সেটা যদি চোখে নাও পড়ে সেজন্য বাড়তি ব্যবস্থা ছিল বইটা একটু এগিয়ে রাখা।
আমার ইচ্ছা ছিল মি. সিনোহারাকে নিশ্চিত করা যে মোরিনো তার হাতগুলো চুরি করেছে, যাতে তিনি ওর হাতগুলো কেটে ওকে খুন করে ফেলেন। তাহলেই পরিকল্পনাটা সম্পূর্ণ হতো। তারপর তিনি কাটা হাতগুলো ফ্রিজে নিয়ে রাখতেন আর আমি সেগুলো চুরি করতাম। অবশ্য এই পরিকল্পনায় কিছু ফুটো ছিল। এমন কোন গ্যারান্টি ছিল না যে, তিনি ওকে খুন করলেও হাতগুলো বাসায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু ভালো সম্ভাবনা ছিল।
মোরিনোর সুন্দর সাদা ফ্যাকাসে হাতগুলো শুধু পেতে চাইছিলাম আমি।
“তুমি কি আমাকে শেখাবে কি করে এরকম হাসি দাও?” পরেরদিন সে আমাকে প্রশ্ন করল। সেবারই প্রথম মোরিনো আমার সাথে কথা বলে।
কারো সাথে কথা বলার সময় হাসি আমি। কিন্তু ভেতরে আমার কোন অভিব্যক্তি থাকে না-মোরিনো কোনভাবে সেটা ধরতে পেরেছিল। যে। অভিনয় আর কেউ বুঝতে পারেনি সেটা ওর চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।
এরপর থেকে আমরা দুজনই কথা বলার জন্য কোন সঙ্গি পেলাম। আমাদের সম্পর্ক অনেকটাই শীতল ধরনের, বন্ধুত্ব বললে ভুল বলা হবে-কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সময় আমার কোন অভিনয় করার প্রয়োজন পড়ত না। অভিব্যক্তিহীন চেহারায় থাকতে পারতাম। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা তৃপ্তিকর অনাগ্রহ ধরনের ব্যাপার ছিল, যে কারনে আমি আমার অমানুষিক আর অনুভূতিহীন চেহারা প্রকাশ করতে পারতাম।
***
গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হতে না হতেই সবাই কাটা হাতের কেসের কথা বেমালুম ভুলে গেল। এদিকে আমাদের দ্বিতীয় সেমি. শুরু হলো।
সূর্যাস্তের আলোয় ক্লাসের ভেতরটা হলুদ হয়ে আছে। খোলা জানালা দিয়ে বাতাস এসে আমার সামনে বসা মোরিনোর কালো লম্বা চুলগুলো নিয়ে খেলছে।
“তো এই মুভিটায় সত্যিকারের বিকলাঙ্গদের অভিনয় করানো হয়েছে। কাহিনিটাও অদ্ভুত, ওরা একটা দেহাবশেষ বহন করছিল, “
ও যখন বলছিল, আমি তখন বিড়বিড় করে মুভিটার নাম বললাম। মোরিনোকে একটু অবাক দেখাল। ওর অভিব্যক্তিতে তেমন কোন বদল না হলেও আমি ঠিকই ধরতে পেরেছিলাম।
“একদম ঠিক।”
একজন জার্মান মহিলা মুভিটা বানিয়েছেন। আমি যত মানুষকে চিনি তার মধ্যে খালি মোরিনো আর আমারই এই ধরনের অস্বাভাবিক ব্যাপার স্যাপারে আগ্রহ রয়েছে।
“তোমার কি কাটা হাতের কেসের কথা মনে আছে?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“গত বসন্তের সময়ে যেটা ঘটেছিল?”
“সেসময় তুমি যদি ভিক্টিমদের একজন হতে তাহলে এখন কী করতে?”
মোরিনো ওর হাতগুলোর দিকে তাকাল। “ঘড়ি পরা অনেক কঠিন হয়ে যেত। কেন জিজ্ঞেস করছ?” বলল সে, একটু দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল ওকে।
ওর কোন ধারণা নেই যে লোকটাকে ও ধরাশায়ী করেছিল কাটা হাতের কেসের অপরাধি সে-ই ছিল। আমি মাঝে মাঝে ওর হাতগুলোর দিকে নজর দেই। হয়তো ভালই হয়েছে মি. সিনোহারা ওগুলো কাটতে পারেননি বলে। ওগুলোকে হয়তো জ্যান্তই বেশি ভালো দেখায়-কে জানে মি, সিনোহারা হয়তো কাটতে গিয়ে ওগুলোকে ভুল জায়গায় কেটে ফেলতেন।
“এমনি,” আমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম।
ওর হাতগুলো আমি চাইছিলাম, কারন ওগুলোতে সুন্দর একটা দাগ আছে। ও যখন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল সেসময়ের ক্ষত থেকে সৃষ্ট দাগ।
৩. সারমেয়
সারমেয়
১
আমার প্রতিপক্ষ রক্তক্ষরণ নিয়ে ঘাসের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ওর চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে আসা আমার জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না। চতুষ্পদ জন্তুটি আঘাতের পর আঘাতে বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিল, দ্রুত নড়াচড়া করার কোন অবস্থা ওর ছিল না।
আমার মনে হল ওর কষ্টের পরিণতি টানার সময় হয়ে এসেছে। পাল্টা আঘাত করার ক্ষমতা আর নেই।
জটার গলা আমার দুই চোয়ালের মধ্যে নিলাম। ঘাড় ভাঙার শব্দ মুখ বেয়ে উঠে এসে সারা শরীরে শিহরণ জাগাল। জন্তুটা স্থির হয়ে দলার মত আমার মুখ থেকে ঝুলতে লাগল।
আমি কোন দয়া প্রদর্শন করিনি। যদিও এসব কিছু করতে চাইনি, একদমই না-কিন্তু ইয়ুকা চেয়েছে আমি করি, সুতরাং আমাকে আমার প্রতিপক্ষকে খুন করতেই হলো।
চোয়াল হাঁ করলাম, জন্তুটার মৃতদেহ ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেল। একদম নিখুপ, চোখ দুটোয় আলো নিভে গিয়েছে।
জোরে হুংকার ছাড়লাম।
ইয়ুকা আর আমি চারপেয়ে জন্তুটাকে এখানে নিয়ে এসেছিলাম, এই ব্রিজের নিচে। আমরা যাচ্ছিলাম, তখন একটা বাড়ির সামনে থেকে ইয়ুকা চুপচাপ ওটাকে তুলে এনেছিল। কেউ দেখেনি। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি জন্তুটা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ুকা বলেছিল, “আজকের রাতের শিকার হবে এটা।”
এমন না যে, আমি ইয়ুকার শব্দগুলো বুঝতে পারি, কিন্তু তারপরেও জানতাম ও কী বলছিল আমাকে।
এসব ঘটনা সবসময় রাতের বেলায় হয়। প্রতিদিন না, মাঝে মাঝে। এখন পর্যন্ত কতবার হয়েছে আমার মনে নেই। শহর থেকে আমরা কোন একটা শিকার জোগাড় করি, তারপর ব্রিজের নিচের এই গোপন জায়গায় নিয়ে আসি। এই জায়গার কথা আমি আর ইয়ুকা ছাড়া কেউ জানে না। তারপর ইয়ুকা চায় জন্তুটার সাথে আমি লড়াই করি।
আমি ওর আদেশমত কাজ করি। প্রতিপক্ষের দিকে ছুটে যাই, আঘাত করে শুইয়ে ফেলি। যেসব চারপেয়ে প্রাণীর সাথে আমি লড়াই করেছি সবগুলোই আমার চেয়ে আকারে ছোট ছিল, সুতরাং ওদেরকে কাবু করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। আমার আঘাতে ওগুলোর হাড় ভেঙে যায়, রক্ত ছিটকে পড়ে।