কিন্তু কথা হলো, চোরকে সে কিভাবে খুঁজে পাবে? সিনোহারা ডেস্কে কনুই রেখে চিন্তা করতে লাগল।
কিবোর্ডটা নোংরা হয়ে ছিল। পাশে রাখা কমপ্রেসড বাতাসের ক্যানের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে থেমে গেল সিনোহারা। ওর চোখ জোড়া কিবোর্ডের উপর আটকে গেল।
কোন সন্দেহ নেই চোর জিনিসটা ফেলে গিয়েছে। আর কোন ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। জিনিসটা খুবই ছোট, সহজে চোখ এড়িয়ে যায়। ভাগ্য ভালো সিনোহারা সেটা খেয়াল করেছে।
এখন সে বুঝতে পারল রেফ্রিজারেটরের সামনে কি কারনে মনটা খুতখুত করছিল তখন। কারণটা একদম পরিস্কার। অবহেলা করে হাত চোর একটা ভুল করেছে আর সেই ছোট্ট ভুলই চোরের পরিচয় ফাস করে দিয়েছে…
৪
পরদিন সকালে কাজে যাওয়ার সময় সিনোহারা সাথে একটা চাপাতি নিল। এই চাপাতি সে হাত কাটার কাজে ব্যবহার করে। জিনিসটা বেশি বড় না, ব্যাগে সহজে লুকিয়ে রাখা যায়। অন্য শিক্ষকদের সাথে কুশল বিনিময়ের সময় তারা টেরও পেল না সিনোহারার ব্যাগে কি আছে।
সকালবেলাটা সবসময়ই দৌড়ের উপর থাকতে হয়। টিচারদের রুমের বাইরে ছাত্রছাত্রিরা দ্রুত চলাফেরা করছিল। প্রথম সেমিস্টারের মিডটার্ম প্রায় চলে এসেছে, যার যার ডেস্কে বসে শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করতে ব্যস্ত।
শিক্ষকদের একজন সিনোহারাকে জিজ্ঞেস করলেন ওর প্রশ্নপত্রের কি অবস্থা। ও হেসে উত্তর দিল। জীবনটা সে এইরকম হেসেই পার করছে। লোকগুলোকে আসলে ওর অসহ্য লাগে।
হাত, হাত, হাত।
হাতগুলো ওর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে হাত, তারপর মানুষ। মানুষের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই।
সকালে সিনোহারার ক্লাস ছিল, তাই হাত চোরের সাথে দেখা করার সময় পায়নি। কিন্তু সে জানে কে চোর। চোরকে ধরে আগে জানতে হবে হাতগুলো কোথায় আছে।
মাত্র এক রাত পার হয়েছে, সিনোহারা নিজেকে শান্ত করতে চাইছে। এই ভেবে যে হাতগুলো এখনো নিরাপদে আছে। কোথায় আছে জানার পর সে চাপাতি দিয়ে চোরের হাতগুলো কেটে নেবে। শরীরের সাথে হাতগুলোর মারা যাওয়ার কোন মানে নেই। তাই আগে হাতগুলো কেটে নিতে হবে।
সকালের শেষ ক্লাস ছিল হোম রুম ক্লাস। সবাই দ্রুত হাতে ব্ল্যাক বোর্ড থেকে তার লেখা খাতায় তুলে নিচ্ছিল। ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিয়াল্লিশ। হাতের সংখ্যা আটচল্লিশ।১১১১১
সিনোহারা বুঝিয়ে বলল মিডটার্মে কী কী থাকবে, কিন্তু ওর মাথায় খালি চুরি যাওয়া হাতগুলোর চিন্তা ঘুরছিল। চোর খাবার রেখে ওর হাতগুলো নিয়ে গিয়েছে। সিনোহারা সাথে সাথে ব্যাপারটা খেয়াল করলেও তখন এর অর্থ বুঝেতে পারেনি।
অবশেষে ঘন্টা বাজল, ক্লাস শেষ হলো। সকালের সব ক্লাস শেষ। লাঞ্চের সময় এখন।
সিনোহারা রুম ছেড়ে বের হলো। ব্যাগ থেকে চাপাতিটা আনতে যাচ্ছে। টিচারদের অফিসে ওর ব্যাগটা রাখা। হলওয়েতে ভিড় আর চিৎকার চেঁচামেচি, কিন্তু এসবের কিছুই সিনোহারার কানে ঢুকছিল না।
সে কয়েক মিনিট টিচারদের রুমে অপেক্ষা করে কেমিস্ট্রি হলের দিকে পা বাড়াল।
***
লাঞ্চের সময় শুরু হতেই আমি কেমিস্ট্রি লেকচার হলের দিকে পা বাড়ালাম। দরজা খুলে দেখি ভেতরে কেউ নেই, ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। সাথে সাথে বাইরের সব আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল, ভেতরের বাতাস মনে হয় স্থির হয়ে আছে। যেন সময় এখানে এসে থেমে গিয়েছে।
পালস মাপলাম, অনেক দ্রুত চলছে। চামড়া শরীরের উপর চেপে বসেছে মনে হচ্ছিল। অনেক টেনশন হচ্ছিল।
গতকাল রাতে বাসায় ফেরার পর মি, সিনোহারা কি করলেন? যখন দেখলেন হাতগুলো নেই তখন তার মনের অবস্থা কি দাঁড়িয়েছিল? তিনি কি অনেক রেগে গিয়েছিলেন? অনুমান করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।
সকালে তাকে আমি দেখিনি-দেখলেও ভান করতাম যেন কিছু জানি। তিনি আমাকে ধরতে পারবেন না, যদিনা আমি কোন ভুল করে থাকি। ভুল করে থাকলে খবর আছে। কিন্তু আমি প্রায় নিশ্চিত, তিনি জানেন না হাতগুলো আমি চুরি করেছি। কিন্তু আপাতত প্রার্থনা করা ছাড়া পুরোপুরি নিশ্চিত হবার কোন উপায় নেই।
হতে পারে আমি হয়তো কোন ভুল করেছি, খেয়াল করিনি-কিন্তু সেটা করে থাকলেও এখন জানার কোন উপায় নেই। যদি করেই থাকি তাহলে মি, সিনোহারা অবশ্যই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ছুটে আসবেন। সেক্ষেত্রে আমার জীবন এখন হুমকির সম্মুখীন।
নির্জন লেকচার হলে, অন্ধকারের ভেতর দাঁড়িয়ে আমি যখন এসব আকাশ পাতাল ভাবছিলাম তখন শুনতে পেলাম কেউ একজন দরজার ঠিক বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে।
***
দরজা খুলে সিনোহারা লেকচার হলে ঢুকল। ভেতরে একজনকে দেখা যাচ্ছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সিনোহারার রাগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
ইচ্ছা হচ্ছিল গিয়ে ওর গলা চেপে ধরে, কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করল। মুখে হাসি ফুটিয়ে সামনে গেল। ওর অন্য পরিকল্পনা আছে। ভান করতে হবে যেন ও কিছু জানে না।
“হ্যালো মি. সিনোহারা,” কথাটা শুনে সিনোহারা মনে মনে হাসল, বাহ বাহ দারুন অভিনয়। নিশ্চয়ই সিনোহারাকে দেখে মনে মনে হাসছে। হয়তো হাত হারিয়ে সিনোহারা কেমন কষ্ট পাচ্ছে তা দেখার জন্যই এখানে বসে আছে। রাগ লুকিয়ে সিনোহারা ওর কাছাকাছি এগিয়ে গেল। প্ল্যানটা সফল করতে ওর শিকারের কাছাকাছি যেতে হবে। কোনভাবে টের পেতে দেয়া যাবে না যে ও চোরকে চিনে ফেলেছে।