শরীরের কয়েক জায়গায় রক্ত জমে কালো দাগ পড়েছে কিন্তু ইউনিফর্মের নিচে ঢাকা পড়ায় সেগুলো দেখা যাচ্ছে না।
“যাই হোক, গতকালকে কিটাওয়া হিরোকোর খুনের তথ্য নিয়ে আমি একটা স্ট্র্যাপবুক বানাচ্ছিলাম..”
লাইব্রেরিতে দেখা হওয়া লোকটার কাছ থেকে মোরিনো বেশ ভালো পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম লোকটা কে, মোরিনো উত্তর দেয়নি। আমি ঠিক করলাম ওকে ফলো করে নিজেই জেনে। নেব, কিন্তু এখন আর দরকার আছে মনে হয় না।
“শেষ করেছ?”
“প্রায় শেষ। এখন খালি দরকার খুনির একটা ইন্টারভিউ নেয়া। তাহলেই কাজ শেষ।”
বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে স্কুলের গেটের দিকে যাওয়ার সময় মোরিনো বলছিল পুলিশ যতটুকু জানিয়েছে কেসটা তারচেয়ে কত বেশি বিভৎস ছিল।
সময় হয়ে গেছে সূর্য অস্ত যাওয়ার, ঠান্ডা বাতাস বইছে। স্কুল বিল্ডিং থেকে গেট পর্যন্ত চওড়া রাস্তা, দু-পাশে গাছের সারি। অল্প কিছু শিক্ষার্থী আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করছে। বাতাসে একটা সাদা প্লাস্টিক ব্যাগ উড়ে গেল।
আমরা গেট থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হলাম। রাস্তার সাথের দোকানটায় কিটাযাওয়া নাটসুমি দাঁড়িয়ে ছিল। ম্যাগাজিন র্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। আমাদের মধ্যে চোখাচোখি হলো।
আমি দোকানের সামনে থামলাম। মোরিনোও আমার সাথে থামল।
দোকানের ভেতর কিটাযাওয়া নাটসুমি হাতের বইটা নামিয়ে রাখল। এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরায়নি আমার থেকে। তারপর দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল।
দোকানের সামনে একটা পার্কিং লট, অল্প কয়েকটা গাড়ি রাখার মত বড়।
নাটসুমি এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়াল। দোকানের ফ্লুরোসেন্ট লাইটের স্নান আলো আমাদের উপর এসে পড়ছে।
গত রাতে আমি একজনকে খুন করেছি, যখন নাটসুমি টেপ রেকর্ডার নিয়ে মাটিতে পড়ে ছিল।
ছুরিটা শরীরের ঢোকার সময় ভোঁতা একটা শব্দ হয়েছিল, তারপর সে নিথর হয়ে গেল।
এরপর নাটসুমির সাথে আর দেখা না করেই আমি বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম। ইচ্ছা করছিল না ওর সামনে পড়তে। আমাদের লড়াই ওর চোখে পড়েনি। সেজন্য ফ্লোরের রক্তটা কার ছিল সেটা জানার ওর কোন উপায় ছিল না, অন্তত স্কুলের সামনে এসে দেখা ছাড়া।
আমি ওকে কিছু বলার আগেই মোরিনো কথা বলে উঠল। সে এতক্ষন নাটসুমির দিকে তাকিয়ে ছিল।
“তুমি কি…কিটাযাওয়া নাটসুমি?”
“হ্যাঁ,”
“আমিও তাই ভেবেছি। তুমি দেখতে খবরের কাগজে ছাপা হওয়া তোমার বোনের মতই।
“ওর চুল রঙ করে বদলে ফেলার আগের ছবিটার কথা বলছ?”
“হ্যাঁ, খুনের তদন্ত করা আমার শখ। তাই তোমার বোনের ছবি দেখা হয়েছে। তোমার কোন ছবি খুঁজে পাইনি অবশ্য। কিছুদিন আগে যখন তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম তখনই মনে হয়েছিল কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।”
“তুমি ওর খুনের তদন্ত করছিলে?” নাটসুমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। আমার দিকে তাকাল সাহায্যের জন্য।
“ওর মনে হয় তথ্য সংগ্রহের একটা উৎস আছে, আমাকে বলেনি সেটা কে।” আমি বুঝিয়ে বললাম। নাটসুমি বুঝতে পারল না ওর কি বলা উচিত।
মোরিনো আমার দিকে তাকাল। ওর চেহারা বরাবরের মতই অভিব্যক্তিহীন। কিন্তু গলা শুনে উৎসাহ টের পাওয়া যাচ্ছিল। “তুমি কি করে কিটাওয়াকে চেন?”
উত্তর না দিয়ে আমি পকেট থেকে কিছু খুচরা কয়েন বের করলাম আর মোরিনোর হাতে দিলাম। সে এক মুহূর্ত কয়েনগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কি করবে সেগুলো দিয়ে। আমি দ্রভাবে বললাম যে আধ মাইলের মত সামনে একটা ভেন্ডিং মেশিন আছে, সেখান থেকে আমাদের জন্য ডিঙ্ক কিনে আনতে।
“আমি জানি আমাদের সামনেই একটা দোকান আছে কিন্তু ভেন্ডিং মেশিন থেকে কিনে আনলেই ভালো হয়। তুমি যাতে আমার কথা শুনতে না পাও সেজন্য অবশ্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করছি না।”
মোরিনো একবার আমার দিকে আরেকবার নাটসুমির দিকে তাকাল। ইতস্তত করছে। তারপর মনস্থির করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভেন্ডিং মেশিনের দিকে এগিয়ে গেল।
“মেয়েটা কিছু জানে না, তাই না? খুনি যে ওকে টার্গেট করেছিল?” কিটাযাওয়া বিড়বিড় করল।
আমি মাথা ঝাঁকালাম।
এক মুহূর্তের জন্য আমরা দুজনেই মোরিনোর হেঁটে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কালো পোশাকের কারনে ও অন্ধকারে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
“সেদিন সে আমাকে হিরোকোর ছবি দেখিয়েছিল।”
“ওর মৃতদেহের?”
“হ্যাঁ। কেউ একজন ওকে ছবিটা দিয়েছিল। যে ছবি কোখাও ছাড়া হয়নি। নিশ্চিতভাবে মুখটা হিরোকোর ছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যে ছবিটা রাখা হয়েছিল সেটার মত হেয়ারস্টাইল,
“তারপর, তুমি যখন দেখলে..”
“আমি বুঝতে পেরেছিলাম, জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে যে খুনি নিজে ছবিটা তুলেছে। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার…কিন্তু যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে হিরোকোর খুনি ওর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে আর ও হয়তো তার পরবর্তি শিকার।”
“তুমি অর্ধেক সঠিক ছিলে, কিন্তু খুনি ওর বদলে আমাকে বেছে নিল।”
“আমি যখন তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তখন বুঝলাম সে তখনো নিজের শেষ চাল চালেনি। তুমি খুবই অদ্ভুত আচরণ করছিলে। যে কারনে আমি ভাবছিলাম সে তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছে কিনা।”
“হ্যাঁ…সে সেটাই করেছিল। যে কারনে তুমি আমার রুমে ঢুকেছিলে…সূত্র খুঁজতে।”
“তুমি আমাকে কখনোই সত্যিটা বলনি।”