-হযরত আমি কি আপনার সঙ্গে আসতে পারি? আপনার দরবারে আমি পবিত্র ইসলামী উম্মাহর পক্ষ থেকে কিছু আরজি পেশ করতে চাই। আবু জুনায়েদ মাওলানা আবদুর রহমান তালিবকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন।
উপাচার্য ভবনে আসার পর মাওলানা আবদুর রহমান তালিব জানালেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের শত্রুরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তিনি যদি একটা শক্ত অবস্থান না নেন ইসলামের জানি দুশমনেরা মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করতে অধিক তৎপর হয়ে উঠবে।
ইসলামের ক্ষতি করার জন্য ইসলাম বিরোধীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে, সে বিষয়ে আবু জুনায়েদ কিছু জানতেন না। তিনি একটু বিশদ করতে বললেন। উত্তরে মাওলানা সাহেব জানালেন রামনাথ ছাত্রাবাসে হিন্দুরা বিবেকানন্দ না কোন একজন হিন্দুর মূর্তি তৈরি করেছে। এ ধরনের কাজ ব্রিটিশ আমলে সম্ভব হয়নি, পাকিস্তান আমলে সম্ভব হয়নি। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে যেখানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম বিবেকানন্দ বাবুর পাথুরে মূর্তি বহাল তবিয়তে তৈরি হয়ে গেছে। এটা কি একটা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ নয়?
আবু জুনায়েদ জানালেন, বিবেকানন্দের মূর্তিটা তিনিই উদ্বোধন করেছেন। মাওলানা সাহেব যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, এসব কিছুই তার মনে আসেনি। আর মূর্তিটা তৈরি করেছে একজন মুসলমান মহিলা, ভাস্কর। এতে দোষের কী থাকতে পারে, তিনি ভেবে পান না।
মাওলানা সাহেব জবাবে জানালেন–
-আপনি খুব সরল মানুষ। মালাউনদের চক্রান্তটি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। একটি মুসলিম মহিলাকে দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করিয়ে আপনাকে দিয়ে উদ্বোধন করালো, এখানেই চক্রান্তের খেলায় আমরা হেরে গেলাম। মূর্তি নির্মাণের টাকাটি দিয়েছে গোপনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা এতই চালাক যে, মুসলমানদের দিয়ে তাদের মূর্তি নির্মাণের রাজমিস্ত্রীর কাজটি করিয়েছে এবং আপনাকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে মূর্তিটা আইনগতভাবে সিদ্ধ করে নিল। পূর্বে কখনো মালাউনেরা মুসলমানদের এভাবে ব্যবহার করেছে আমার জানা নেই। তাদের এক দাঁতের বুদ্ধি যদি থাকত কওমের কি এত দুর্দশা হয়?
আবু জুনায়েদ দুচোখ বন্ধ করে কিছু একটা চিন্তা করতে চেষ্টা করলেন। তার মনে হলো মাওলানা আবদুর রহমান তালিবের কথার মধ্যে কিছু পরিমাণ হলেও সত্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তিনি বললেন :
কাজটা তো করা হয়ে গেছে। এখন কি কিছু করার উপায় আছে? আপনারা এ কথা আগে বলেননি কেন?
মাওলানা তালিব সাহেব জানালেন,
-আগে তো আমরা জানতাম না আপনার ঈমান এমন সাচ্চা। আমরা ধরে নিয়েছিলাম আপনি দিলরুবা খানমের লোক। ওই বেটির সঙ্গে মালাউনদের গলায় গলায় ভাব।
-এখন কী করতে হবে সেটা বলুন, যা হবার তো হয়ে গেছে। বললেন আবু জুনায়েদ।
মাওলানা সাহেব সাড়া দিয়ে জানালেন-আপনি যদি একটা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন, আমরা ইসলামের জন্য অনেক কিছু করতে পারি।
সে অনেক কিছুর মধ্যে কোন্ কাজগুলো পড়ে? জানতে চাইলেন আবু জুনায়েদ।
মাওলানা আবদুর রহমান তালিব ফিসফিস করে বললেন-হাবিবুল্লাহ মুসলিম ছাত্রাবাস এবং ফরমানুল হক মুসলিম ছাত্রাবাস দুটো থেকে একাত্তর সালের পর মুসলিম নাম বাদ দেয়া হয়েছে, আমরা মুসলিম নাম যোগ করার আন্দোলন চালাব এবং দাবি তুলব বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ইসলামসম্মত নয়, সেটা পাল্টাতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম পাল্টাতে বলছেন আপনারা, সেটা কি সম্ভব। মাওলানার প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
মাওলানা জবাবে বললেন :
-কেন সম্ভব নয়, বিবেকানন্দ বাবুর মূর্তি যদি তৈরি হতে পারে, মনোগ্রাম পাল্টানো যাবে না কেন? খোঁজ করে দেখুন ভারতবর্ষে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিবেকানন্দের মূর্তি বসানো হয়নি। অথচ আপনারা এখানে পূজা আরম্ভ করে দিয়েছেন।
এবার জুনায়েদের মুখে ভয়ার্ত ভাব ফুটে উঠল। যথাসম্ভব কণ্ঠস্বর সংযত করে বললেন–
-আমি কিন্তু এসবের মধ্যে থাকতে পারব না।
মাওলানা আবদুর রহমান কণ্ঠে দরদ ঢেলে বললেন :
আমরা আপনার অবস্থা বুঝি। আপনাকে বিপদে ফেলার কোনো খায়েশ আমাদের নেই। কিন্তু আমরা যখন কোনো আন্দোলন শুরু করব আপনি সমর্থন না করতে পারেন, কিন্তু বাধা দেবেন না।
আবু জুনায়েদ মাথা নাড়লেন। এর অর্থ হা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
মাওলানা আবদুর রহমান তালিব উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়লেন।
–আপনার কাছে আমি আরো দুটো আর্জি পেশ করতে চাই। আবু জুনায়েদ বললেন, বলুন। মাওলানা সাহেব জানালেন, কলাভবনের ছাদে গুণ্ডা বদমায়েশরা নানা জায়গা থেকে মেয়েছেলে নিয়ে সারা রাত মৌজ করে কাটায়। দারোয়ানরা কোনো বাধাই দেয় না। বরঞ্চ টাকা-পয়সা নিয়ে বদমায়েশদের সহযোগিতা করে। ও জিনিসটি আপনাকে বন্ধ করতে হবে।
আবু জুনায়েদ বললেন :
দারোয়ানরা যদি এই কাণ্ড করে আমি কী করে বাধা দিতে পারি।
–মাঝে-মাঝে এক আধবার আপনি নিজে গিয়ে চেক করেন, ভয় পেয়ে দারোয়ানরা বন্ধ করে দেবে। বললেন মাওলানা তালিব।
-সেটা কি উপাচার্যের পক্ষে সম্ভব? বললেন আবু জুনায়েদ।
-কেন সম্ভব নয়? ইসলামের খলিফারা এভাবেই তো খারাপ কাজের সংবাদ নিতেন। মাওলানা আবদুর রহমান আঙুলে দাড়ি নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন :
উপাচার্য ভবনের পশ্চিম দিকে যে রাস্তাটা আছে তার ডানে বামে রজবতী মহিলারা তাদের হায়েজ নেফাজের পুরিন্দাগুলো ফেলে দিয়ে যায়। এটা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। এই পথ দিয়ে যারাই যাওয়া আসা করে তাদের কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে সারা শরীর নাপাক হয়ে যায়। গোটা এলাকার পবিত্রতা বজায় রাখতে হলে রাস্তার পাশে পুরিন্দাটি ফেলার কাজ বন্ধ করতে হবে।