বোকাটা বুঝতে পারেনি, বুঝলে এতক্ষণে উঠে দৌড় দিত। সিনোহারা কোন সন্দেহ না জাগিয়ে ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। চোর পুতুলের হাতগুলোও সাথে করে নিয়ে গিয়েছে। ওগুলো যে হাত তা কারোর বুঝতে পারার কথা না। কারন ওগুলোতে কোন আঙুল ছিল না, স্রেফ কাপড় দিয়ে পেঁচানো তুলোর বল। কিন্তু তারপরেও চোর সেগুলো হাতগুলোর সাথে নিয়ে গিয়েছে।
শুধুমাত্র একজনের পক্ষেই জানা সম্ভব, ওগুলো হাত…এমন একজন যে ঘটনাক্রমে হাত কাটা পুতুলটা খুঁজে পেয়েছে। পুতুলটা পাওয়ামাত্র নিশ্চয়ই সে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বুঝে ফেলেছে যে, সিনোহারাই কাটা হাতের কেসের কালপ্রিট।
সিনোহারা ওর কাঁধে হাত রাখল। মেয়েটা আস্তে করে ওর দিকে ফিরল। “কি ব্যাপার?”
ভালো অভিনয় করতে পারে, সিনোহারা ভাবল।
সে কেমিস্ট্রি অফিসের ময়লার ঝুড়িতে পুতুলটা ফেলে দিয়েছিল। মোরিনো ছাড়া আর কারো সেটা হাতে পাওয়ার কথা নয়। ল্যাব পরিস্কার করার পুরোটা সময় সে লেকচার হলে ছিল। অন্য যে ছেলেটা পরিস্কার করার কাজে সাহায্য করছিল তার সময় ছিল না ময়লার ঝুড়ি ঘেঁটে দেখার।
“মি. সিনোহারা আপনার হাতটা সরান প্লিজ। আমার পড়ায় সমস্যা হচ্ছে।”
এই মেয়েটা সবসময় লেকচার হলের কোণায় বসে বই পড়ে। ও ভুরু কুচকাল-মেয়েটার চেহারায় এতটা অভিব্যক্তিও সিনোহারা আগে দেখেনি।
আগেরদিন সিনোহারা কিবোর্ড পরিস্কার করতে গিয়ে একটা লম্বা কালো চুল পেয়েছিল। সারা বাড়ির সব জায়গা বাদ দিয়ে চুলটাকে উড়ে এসে কিবোর্ডের উপরই পড়তে হল? ব্যাপারটা কি কাকতালীয় কিছু হওয়া সম্ভব? সিনোহারার নিজের চুল ছোট। সুতরাং চুলটা তার নিজের হতে পারে না। তার মানে অনুপ্রবেশকারী যেই ছিল তার ছিল লম্বা চুল।
আর বইয়ের সেলফে…মেয়েটা যেই বইটা পড়ছে তার পরবর্তি খন্ড ওর সেলফে ছিল। কিন্তু সেলফে একটু বেরিয়ে ছিল বইটা। ভালো করে খেয়াল না করলে চোখে পড়বে না। সিনোহারা সবসময়ই ওর বইগুলো একদম নিখুঁতভাবে গুছিয়ে রাখে, কোন বই পাঁচ মিলিমিটার বেরিয়ে থাকবে তা হতেই পারে না। নিশ্চয়ই মেয়েটা বইটা দেখতে পেয়ে বের করে হাতে নিয়েছিল।
ওর মনে কোন সন্দেহ নেই মোরিনোই ওর হাতগুলো চুরি করেছে।
সিনোহারা মোরিনোর কাঁধে ওর মুষ্টি আরো জোরালো করল, যেন ভেঙেই ফেলবে।
মোরিনো সঙ্কুচিত হয়ে গেল।
“হাতগুলো কোথায় রেখেছ বল আমাকে,” যতটা সম্ভব ভদ্র গলায় সিনোহারা হুকুম দিল।
কিন্তু মোরিনো তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গেল, বলল ব্যথা পাচ্ছে সে। যে বইটা পড়ছিল সেটা মাটিতে পড়ে গেল।
“হাতগুলো কোথায়?” সে আবার প্রশ্ন করল, চাপ একটু কমাল যাতে মেয়েটার কানে কথা যায়। মেয়েটা এমনভাবে মাথা নাড়ল যেন ও কি নিয়ে কথা বলছে বুঝতে পারছে না।
না জানার ভান করছে, ভাবল সিনোহারা। সাথে সাথে হাত দিয়ে মেয়েটার সরু গলাটা টিপে ধরল সে।
মোরিনোর চোখগুলো মনে হচ্ছিল বেরিয়ে আসবে, অবাক হয়ে গেছে ঘটনার আকস্মিকতায়। সিনোহারা ওকে খুন করতে যাচ্ছে, কেউ বাঁচাতে পারবে না। ও হাতের চাপ বাড়াল। মিনিট খানেকের মধ্যেই মেয়েটার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসবে-ব্যাপারটা চিন্তা করে ও একটু উৎফুল্ল বোধ করছিল। এমন সময় মেয়েটার হাতে একটা ছোট সিলিন্ডার চোখে পড়ল, কোন ধরনের স্পে। কিন্তু যখন সে খেয়াল করল তখন যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে, মোরিনো ওর চোখের দিকে তাক করে স্প্রে করে দিয়েছে। হিস হিস শব্দের সাথে মনে হল ওর চোখগুলোতে আগুন ধরে গেল।
***
মোরিনোর সাথে সবসময় একটা মরিচের পানির স্প্রে ক্যান থাকে। সে সেটা মি. সিনোহারার মুখের উপর স্প্রে করে দিল। তারপর সাহায্য চাওয়ার আগে একটা চেয়ার তুলে তার মাথায় বাড়ি লাগাল। কোন চিৎকার করেনি-স্রেফ শান্তভাবে জোর গলায় সাহায্য চেয়েছে।
এক মিনিট পর কিছু শিক্ষার্থী আর শিক্ষকেরা দৌড়ে এল। ভিড়ের মাঝখানে পড়ে মি. সিনোহারা তার চোখ ডলছিলেন।
পোডিয়ামের নিচের লুকানো জায়গা থেকে বের হতে আমাকে ভিড় সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো।
উপসংহার
মি. সিনোহারা গ্রেফতার হলেন। কিন্তু কাটা হাতের কেসের অপরাধি হিসেবে নয়। বরং এরচেয়ে অনেক কম একটা অপরাধি জন্য শাস্তি দেয়া হল তাকে। কেউ তার আসল অপরাধ টের পায়নি, অন্তত এখন পর্যন্ত নয়।
তিনি আর আমাদের শিক্ষক নেই, স্কুল ছাড়তে হয়েছে তাকে। এখন পর্যন্ত নতুন কোন হাত কাটা ভিক্টিম পাওয়া যায়নি।
সে হাতগুলো আমি চুরি করেছিলাম সেগুলো বাড়ির পেছনের উঠোনের মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়েছি। ওগুলোর কোন প্রয়োজন নেই আমার। হাতগুলোর প্রতি উনার যেরকম ভালবাসা ছিল, আমার সেরকম কিছু ছিল না।
আমি তাকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছিলাম যে মোরিনো তার হাতগুলো চুরি করেছে।
যখন আমি রেফ্রিজারেটরে হাতগুলো দেখলাম তখন নিশ্চিত হয়েছিলাম আমার ধারণা মতই তিনি হাত কেটে সংগ্রহে রাখেন। তার বাসায় ঢোকার আগেই আমার পরিকল্পনা ছিল পুতুলের হাতগুলো ব্যবহার করে তার সন্দেহ মোরিনোর উপর ফেলার। আমি খুশি যে তিনি বুদ্ধিমানের মত (?) পুতুলের হাতের সূত্র ধরতে পেরেছিলেন। আমি যে ময়লার ঝুড়ি অদল বদল করতাম সেটা তার জানা ছিল না।
কালো চুলটাও আমি ফেলে এসেছিলাম-মোরিনোর চুল যেরকম দেখতে। আসলে সেটা ছিল আমার বোনের চুল। আমার মনে আছে মি, সিনোহারা তার অফিসের কম্পিউটার কমপ্রেসড বাতাসের ক্যান দিয়ে পরিস্কার করছিলেন। সুতরাং আমি আশা করছিলাম বাসার কম্পিউটারের কিবোর্ডের উপর থাকা চুলটা তার চোখে পড়বে।