আবু জুনায়েদকে কখন থেকে পায়খানা শুরু হলো, নিতান্ত অনিচ্ছায়ও সে কথা শুনতে হলো। কাঞ্চন মানে যে মানুষটি দেখাশুনা করে থাকে হাসপাতালে বউকে দেখিয়ে বাসায় রেখে সরাসরি গোয়ালঘরে চলে এল। এসেই দেখে গরুটি পাতলা পায়খানা করছে আর বড় বড় করে কাশছে এবং কাশির সঙ্গে ফেনা আসছে। রকমসকম দেখে কাঞ্চন খুব ভয় পেয়ে যায়। বাড়িতে বেগম সাহেবাকে খবর দিতে গিয়ে দেখে বেগম সাহেবা নেই। উপায়ান্তর না দেখে তবারক সাহেবের বাড়িতে টেলিফোন করে। তার বাড়ি থেকে জানানো হয় তিনি মতিঝিলের অফিসে আছেন । কাঞ্চন তিল পরিমাণ বিলম্ব না করে তবারক সাহেবের অফিসে গিয়ে জানায় যে গরুটি পাতলা পায়খানা করছে এবং মুখ দিয়ে ফেনা ভাঙছে। তবারক সাহেব অফিসে একজন সাহেবের সঙ্গে বসে চা খেতে খেতে আলাপ করছিলেন। ঘটনা শুনে তবারক সাহেব বিদেশী ভদ্রলোককে সঙ্গে সঙ্গেই বললেন,
এক্সকিউজ মি । ইউ হ্যাভ টু অ্যাপোলোজাইস মি। দেয়ার ইজ অ্যান অ্যাকসিডেন্ট, আই হ্যাভ টু রাশ রাইট নাউ।
তারপর তবারক সাহেব পশুহাসপাতালে গিয়ে নিজের গাড়িতে ভেটেরনারী সার্জন নূরুল হুদা সাহেবকে উঠিয়ে নিয়ে উপাচার্য ভবনে চলে আসেন। ভেটেরনারি সার্জন গরুকে ট্যাবলেট খাওয়াতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু গরুটি কিছু গিলছে না। কী রোগ তিনি ধরতে পারছেন না তথাপি অনুমানের উপর নির্ভর করে দু দুটো ইঞ্জেকশন দিয়েছেন, পায়খানা বন্ধ হয়নি। শেখ তবারক আলী তারপর সাভার সরকারি ডেয়ারি ফার্মে যে সুইডিশ পশু বিশেষজ্ঞ ভদ্রলোক আছেন তাকে আনিয়েছেন। ড. জারনট জানালেন ট্রপিক্যাল ক্যাটেল ডিজিজ সম্বন্ধে তার যতদূর বিদ্যা এরকম কোনো রোগের নাম কখনো শোনেননি। সুতরাং তিনিও বলতে পারেন না আসল রোগটা কী। আকস্মিক কোনো বিষাক্ত বস্তু খাওয়ার কারণেই হয়তো এরকম ঘটতে পারে। স্টম্যাক এক্সরে করালে আসল কারণটা জানা যেত। কিন্তু এদেশে ক্যাটেল এক্সরে করার কোনো প্ল্যান্ট নেই। সুতরাং তিনি খুবই দুঃখিত, কিছু করতে পারবেন মনে হয় না।
আবু জুনায়েদকে ধরে ধরে উপরে উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি শুনলেন নুরুন্নাহার বানুকে এই সবেমাত্র ডাক্তার ঘুম পাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তার শরীর থেকে। একরকম জোর করেই কোট প্যান্ট খুলে তাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। তিনি ঘোষণা করলেন, কিছু খাবেন না। আবারও জোর করে তাকে দুধ খাওয়ানো হলো। চাপে পড়ে সামান্য ভাতও তিনি খেলেন। সকলে ধরাধরি করে তাকে শোয়ার ঘরের বাইরে একটি খাটে শুইয়ে দিল। কারণ, শোয়ার ঘরে নুরুন্নাহার বানু অচেতন হয়ে পড়ে আছেন এবং তাকে বড় বোন দেখাশোনা করছেন। আবু জুনায়েদ অসুস্থ স্ত্রী এবং গরুর কথা ভুলে পরেরদিন বেলা আটটা পর্যন্ত ঘুমোলেন।
মার্চ মাসের এগার তারিখ বেলা সোয়া নটার সময়ে একটি পশ্চিমা দেশের একজন রাষ্ট্রদূত আবু জুনায়েদের সঙ্গে তার অফিসে এসে দেখা করবেন, এরকম অ্যাপয়েন্টম্যান্ট করা হয়েছিল। ভদ্রলোক এদেশে নতুন এসেছেন। মাত্র দুসপ্তাহ হলো রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। এ পর্যায়ে তিনি মহানগরীর সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আবু জুনায়েদ খুশি হয়েছিলেন। বিদেশীদের সঙ্গে তিনি চমৎকার বাতচিত করতে পারেন। অথচ এখানকার নাক উঁচু কালো সাহেবেরা রটিয়েছেন আবু জুনায়েদের ইংরাজি ভুল, বাংলা অশুদ্ধ।
তার ব্যক্তিগত সহকারী ফোন করে জানালেন রাষ্ট্রদূত সাহেব এসে তার জন্য অপেক্ষা করছেন। আবু জুনায়েদকে দাড়িটা কাটতে হলো। গত কালের স্যুটটা পরতে গিয়ে দেখলেন গরুর গোবরের ছিটা লেগে আছে সর্বত্র। আলমারি খুলে তাই নতুন স্যুট বের করে পরতে হলো। অফিসে গিয়ে দেখেন রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোক অফিসে বসে বসে অপেক্ষা করছেন। আবু জুনায়েদ হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন :
-ইউর এক্সেলেন্সি আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি, দেয়ার ইজ অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট ইন মাই হাউস।
রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোক উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বললেন,
-সো ইউর ওয়াইফ ইজ সিক, ইজ সি?
-ইউর অ্যাক্সেলেন্সি নট এক্সাক্টলি মাই ওয়াইফ, বাট মাই কাউ।
-হোয়াট? কাউ? সো ইউ আর কিপিং এ কাউ?
-ইয়েস ইউর এক্সেলেন্সি, ভেরি গুড, ভেরি বিউটিফুল কাউ এবং ইটস মাদার ইজ এ সুইডিশ কাউ, এ কাউ অব ইউর বিউটিফুল কান্ট্রি। দ্যাট কাউ ইজ সিক। রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোক একটু অবাক হয়ে গেলেন। কিছু জিনিস জানার জন্য রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোকের কৌতুকের জন্ম নিল । তিনি বললেন,
-মি: ভাইস চ্যান্সেলর আই হ্যাভ টু কুয়োরিস। দ্য ফার্স্ট ওয়ান ইজ আই হ্যাড দ্য আইডিয়া দ্যাট হিন্দুস ওঅরশিপ কাউস। বাট মুসলিমস আর বিফ ইটার নেশন লাইক আস, ইজ নট দ্যাট?
আবু জুনায়েদ বললেন,
-ইউর এক্সেলেন্সি ইজ পারফেক্টলি রাইট হিস ডু ওঅরশিপ কাউ এন্ড উই পিপল ইট বীফ। বাট ইট ইজ অলসো টু উই লাভ কাউ ভেরি মাচ।
রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোক হাসি সংবরণ করে বললেন,
-নাউ মাই সেকেন্ড কুয়েরি উড বি হাউ ডু ইউ রিলেট কাউ কিপিং এন্ড য়ুনিভার্সিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন?
-ইউর এক্সেলেন্সি। আই হ্যাভ মাই ওন ইনডিভিজুয়াল মেথড টু ম্যানেজ বোথ।
রাষ্ট্রদূত ভদ্রলোক বললেন,
-থ্যাঙ্ক ব্যু মি: ভাইস চ্যান্সেলর, আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি এন্ড গ্ল্যাড টু মিট ইউ।