“জানো নাকি? জুনিয়র হাই স্কুলে থাকতে মোরিনো আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল, একজন আমাকে বলেছিল। সেটা মাথায় আসতেই আমি ওর ফ্যাকাসে সাদা হাতগুলো আবার ভালো করে দেখলাম। ও কেন মরতে চেয়েছিল আমি জানি না, কিন্তু ওর জন্য এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যে সহজ কাজ নয় তা বুঝতে পারছিলাম।
অভিনয় বন্ধ করে দিলে আমার অবস্থা হয়তো ওর মত গিয়ে দাঁড়াবে। যদি আমার আশেপাশের লোকজন বুঝতে পারে আমি কতটা নিষ্ঠুর আর অনুভূতিহীন তাহলে আমার জীবন কতখানি কঠিন হতে পারে? মনে মনে আমার বর্তমান অবস্থা আর যেটা হতে পারে সেটার তুলনা করলাম-খুব একটা পার্থক্য হবে মনে হলো না। সবদিকেই আমি একা।
পুতুলটা পাওয়ার তিন দিন পর একটা নতুন পরিকল্পনা দাঁড় করালাম।
৩
মি, সিনোহারার বাসা ছিল একটা নির্জন এলাকায়। সাধারণ দোতলা বাড়ি। বাড়ির পাতলা সাদা দেয়াল সূর্যের আলো পড়ে হলদেটে দেখাত। আশেপাশে কেউ ছিল না, একমাত্র শব্দ যেটা পাওয়া যাচ্ছিল সেটা ছিল মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যাওয়ার শব্দ।
দ্বিতীয় বর্ষের হোমরুম টিচার ছিলেন মি. সিনোহারা। ঐ ক্লাসের একজনকে আমি চিনতাম। সে আমাকে ঠিকানা দিয়ে জোর গলায় বলেছিল টিচার সেখানে একাই থাকেন।
হাতঘড়ি দেখলাম। মঙ্গলবার সব শিক্ষকদের মিটিঙে থাকার কথা। সুতরাং তিনি বাড়ি ফেরার আগে অনেকটা সময় হাতে পাচ্ছি।
কেউ দেখছে না নিশ্চিত হয়ে গেট দিয়ে ঢুকে বাড়ির পেছনের দিকে গেলাম। একটা ছোট উঠোনের মত জায়গা, কাপড় ঝুলানোর ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু নেই সেখানে। উঠোনের দিকে মুখ করা একটা বড় জানালা ছিল, কিন্তু ভেতর থেকে লক করা। হাতে একটা ভোয়ালে পেঁচিয়ে ঘুষি দিয়ে জানালা ভাঙলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম বোঝার জন্য কেউ কিছু শুনেছে কিনা, তারপর লক খুলে ঢুকলাম ভেতরে। পা থেকে জুতো আগেই খুলে নিয়েছি।
কাটা হাতের কেসের কালপ্রিটটা হাত কেটে সাথে করে নিয়ে যেত। কেউ জানে না হাতগুলোর কি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করে ওগুলো দেখে অপরাধি লোকটা আনন্দ পায়, আবার কেউ কেউ মনে করে সে ওগুলো রান্না করে খায়। সত্যিটা আসলে কি তা কেউই জানে না। যেটাই হোক, অপরাধির বাসায় কোন না কোন প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। আজ রাতে আমার কাজ হল মি. সিনোহারার বাসায় সেরকম কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজে দেখা।
জানালা ভেঙে যে রুমে ঢুকেছি সেটা ছিল লিভিং রুম। মেঝেতে কাঁচের টুকরো পড়েছিল, তাই সাবধানে পা ফেললাম। বাসার সবকিছু সুন্দর করে গোছানো, এমনকি টেবিলের উপর ম্যাগাজিন আর রিমোটগুলোও পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা।
আমি যতটা সম্ভব কম শব্দ করার চেষ্টা করলাম। ভয় হচ্ছিল মি. সিনোহারা হয়তো তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে সামনের দরজায় চাবি ঢোকানোর শব্দ যেন আমার কান এড়িয়ে না যায়। আমাকে দেখে ফেলার আগেই দৌড়ে পালাতে হবে।
মেঝে পলিস করা ছিল। যদিও আলো নেভানো ছিল আর চারপাশে অন্ধকার, তারপরেও জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় ভালো মতই সব দেখতে পারছিলাম।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় খেয়াল রাখলাম দেয়াল কিংবা রেলিঙে যেন হাত না লাগে। মি. সিনোহারা যদি আসলেই অপরাধি হয়ে থাকেন, তাহলে হাতের ছাপ কোথাও পেলেও সম্ভবত পুলিশকে জানাবেন না। কিন্তু তারপরেও আমি যে এখানে এসেছিলাম তার কোন প্রমাণ রেখে যেতে চাই না।
দোতালার বেডরুমে একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার আর কিছু বুকশেলফ ছিল। বইগুলো সাইজ অনুসারে সাজানো। কোথাও এক বিন্দু ধুলোও পড়ে নেই।
মি. সিনোহারা যে হাত কাটা অপরাধি তার কোথাও কোন সূত্র নেই।
আমি আমার ডান হাতে আঙুল চেপে পালস পরীক্ষা করলাম। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত ছিল। এর অর্থ আমার টেনশন হচ্ছিল। আচ্ছা, ডাক্তাররা হাত কাটা লোকজনের পালস কিভাবে পরীক্ষা করেন?
ঘড়ি দেখলাম। মিটিং এতক্ষণে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। মি, সিনোহারা যদি স্কুল থেকে বের হয়ে সরাসরি বাসায় ফেরেন, তাহলে আমার উচিত হবে এখনই বেরিয়ে যাওয়া।
দোতালার অন্য রুমগুলি চেক করলাম, দুটো তাতামি ফ্লোরের রুমে খালি শেলফ আর ওয়ারড্রব। মি. সিনোহারা কাউকে আক্রমণ করেছেন তার কোন চিহ্ন নেই কোথাও।
প্রত্যেকটা রুম চেক করার পর আমি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি কোন কিছু ভুল করিনি কোথাও, স্টুডেন্ট আইডি, ইউনিফর্মের বোতাম, টেক্সটবুক কিংবা কোন মোজা। আমাকে চিনে ফেলতে পারে এরকম কিছু ফেলে যাওয়া হবে বিশাল রকমের ভুল। ঠিকমত মনোযোগ দিলে সেরকম ভুল হওয়ার সুযোগ কম।
কোন কিছু ফেলে যাইনি নিশ্চিত হয়ে আমি আবার নিচে নেমে এসে কিচেনে ঢুকলাম।
মি. সিনোহারা কি নিজে রান্না করেন? খুব বেশি থালাবাসন ছিল না, যা ছিল তা সুন্দর করে সাজানো। সিঙ্কে কিছু রাখা নেই। দেখে মনে হচ্ছিল কেনার পর থেকেই কাপ আর রান্নার জিনিসপত্র এনে কিচেনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, কখনো ব্যবহার করা হয়নি।
টেবিলের উপর একটা রাইস কুকার ছিল, একা একজন মানুষের জন্য সাইজটা একটু বড়ই বলা যায়। উনার পরিবার কিংবা অতীত সম্পর্কে কোন কিছু আমার জানা নেই। আগে কি আরো কোন আত্মীয় সাথে থাকত? না হলে এরকম বড় রাইস কুকার কেনার অর্থ কি?