হোয়াই? হোয়াটস্ দা ম্যাটার?
আমেদ হেসে বলল, নাথিং অ্যাট অল! লেট আস হ্যাভ দি প্রিভিলেজ অব অফারিং ইউ এ কাপ অব টি!
সারা হাততালি দিয়ে বললেন, ও নাইস আই ওজ রিয়ালি ফিলিং লাইক দ্যাট!
মিরান্দা রেস্তোরাঁর একটি কেবিনে গিয়ে বসি চারজন, মুজিব আসেনি সত্যি ওর দুর্ভাগ্য!
চা খেতে এসে বড়জোর টা পর্যন্ত গড়ানো উচিত ছিল কিন্তু ওদের কাণ্ডজ্ঞান অতুলনীয়। রায়হান বলল, কিছু খেয়েই ফেলা যাক্ জাহেদ। পাঁচ শ টাকা পেলি কুড়ি টাকাও বন্ধুদের জন্য খরচ করবিনে?
অচেনা মেয়ের সামনে শুকনো হাসি হেসে নীরব হয়ে থাকা ছাড়া আমার উপায় নেই। এটা নিঃসন্দেহে সম্মতির লক্ষণ। রায়হান বান্ধবীকে শুধাল, ওয়েস্টার্ন অর ওরিয়েন্টাল?
সাট্টেনলি ওরিয়েন্টাল! ওয়েস্টার্ন পিপল আর গুড বাট নট দেয়ার ফুড। কথায় এমন সুন্দর একটা মিল দিতে পেরে সারা নিজেই উল্লাসধ্বনি করে ওঠেন।
খাবার এলো জমজমাট ডিস্।
একটা প্লেট নিতে নিতে রায়হান বলল, যাই বলুন উই আর ভেরি মাচ ইনডেটেড টু দি মোঙ্গলস। দে ওয়্যার দ্য রিয়্যাল আর্কিটেক্টস অব দি কান্ট্রি। দে নিউ হাউ টু এনজয় লাইফ। ওরিয়েন্টাল ডিস রিয়্যালি মিনস মোঙ্গল ডিস। অ্যাম আই রং।
সাট্টেনলি নট, সারা আঙুলে একটু চাটনি নিয়ে জিভে লাগান এরপর জিভটা ঠোঁটের সঙ্গে চাটতে চাটতে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, ডিল্লিশাস ডিল্লিশাস!
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে সংকট অবস্থা। চারজনেই সিগারেট ধরাই। কিন্তু এরপর কি? চা কফি কোক অথবা অন্যকিছু? এক কাপ করে কফি খেতে আপত্তি নেই কিন্তু তবু কি যেন বাকি রয়ে গেল। রায়হান গলাখাকারী দেয়, উসখুস করেন সারা। আমেদ বানায় ধোয়ার রিং!
ওদের মানসিক অবস্থার মর্ম অনুধাবন করতে পেরে বললাম, আমি এখন উঠি রায়হান। আজ সন্ধ্যায় চলে যাচ্ছি, কিছু কেনাকাটা বাকী।
চলে যাচ্ছি মানে! ওরা বিস্মিত হলো যেন।
সত্যি চলে যাচ্ছি। আর তো কোনো কাজ নেই। ভালো লাগছে না মোটেই।
তুই একটা আস্ত-রায়হান গাধা কথাটা উচ্চারণ করল না।
যাই বলিস মেনে নিতে রাজি। সিট বুক হয়ে গেছে চলে যেতে হবেই। বেয়ারা পর্দার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল তাকে বললাম, বিল লাও।
সারা সিগারেটটা এসট্রেতে পিষতে পিষতে বললেন, দেন উই আর ডিপার্টিং টু ডে?
ইয়েস ম্যাডাম আই কান্ট হেলপ ইট। বিল চুকিয়ে দেবার পর সকলের সঙ্গে করমর্দন করে সারাকে বললাম, আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হলাম। বাংলাদেশে যাচ্ছেন তো আপনি? ঢাকায় নিশ্চয়ই দেখা হবে।
আই অলসো হোপ সো। ডোন্ট ফরগেট মি প্লিজ।
নিশ্চয়ই না। নিশ্চয়ই না। আমি একটু হেসে বললাম, একবার দেখলে আপনাকে ভোলা অসম্ভব!
ইউ আর সো নাইস মি. জাহেদ। আই সুড হ্যাভ মোর টাইম উইথ ইউ! এনিওয়ে লেট আস হোপ ফরদি ফিউচার!
যাবার সময়টা ঘনিয়ে এলো তাড়াতাড়ি। ভেবেছিলাম একবার দেখা করে যাব কিন্তু খালার ওখানে যাওয়ার মতো একটু ফাঁকও পাওয়া গেল না। সে জন্য অবশ্য আফসোেস নেই। গেলে ভদ্রতাটুকু রক্ষা হতো কিন্তু তার গুরুত্বইবা কত। নিজেদের নিয়মে ওরা চলেছেন যেখানে থেকে এসব চুটকি ব্যাপারের ধার ধারার প্রয়োজন অল্প।
এয়ারপোর্টে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। যা যা সব পেছনে পড়ে থাক্। বন্ধুরা বলেছিল। সি অফ করতে আসবে, না এলেই বরং ভালো।
প্যাসেঞ্জারস বাউন্ড টু ঢাকা এটেনশন প্লিজ। মাইকে এয়ার হোস্টেসের কণ্ঠস্বরে চমকে উঠি। তাহলে ওড়বার সময় হলো?
সুপার কনস্টেলেশন বিমানের ইঞ্জিন চলছে, যেন ঝড়ের শব্দ। আমরা এখান যাচ্ছি সেই দিকে, দেশি বিদেশি বহুযাত্রী কিন্তু কিছুটা অগ্রসর হতেই দৌড়ে এলো চারজন আমার তিন বন্ধু এবং সেই মেয়েটি। ওরা মৌতাত করে ফিরেছে চেহারায় তার স্পষ্ট ছাপ।
আমি দাঁড়ালাম মাত্র কিন্তু আলাপ করার সময় ছিল না। সারা একটু এগিয়ে এসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, সাতদিন পর আমি যাচ্ছি। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়া চাই!
ওর বাংলাকে ঠেকা দেয়ার জন্যই আমি এবার পুরো ইংরেজিতে হাত নেড়ে বললাম, ও সাট্রেনলি! মোস্ট ওয়েলকাম অ্যাট মাই হোম! টাটা!
ভেতরে গিয়ে সব যাত্রী ঠিক হয়ে বসলে পূর্ণবেগে প্রপেলার ঘুরতে লাগল এরপর প্লেন রানওয়েতে ছুটে গিয়ে আকাশে উড়লে এক বিমিশ্রিত আশ্চর্য অনুভূতিতে ভেতরটা অনুরণিত হতে থাকে আমার। তারায় ভরা ওপরে গভীর চিত্রিত আকাশ, নিচে মাটির পৃথিবী, মাঝে মাঝে ছোটো লালচে আলো। কিন্তু অনেক চেষ্টায় পেছনে ফিরে চাইলে নিমেষে চক্ষু স্থির হয়ে যায়। আলো আলো, লাল নীল সবুজ আলো। প্রাচ্যের সিংহদরোজা করাচী নগরীর অফুরন্ত আলোর নৈবেদ্য প্রতিমুহূর্তে ঝিকমিক করছে, ঠিকরাচ্ছে। ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের যুগল সমারোহ।
কিন্তু এই আলোককেও আমি পেছনে ফেলে যাচ্ছি। হয়তো আসবো, না হয় আর কোনদিন হয়তো আসব না। আসি বা না আসি দুইই এক সমান। কারণ আমার চোখে দূর সবুজের মায়া, মনজুড়ে শ্যামল মাটির স্বপ্ন।
বাইরে চেয়ে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম, কিন্তু বিপদ প্লেন ঘন ঘন বাষ্প দিতে শুরু করল। এবং আধঘণ্টার মধ্যে জেগে উঠল আবার এই আলোকমালা। আমরা সতর্ক হয়ে যাই।
বিমানটি আবার স্থির হয়ে দাঁড়াবার পর নেমে এসে জানতে পারলাম ইঞ্জিনে গোলমাল দেখা দেওয়ায় ফিরে এসেছে।