কেসটার যাবতিয় সব খোঁজ খবর সংগ্রহে রাখছিলাম আমি। সেটা টিভিতে, খবরের কাগজ কিংবা ম্যাগাজিন, অথবা ইন্টারনেটে যেখানেই হোক। তাই প্রায় সবকিছুই আমার জানা ছিল। কিন্তু এই নোটবুকে যেভাবে বর্ণনা দেয়া সেটা আর কোথাও দেখিনি।
“আমার ধারণা মেয়েটাকে যে খুন করেছে, নোটবুকটা তার।”
পাশের বিভাগের একটা হাই স্কুলের ছাত্র ছিল কুসুদা মিতসুই। তাকে শেষ দেখা গিয়েছে স্টেশনের সামনে বন্ধুদের গুডবাই জানাতে। আর ও ছিল লোমহর্ষক খুনগুলোর মধ্যে প্রথম শিকার। এরকম আরো একটা কেস আছে, সেটার সাথে প্রচুর মিল আছে এটার। অনেকে বলে দুটোই একই সিরিয়াল কিলারের কাজ।
“ও দ্বিতীয় খুনটা সম্পর্কেও লিখেছে।”
***
জুন ২১
শপিং ব্যাগ হাতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এক মেয়ের সাথে কথা বললাম। সে জানাল তার নাম নাকানিসি কাসুমি।
আমি তাকে বাসায় লিফট দিতে চাইলাম।
হ***মাউন্টেনে যাওয়ার পথে সে খেয়াল করল আমরা ওর বাসায় যাওয়ার রাস্তা থেকে সরে এসেছি। তারপরই চিল্লাচিল্লি শুরু করল।
গাড়ি থামিয়ে ও চুপ না করা পর্যন্ত হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারতে থাকলাম আমি।
হ*** মাউন্টেনের একটা কুঁড়ে ঘ রে রেখে আসলাম ওকে।
***
গত মাসে দেশের সবাই নাকানিসি কাসুমি নামে কারিগরি স্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রির কথা জানতে পারে। খবরের কাগজ আর চ্যানেলগুলো সাথে সাথে খবরটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। ঐ দিন এমনকি স্কুল থেকে ফেরার আগেই আমি এই দ্বিতীয় শিকারের খবর পেয়ে যাই।
হ***মাউন্টেনের উপর একটা কুঁড়ে ঘরে মেয়েটাকে পাওয়া যায়। অনেকদিন ধরেই জায়গাটা পরিত্যাক্ত ছিল, মালিক কে তা জানা যায়নি। বৃষ্টিতে কুঁড়ে ঘরটার বারোটা বেজে গিয়েছিল। প্রায় দশ ফুট চওড়া ঘরটার দেয়াল আর মেঝেটা কাঠ দিয়ে তৈরি।
একজন বুড়ো লোক পাহাড়ে গিয়েছিল খাবার সংগ্রহ করতে। সে খেয়াল করল কুঁড়ে ঘরের দরজাটা খোলা। সবসময় সেটাকে বন্ধ দেখেছে। তাই অবাক হয়ে কাছে যেতেই বিকট এক দুর্গন্ধ এসে লাগে তার নাকে।
কুঁড়ের ভেতরে উঁকি দিয়ে প্রথমে সে বুঝতে পারেনি আসলে কী দেখেছে। আগের শিকারের মতই নাকানিসি কাসুমির শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে যত্নের সাথে কাঠের মেঝেতে দশ বাই দশ ছকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল সারি সারি করে। প্রতিটি টুকরোর মধ্যে দূরত্ব ছিল দশ সেন্টিমিটারের মত। মেয়েটাকে প্রায় একশ টুকরোতে রূপান্তর করা হয়েছিল।
এই নোটবুকে সেটার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে।
দুটো খুনেরই কোন প্রত্যক্ষদর্শি পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত খুনিও ধরা পড়েনি। মিডিয়া আজো খুন দুটো নিয়ে নিউজ করে যাচ্ছে। কোনো সিরিয়াল কিলারের বিভৎস কার্যকলাপ বলে চালানো হচ্ছে এগুলোকে।
“এই কেসের খবর দেখতে আমার ভালো লাগে।”
“কেন?”
“অদ্ভুত একটা কেস,” মোরিনো নীরস গলায় বলল।
আমিও একই কারনে খবর দেখতাম, তাই মোরিনো কি বোঝাতে চেয়েছিল তা পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম।
কিছু মানুষ খুন হয়েছে-কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে তাদের। যাদেরকে করা হয়েছে আর যারা তাদেরকে এরকম করেছে উভয়েই সত্যিকারের রক্তমাংসের মানুষ।
মোরিনো আর আমার এসব উভট বিভৎস বিষয়ের প্রতি অন্যরকম একটা আগ্রহ রয়েছে। আমরা সবসময় এমন কিছু খুঁজি যার মধ্যে জঘন্য খারাপ কিছু পাওয়া যায়, এমন কিছু যা জানার পর গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়তে ইচ্ছা হয়। অবশ্য এরকম অদ্ভুত আগ্রহ নিয়ে আমরা কখনো খোলাখুলি কথা বলিনি। কোন কিছু না বলেই আমরা একজন আরেকজনের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যাপারটার উপস্থিতি টের পেয়েছি।
আমি জানি আমাদের এসব কথা সাধারণ মানুষ জানলে আতংকিত হয়ে পড়বে। এধরনের আচরণ অনেকটাই অস্বাভাবিক। তাই আমরা যখন কোন টর্চার প্রক্রিয়া বা খুনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করি তখন গলার স্বর নিচু রাখি।
নোটবুক থেকে মুখ তুলে দেখি মোরিনো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি নিশ্চিত ও নির্ঘাত নাকানিসি কাসুমির শরীরের অংশ মেঝেতে পড়ে থাকার দৃশ্য কল্পনা করছিল।
“কোথায় পেয়েছে এই জিনিস?” আমি জানতে চাইলাম। বিস্তারিত জানাল সে।
আগের দিন বিকেলে মোরিনো ওর প্রিয় কফি শপে বসেছিল। জায়গাটা অন্ধকার, চুপচাপ আর কফি মাস্টারও কখনো টু শব্দ করে না।
মোরিনো কফি খেতে খেতে ‘পৃথিবীর নিষ্ঠুর গল্প সমগ্র’-এর পাতা ওল্টাচ্ছিল। এমন সময় শব্দ শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখে জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
কয়েকজন কাস্টমার বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল কিন্তু বৃষ্টি দেখে আবার বসে পড়ল তারা। বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষায় থাকা এইসব লোজনসহ ওকে নিয়ে সেখানে মোট পাঁচজন কাস্টমার ছিল।
মোরিনো বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠলে পায়ের তলায় অদ্ভুত কিছুর একটা উপস্থিতি অনুভব করে তাকিয়ে দেখে দোকানের কাঠের মেঝের উপর একটা নোটবুক পড়ে আছে। নোটবুকটা তুলে ও পকেটে ভরে ফেলে। একবারও নোটবুকটা কার হতে পারে সেটা খোঁজ নেয়ার কথা ওর মাথায় আসেনি।
বাথরুম থেকে ফিরে দেখে অন্য কাস্টমাররা কেউই বের হয়নি, বসে বসে বৃষ্টি দেখছে।
বৃষ্টি থামলে আবার দেখা পাওয়া গেল সূর্যের। সূর্যের উষ্ণ আলোয় শিগগিরি রাস্তাঘাট শুকিয়ে গেল। কয়েকজন কাস্টমার বেরিয়ে গেল কফিশপ থেকে।