গ্রিকেরা ভয়ানক রকমে তাদেরকে আক্রমণ করলো। একে ক্লান্ত শরীর, তার ওপর গ্রিকবীরগণের এই অতর্কিত আক্রমণে ত্রয়বাসীরা একেবারে নিরুপায় হয়ে পড়লো। শহরের নারী ও শিশুদের মাঝে একটা ভয়ানক আতঙ্কের সঞ্চার হল–যেদিকে পারলো, পালিয়ে যেতে লাগলো।
এদিকে সেই হাত-পা বাঁধা লোকটি দিলে পাহাড়ের চূড়ায় আগুন ধরিয়ে। দুপুর রোদের খরতাপে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।
সমুদ্রের মাঝে জাহাজের উপর গ্রিক সৈন্যগণ এই সঙ্কেতের জন্যেই অপেক্ষা করছিল, সঙ্কেত পেয়েই তারা ছোট ছোট নৌকায় তীরবেগে কূলের দিকে ছুটে এলো।
প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই তারা ত্রয় শহরের প্রবেশ দুয়ার আক্রমণ করলো। ভেতর বাহির দুই দিক থেকেই গ্রিকদের আক্রমণ ভয়ানক রকমে চলতে লাগলো।
পেরিস হেলেনকে ফেলে ঢাল তলোয়ার নিয়ে নিচে নেমে এলো। কিন্তু তখন শহরের সকলেই প্রাণভয়ে পলায়ন শুরু করেছে। সৈন্যরাও অস্ত্র ছেড়ে অলি গলিতে ঢুকে পড়েছে। পেরিসের গায়ের রক্ত হিম হয়ে এসেছে–কী ভীষণ পাপ সে করেছে এই কথা মনে করে তার চোখ ফেটে পানি এলো। হায় কেন সে রূপের নেশায় পাগল হয়েছিলো–হায়, তার পরিণাম কী হল–দেশ, রাজ্য, মান-সম্মান, আত্মীয়-স্বজন, অর্থ-সম্পদ সব ধ্বংস হল।
প্রাসাদ দুয়ারে দাঁড়িয়ে পেরিস এই কথা ভাবছে, এমন সময় একটা তীর এসে তার কলিজায় বিদ্ধ হল। সঙ্গে সঙ্গে গ্রিক সৈন্যেরা রাজার বাড়ির মধ্যে জয়ধ্বনি করতে করতে প্রবেশ করলে।
মেনেলাস যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হেলেনের সন্ধানে ছুটলেন। হেলেন দারুণ আতঙ্কে ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন–স্বামীকে দেখেই তিনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন; মেনেলাস ধনুক উঠিয়ে বললেন–এক পা এগুবে না।
হেলেন চুপ করে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। মেনেলাস ইচ্ছা করেছিলেন–হেলেনকে মেরে ফেলতে, কিন্তু পারলেন না! হাত তার অবশ হয়ে গেল।
হেলেন বললেন–অপরাধীকে ক্ষমা কর। মরতে আমরা দুঃখ নেই, কিন্তু আমি যে। পাপ করেছি তার ক্ষমা চাই। মেনেলাস হাত ধরে পত্নীকে নামিয়ে আনলেন।
.
এইভাবে রানী হেলেন উদ্ধার হল। মেনেলাস স্পার্থা শহরে পত্নীকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। এর পর বহু বছর তারা সুখে বাস করেছিলেন।
বাড়ির পথে ওদেসিজকে অনেক বিপদে পড়তে হয়েছিল। বহু বৎসর ধরে তিনি পথে পথে ঘুরেছিলেন–কন্যার হত্যার জন্যে এগামেমনকে তাঁর পত্নী বিষ খাইয়েছিলেন, এইসব এবং রানী পানীলোপীর কথা আর এক দিন শুনাবো।