ইয়ুকা লোকটার পাশে বসে ছিল। এমন সময় হঠাৎ লোকটা কনুই দিয়ে ইয়ুকাকে গুতা মারল। ইয়ুকা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল।
লোকটা হাসল, মাথা নামিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলল ইয়ুকাকে।
আমি ঘরের আরেক কোণায় ছিলাম, কথাগুলো শুনতে না পেলেও দেখতে পারছিলাম ইয়ুকার চেহারা বদলে যাচ্ছে।
ভয়ের একটা স্রোত আমার শরীর দিয়ে বয়ে গেল। ইয়ুকার কাছ থেকে আমি দূরে বসে ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমাদের মন সবসময়ই একজন আরেকজনের সাথে যুক্ত। আমি ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
আম্মু রুমে ফিরে এলে লোকটা থামল। ইয়ুকা ভীত চেহারায় আম্মুর দিকে তাকালেও আম্মু কিছু খেয়াল করল না।
ইয়ুকা সাহায্যের জন্য আমার দিকে তাকাল, কিন্তু আমি সামনে পেছনে আগপিছ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারছিলাম না।
এরপর প্রতিবার যখন সে আসত, ইয়ুকার প্রতি তার ব্যবহার খারাপ থেকে খারাপতর হতে লাগল। এমন কি সে কয়েকবার ইয়ুকার পেটে লাথিও মেরেছিল! ব্যথায় মেঝেতে শুয়ে পড়ে কাশছিল ইয়ুকা। দৌড়ে গিয়ে ওর আর লোকটার মাঝে দাঁড়িয়েছিলাম আমি। লোকটা খুবই বিরক্ত হয়েছিল।
প্রতি সপ্তাহে একই রাত্রে লোকটা বাসায় আসত। ঐ রাতগুলোতে ইয়ুকা আর আমাকে এক কোণায় লুকিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে হতো। সে বাসায় থাকলে চারপাশে কেমন এক অশুভ পরিবেশের সৃষ্টি হতো। ইয়ুকা ভয়ে ঘুমাতে পারত না।
শেষে আমরা আর থাকতে না পেরে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম।
লোকটা আসার পর থেকে ইয়ুকা আমাকে জম্ভগুলো খুন করতে বাধ্য করতে লাগল। ও অনেক কান্নাকাটি করত। ওর চোখে অন্যরকম এক আঁধার ভর করেছিল তখন, যা দেখলে অনেক কষ্ট লাগত আমার।
২
“আমরা বিষয়টা খেয়াল করেছি রাত এগারোটার দিকে,” কোলে থাকা ঘুমন্ত বাচ্চা দোলাতে দোলাতে অল্পবয়সি গৃহিণীটা বললেন। আমরা প্রথমে কিছু ভদ্রতাসূচক সামাজিক কথা-বার্তা দিয়ে শুরু করি। তিনি জানালেন, তাদের বাচ্চার বয়স মাত্র তিন মাস।
“ঘুমাতে যাওয়ার আগে, আমার স্বামী দেখতে গিয়েছিল পাভলভ ঠিক আছে কিনা, তখন খেয়াল করল সে বাড়িতে নেই…” পাভলভ তাদের কুকুরের নাম। দুই সপ্তাহ আগের মঙ্গলবার রাত থেকে সে নিখোঁজ। পিওরব্রিড প্রজাতির কুকুর, যে প্রজাতির নাম আমি আগে কখনো শুনিনি।
ভদ্রমহিলা আর আমি বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। পশ্চিম এলাকার ছোট একটা বাড়ি। আমার বাসা থেকে দূরত্ব এক মাইলের বেশি হবে না।
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেসব বাড়ি থেকে কুকুরগুলো নিখোঁজ হয়েছে সেগুলোতে গিয়ে একটু খোঁজ খবর নিব।
মহিলাকে বললাম আমি স্কুলের খবরের কাগজে কাজ করি। আর আশেপাশের এলাকার কুকুর নিখোঁজের ঘটনার উপর তদন্ত করছি। যখন তাকে জানালাম, আমার তদন্ত থেকে অপরাধির ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তিনি আমাকে সাহায্য করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন।
“এখন মনে পড়ছে, রাত দশটার সিকে পাভলভ কিছুক্ষণ চিৎকার করেছিল। কিন্তু আমরা পাত্তা দিইনি, কারন লোকজন আশপাশ দিয়ে গেলেই ও চিৎকার করে।”
“তাহলে তখনই শেষবার আপনি ওর চিৎকার শুনেছেন?” আমি নিশ্চিত হতে চাইলাম।
মহিলা মাথা ঝাঁকালেন।
দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে একটা ছোট উঠোনমত দেখতে পেলাম। এক কোণায় একটা ডগ হাউজ রাখা–মোটামুটি বেশ বড়। কুকুরের ফিতে লাগানোর জন্য বাইরে একটা মেটাল হুক লাগানো আছে।
“কিডন্যাপার তাহলে ফিতে খুলে কুকুরটাকে নিয়ে গিয়েছে?” আমি বললাম।
মহিলা আবারো মাথা ঝাঁকালেন। “তারা ফিতেটা ফেলে গিয়েছে-আর একটা আধখাওয়া চিকেন নাগেট।”
নিশ্চয়ই কিডন্যাপার নাগেটটা ফেলে গিয়েছে, তিনি ব্যাখ্যা করলেন।
যখন আমি জানতে চাইলাম, নাগেটটা কি দোকানের কেনাগুলোর কিনা, তিনি অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন সম্ভবত বাসায় বানানো।
কুকুরটাকে শান্ত করার জন্য কিডন্যাপার বাসা থেকে কিছু একটা নিয়ে এসেছিল, তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আধ খাওয়া চিকেন নাগেট পুরো ব্যাপারটার চেহারা বদলে খুবই সাধারণ রূপ দিচ্ছে। পেশাদার চোররা এরকম কোন ভুল করবে না।
আমি মাথা ঝুঁকিয়ে সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলাম।
তিনি দুঃখিত চোখে ডগ হাউজের দিকে তাকালেন, “আশা করছি যে কাজটা করেছে তাকে তুমি খুঁজে পাবে।” তার স্বর নিচু থাকলও কথার মধ্যে কোথায় যেন একটা খুনি ক্রোধ লুকানো ছিল।
কোলের বাচ্চাটা হাঁচি দিতে শুরু করলে আমি গুডবাই বলে চলে আসলাম। বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম রাস্তার অপর দিকের বাসাতেও একটা কুকুর আছে। যদিও দরজা লাগানো, তারপরেও কুকুরটা দেখা যাচ্ছিল। একটা বড় কালো কুকুর, আমার অর্ধেক সমান উচ্চতা হবে।
“ওর নাম চকলেট,” তিনি পেছন থেকে বললেন।
আমি বললাম যে ওটা ওখানে ছিল এতক্ষন একদম টের পাইনি।
“হ্যাঁ, ও প্রায় কখনোই চিৎকার করে না।”
পাভলভের চেয়ে চকলেটের ঘর আরও পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। হয়তো কুকুরটা চুপচাপ বলে কিডন্যাপার সেটাকে খেয়াল করেনি।
বাসায় গিয়ে দেখি মা আর আমার বোন সাকুরা, দুজনে মিলে ডিনার তৈরি করছে। মা একটা পাতিলে কিছু নাড়ছে আর বোন সবজি কাটছে।
আমার বোন আমার চেয়ে দু বছরের ছোট, হাই স্কুল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনিতে সে সারাদিন ক্রাম স্কুলে থাকে, কিন্তু আজকে স্কুল বন্ধ ছিল। গত বসন্ত পর্যন্ত ওর চুল অনেক লম্বা ছিল, কিন্তু এই গ্রীষ্মে কেটে ছেলেদের মত ছোট করে ফেলেছে।