এই বিরল সম্মান এবং প্রচুর অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনার সংবাদটি শোনার পর প্রথমেই আবু জুনায়েদ টেবিলের সামনে একটি চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। তারপর ড্রয়ার থেকে ক্যালকুলেটর বের করে হিসেব করতে লাগলেন। তাকে একান্নটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে হবে। প্রতি বক্তৃতার জন্য পেতে যাচ্ছেন চার হাজার ডলার। একান্নকে চার দিয়ে গুণ করলে কত দাঁড়ায়? এক ডলারে চল্লিশ টাকা, এক লক্ষ ডলারে চল্লিশ লক্ষ টাকা, দু লক্ষ ডলারে আশি লক্ষ টাকা। তার উপর আরো দু লক্ষ টাকার মতো। মোট বিরাশি লক্ষ টাকার হাতছানি। সে কী সামান্য ব্যাপার! একটু আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে এল। স্বপ্নের তাৎপর্যটা তার কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি ইচ্ছে করলে পাঁচশ একর, এক হাজার একর মনের মতো জমি পছন্দ করে কিনতে পারবেন। তার হালাল রুজির টাকায় কেনা । তিনি কনসালট্যান্সি করেননি। রাজনৈতিক ধান্দাবাজি করেননি । আল্লাহ সৎ পথেই তার। আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন।
আবু জুনায়েদ ভাবলেন সংবাদটা প্রথমে নুরুন্নাহার বানুকে জানানো প্রয়োজন । আবু জুনায়েদের মনে হলো তিনি শূন্যের উপর ভেসে বেড়াচ্ছেন। শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখেন নুরুন্নাহার বানু উত্তর দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছেন। আবু জুনায়েদ তাকে আস্তে আস্তে দোলা দিয়ে ডাকতে থাকলেন এই বানু এই বানু। খুব আবেগাপ্লুত নয়নে তিনি কখনো নুরুন্নাহারকে বানু বলে ডাকেন না। আবু জুনায়েদ ডাকাডাকি করছেন, অথচ নুরুন্নাহার বানু চোখ খুলছেন না। অবশেষে অনেক ডাকাডাকির পর নুরুন্নাহার বানু ঘুম থেকে জেগে খাটের উপর বসলেন। আবু জুনায়েদের দিকে ঘোলা ঘোলা চোখে তাকালেন। মনে হলো না তিনি আবু জুনায়েদকে চিনতে পেরেছেন। খুব ক্ষীণ স্বরে, মনে হয় স্বরটা তার নয়, অন্য কোথাও থেকে ভেসে আসছে জিজ্ঞেস করলেন, কী চাও?
আবু জুনায়েদ তার হাত দুটি ধরে বললেন, বানু শোনো একটা অসম্ভব সুখের সংবাদ। জানো আমেরিকার একান্নটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে একটি করে বক্তৃতা দিতে হবে। প্রতি বক্তৃতায় চার হাজার ডলার সম্মানী পাব। সব মিলিয়ে হবে দু লক্ষ চার হাজার ডলার। আমাদের টাকায় তার পরিমাণ বিরাশি লক্ষ। এত টাকা আমাদের হবে।
নুরুন্নাহার বানু পূর্বের মতো ক্ষীণ স্বরে বললেন, খুবই উত্তম সংবাদ। তুমি বিরাশি লক্ষ টাকা পাবে। এই টাকাটা তোমার দরকার হবে। গাভী প্রেমিকার কবরের উপর তুমি তো তাজমহল বানাবে। শুনে রাখো তোমার প্রেমিকাটি আজ রাতে কিংবা কাল সকালে মারা যাবে এবং আমিই ওকে খুন করেছি।
রচনাকাল : ডিসেম্বর ১৯৯৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫