটা রাখা। দেখে মনে হলো হাতে বানানো, কাঠের বাক্সর মত দেখতে। বাইরে একটা খুঁটি পোঁতা আছে যেখানে ফিতে দিয়ে কুকুরটা বাঁধা।
কুকুরটার চোখগুলো ছিল বড় বড়। যে মুহূর্তে সে আমাকে দেখল, গলা ফাঁটিয়ে চেঁচামেচি লাফালাফি শুরু করে দিল। একদম ছোট কুকুর, যে কোন বাচ্চাও কোলে করে নিয়ে যেতে পারবে।
আমি বাড়িটা থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ালাম। এখানে আশেপাশে কোন আলো নেই, অন্ধকারের মধ্যে কেউ আমাকে দেখতে পাবে না।
ঘড়ি দেখলাম, অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। তবে একটা সুইচে চাপ দিতে ডায়ালের ভেতর আলো জ্বলে উঠল। রাত দশটা। দুই সপ্তাহ আগে এরকম সময়েই পাভলভ চুরি হয়েছিল। কিডন্যাপার যদি আজকে এই কুকুরটাকেও চুরির প্ল্যান করে থাকে তাহলে এরকম সময়েই আসার কথা।
পায়ের নিচের মাটি পাতায় ঢেকে আছে, একটু নড়লেই ডালপালায় লেগে কাছের ঝোপগুলো নড়ে উঠছে। হেমন্তের শুরু হলেও দিনের বেলায় গরম থাকে। রাতে একটু ঠান্ডা পড়ে।
পকেটে হাত ঢুকিয়ে চুরির স্পর্শ নিলাম, যদি কোন প্রয়োজন হয় সেজন্য সাথে করে এনেছি।
কিডন্যাপারটার চেহারা যদি দেখতে পাই, পুলিশকে জানানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। আমি শুধু স্রেফ দূর থেকে অদৃশ্য হয়ে দেখতে চাই সে কী করে। সুতরাং অস্ত্রের কোন প্রয়োজন পড়বে বলে মনে হয় না। কিন্তু তারপরেও কোন কিছু চিন্তা না করেই আমার ছুরির সেট থেকে একটা ছুরি পকেটে করে নিয়ে এসেছি। খোলা ব্লেডে নিজেকেই আহত করে ফেলতে পারি, সেজন্য একটা লেদার কেসে ঢুকিয়ে রেখেছি ওটা।
কোন মানুষকে অস্বাভাবিক কোন অপরাধ করতে দেখতে আমার ভালো লাগে। এই শখের কারনে আমার এমন একজন লোকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যে কিনা একাধিক নারীকে হত্যা করেছিল। আমি তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তেইশটা ছুরির একটা সেট চুরি করেছিলাম। যেগুলো এই মুহূর্তে আমার রুমের বইয়ের সেলফের পেছনে লুকানো আছে। বাসায় থাকলে আমি ওগুলো বের করে দেখি। সিলিংয়ের লাইটের আলো ধাতব ব্লেডের উপর পড়ে চকচক করে ওঠে। সাদা আলোতে মনে হয় যেন ওগুলো ভিজে আছে।
মাঝে মাঝে ব্লেডের উপর আমার প্রতিচ্ছবি বদলে ঐ মেয়েগুলোর চেহারা ভেসে ওঠে, যাদেরকে এই ছুরিগুলো দিয়ে খুন করা হয়েছে। আমি জানি ব্যাপারটা চোখের ধাঁধা মাত্র, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ওদের সমস্ত ব্যথা আর কষ্টগুলো যেন ছুরিগুলোর ভেতর অনন্তকালের জন্য আটকা পড়ে গিয়েছে।
আবার ঘড়ি দেখলাম। বুধবার হয়ে গিয়েছে। একজন লোকও এদিকে আসেনি। কে জানে কিডন্যাপার কোথায় থাকে। বাসস্থানটা জানলে সম্ভাব্য শিকারের তালিকাটাও ছোট করে আনা যেত। যাই হোক, মনে হচ্ছে না। আজকে আর কিডন্যাপারের দেখা পাবো।
আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে এলাম।
বাবা-মা তখন ঘুমে। সাকুরা পরীক্ষার জন্য পড়ছে। সে টের পেয়েছে আমি বাসায় ফিরেছি। নিচে এসে জিজ্ঞেস করল কই গিয়েছিলাম। তাক জানালাম, শপিং মলে গিয়েছিলাম।