অর্থাৎ?
অর্থাৎ, মেয়েরা কাপুরুষ পুরুষকে ভালোবাসতে পারে না। বরং বর্বরকে ভালোবাসবে, অসভ্যকে ভালোবাসবে, তবু তোমার মতো কাপুরুষকে নয়। যাক, তুমি কলকাতা থেকে বিদায় হচ্ছ কবে?
ওই তো, ওইখানেই তো মুশকিল। অফিস তো ছাড়তে চাইছে না।
তুমি ছাড়বে।
বলছে মোটা ইনক্রিমেন্ট দেবে।
কেন, লোক আর জুটছে না তাদের? দেখছি তো তাই।
অসীম বিরক্ত ভাবে বলে, কিন্তু এখান থেকে বিদেয় না হলে বউকে তো তুমি নিয়ে যেতে পারছ না?
সেই তো চিন্তা।
কুমকুম বলতে যাচ্ছিল, চিন্তাটা কিছু আগে হলে হত না? এখন—
বলা হল না।
ইলা এসে হাজির হল।
ইলার মুখে-চোখে প্রসাধনের আভাস। আর মুখের চেহারা কৌতুকের।
কুমকুম হই হই করে ওঠে, যাক, বেঁচে আছিস তাহলে? উঃ আমি তো ভাবলাম—
কি ভাবলি?
না, মানে ভাবিনি কিছু। কি ভাবা উচিত ছিল তাই ভাবছিলাম।
চমৎকার! তা, এতক্ষণ কিসের মজলিশ হচ্ছিল?
তোর নিন্দের। তুই যা লোমহর্ষণ কাণ্ড করেছিস পরশু–
পরশু? ইলা বলে, পরশু আমি কিছু লোমহর্ষণ কাণ্ড করিনি। তবে হ্যাঁ, আজ একটা করে এলাম বলে বটে। মিটিমিটি হাসতে থাকে ইলা।
জ্বালাবে। খুব জ্বালাবে ইলা সম্বুদ্ধকে। শোধ নেবে সে-রাত্রের।
অসীম বলে, ব্যাপারটা কি? ঘটনাটা প্রকাশ করে এলে?
উঁহু। সম্পূর্ণ উলটো। কনে দেখা দিয়ে এলাম।
কি? কি দিয়ে এলে? সম্বুদ্ধ বলে ওঠে।
ইলা হেসে হেসে বলে, কনে দেখা দিয়ে এলাম। বাবার কনিষ্ঠা কন্যার বিয়ের জন্যে বাবা অবশ্যই ভাবিত হচ্ছেন, এবং বাবার জ্যেষ্ঠা কন্যা অবশ্যই তাতে সাহায্য করবেন। যোগ ফল এই। পাত্র আর পাত্রের বাবা দুজনে এসে দেখে গেলেন। আমিও গুড গার্লের মতো তাদের চা দিলাম, খাবার দিলাম, দু-চারটে প্রশ্নেরও যে উত্তর দিলাম না তা নয়। তারা তো একেবারে বিগলিত! বাসায় ফিরে না মরে থাকে।
কুমকুম রুদ্ধকণ্ঠে বলে, ঠাট্টা করছিস না সত্যি বলছিস?
বাঃ, খামোকা এমন অদ্ভুত ঠাট্টা পাবই বা কোথায়?
এসবের বিপদটা বুঝছিস না? এরপর আর এগোতে গেলে—
তা, আর এগোনো চলবে না সেটাই বলতে এলাম। এখন ও বলুক কি করবে?
সম্বুদ্ধ এতক্ষণ সিগারেট ধ্বংসাচ্ছিল, আর বোধ করি ভিতরে ভিতরে নিজেও ধ্বংস হচ্ছিল। এবার ব্যঙ্গ তিক্তকণ্ঠে বলে, আমাকে কি করতে বলা হচ্ছে? দাবি ছেড়ে দিতে?
থাম্ বুদ্ধু! অসীম বলে, ওর অবস্থাটা বুঝছিস না? বাড়িতে যদিও কিছু না বলে, বা বলতে না পায়, স্বভাবতই এ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কেলেঙ্কারি আরও কতদূর গড়াবে তাও বোঝ! যা এইবেলা তুই ওর বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলগে!
সম্বুদ্ধ তীক্ষ্ণ হয়।
বলে, ইলার মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না খুব একটা চিন্তাকাতর। বরং যেন বেশ মজা পেয়েছে মনে হচ্ছে। পাত্রটি বোধ হয় খুব সুকান্তি?
ইলা ভালোমানুষের গলায় বলে, তা সত্যি ফার্স্টক্লাস চেহারা। কথাবার্তা? অতি চমৎকার। বিদেশ-ফেরত ইঞ্জিনিয়ার, বিয়ে করে শীঘ্রই আবার বউ নিয়ে বিদেশে যাবে। অবস্থা ভালো, শিক্ষিত পরিবার, মা-বাপ আছেন, কলকাতায় বাড়ি, গাড়ি–
ইলা যেন আর কাকে পাত্রের সন্ধান দিচ্ছে। কথা শেষ করতে পারে না।
সমুদ্ধ রূঢ় গলায় বলে, খুব আপশোস হচ্ছে এখন তাই না?
ইলা আরও অমায়িক গলায় বলে, খু-ব।
দুঃখের বিষয়, এক্ষুনি ডাইভোর্স কেস আনতে পারবে না–
সেই তো দুঃখ
থাম ইলা, কুমকুম ঝঙ্কার দেয়, এখন বসল ইয়ার্কি মারতে। ভেবে দেখছিস না আর বেশি গড়ালে তার বাবার মুখটা কি রকম পুড়বে? পছন্দ যখন হয়েছে তখন–
পছন্দ?
ইলা হেসে উঠে বলে, আজ তো লোকটা রাতে ঘুমোতেই পারবে না।
হু। তা, লোকটার নামটা কি?
ইন্দ্রনীল। ইন্দ্রনীল মুখার্জী।
মুখার্জী।
সম্বুদ্ধ ঘোষ যেন ক্রমশই হেরে যাচ্ছে। তার মুখে সেই পরাজিতের কালো ছাপ। তার গলায় ঈর্ষার কুটিলতা।
থাকে কোথায়?
সর্বনাশ? ওইটি বলছি না। কে জানে গুণ্ডা লাগিয়ে ফিনিশ করবার তাল করবে কি না।
ঝগড়া রাখ ইলা।
কুমকুম সামলায়। সামলেই থাকে সখীরা। শ্রীরাধিকার আমল থেকে।
পরামর্শের কথা পাড়ে সে। এবং অনেক বাদ-বিতণ্ডার পর ঠিক হয় কালই সম্বুদ্ধ ইলাদের বাড়ি যাক। পরিচয় দিক। ইলার বাবা যদি মেনে নেন ব্যাপারটা উত্তম, আর যদি অপমান করেন ইলাকে, নিয়ে চলে আসবে সম্বুদ্ধ। তারপর যা হয় হবে। অসীমের বাড়ি রয়েছে, কুমকুমের বাড়ি রয়েছে। অবশ্য এ-সব ফ্যাসাদ কারও অভিভাবক-কুলই পছন্দ করেন না, তব তাড়িয়ে দিতে তো পারবেন না।
আর সম্বুদ্ধর যদি এখানের অফিসেই উন্নতি হয়, থেকে যাক। খুঁজুক একটা ফ্ল্যাট। মা-বাপের নাকের সামনে সুন্দর করে সংসার করুক ইলা।
কাল? কাল থাক।
ইলাই বাধা দেয়।
বলে, কাল নয়। দেখি চেষ্টা করে যদি জমিটা কিঞ্চিৎ প্রস্তুত করে রাখতে পারি।
যাই করো দেরি করো না অসীম বলে, ব্যাপারটা ছেলেখেলা নয়। এর সঙ্গে তোমার বাবার মান-সম্মান জড়িত।
.
ঠিক এই কথাই ঘণ্টা দুই পরে নীলা বলে, সব কিছুই ছেলেখেলা নয় ইলা, মনে রাখিস এর সঙ্গে তোর জামাইবাবুর মান-সম্মান জড়িত। উনি উপযাচক হয়ে তাদের বলেছেন, এখন আবার গিয়ে বলবেন, আমার শালী এখন বিয়ে করতে রাজী নয়। তুই পাগল হতে পারিস, উনি তো তা হতে পারেন না।
বাঃ, পড়া শেষ না করে বিয়ে করব না খুব একটা অযুক্তির কথা বুঝি?
খুব। ওটা এমন কিছু বাধা নয়। তাছাড়া এত যদি ইয়ে, আগে কেন বললি না?