১ম–বাড়ির কথা যিনি তিনি অনেক সময় ভারী অত্যাচারী হন।
২য়–হাঁ হন বই কি! বস্তুত কর্তা যদি বাড়ির সকলের প্রতি অত্যাচারী হন, তবে তা বড়ই অন্যায়। দিবারাত্র কচকচি, কর্তার জ্বালায় বাড়ির সবাই তটস্থ। এরূপ অত্যাচারীর মৃত্যু বাইরে না হোক মনে মনে সবাই ইচ্ছা করেন। পত্নীর সঙ্গে, সেয়ানা-পুত্র-কন্যা ও পুত্রবধূদের সঙ্গে সব সময় ভদ্র ব্যবহার করা উচিত। অশ্লীল বাক্য, গালাগালি ভদ্র পরিবারের লক্ষণ নহে।
১ম–কিন্তু কর্তার ভুল কে সংশোধন করবে?
২য়–এর কোনো প্রতিকার নাই। এরূপ পরিবার অতি শীঘ্র ধ্বংস হবে। পুত্রের বিদ্রোহী হয়–তাদের জীবন শান্তিহীন ও দুঃখময় হয়–সকল দিক অন্ধকার হয়ে ওঠে।
১ম–পরিবারে অশান্তির কারণ অনেকটা অভাব নয় কি?
২য়–জগতে আজ মানুষের নুতন অভাব হচ্ছে না। চিরদিন মনুষ্য সমাজে এইটি হয়ে এসেছে-তার মীমাংসাও হয়েছে। মোটের উপর অশান্তি, মারামারি দ্বারা কোনোই ফল হয় না। ভদ্রতা ও সহানুভূতির দ্বারা সর্বত্রই সুফল হয়।
১ম–পরিবারের মধ্যে ধর্মচর্চার অভাব আমি অনুভব করেছি।
২য়–হা, আমাদের পরিবারের এ একটা মস্ত অভাব। সকল বাক্যের মধ্যে খোদার বাক্য শ্রেষ্ঠ। সকল বাক্য অপেক্ষা খোদার বাক্য অধিক সারময়। খোদার কালামে মানুষের জন্য যে কল্যাণ নিহিত আছে–তা বুঝবার কোনো চেষ্টা বা সুবিধা নাই-ফলে মুসলমান পরিবার দিন দিন পুণ্য ব শূন্য, সত্য-বর্জিত হয়ে পড়ছে।
এটা সমাজের পক্ষে বড়ই ভয়ানক কথা। ফলে সমাজস্থ লোকগুলি দিন দিন অন্ধ, দুঃখী এবং শান্তি-সুখ শূন্য হচ্ছে। মানুষের মন দিন দিন মঙ্গলের পথে অগ্রসর হতে না পেরে, দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। নামাজ-রোজার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি সন্ধ্যায় বা প্রত্যহ কোনো এক নির্দিষ্ট সময়ে পরিবারের সকলে একস্থানে সমবেত হবে, মাতৃভাষায় কোরান, হাদীস, মহাপুরুষদের জীবনী আলোচনা করেন, তাহলে বড়ই ভালো হয়।
১ম–এতে সংসারের কাজের ক্ষতি হয় নাকি?
২য়–অক্ষয়, অনন্ত জীবনের পারের যোগা না করে, জাগতিক দুদিনের শান্তি লাভের জন্য মনুষ্য কত লালায়িত। ধিক মনুষ্যকে! আত্মার মঙ্গলের জন্যে, খোদার জন্যে পরিবারে লোকদের মনুষ্যত্ব জাগাবার জন্যে, তাদের আত্মাকে সুন্দর, সুরভিত করে তোলবার জন্যে চেষ্টা করতেই হবে, একটি বাদ দিয়ে মনুষ্যত্ব জাগাবার জন্যে, তাদের আত্মাকে সুরভিত করে তোলবার জন্যে চেষ্টা করতেই হবে, একটি বাদ দিয়ে মনুষ্যত্ব জাগাবার জন্যে, তাদের আত্মাকে সুন্দর, সুরভিত করে তোলবার জন্যে চেষ্টা করতেই হবে, একটি বাদ দিয়ে মনুষ্য সহস্র সহস্র টাকা উপায় করলেও তার কোনো গৌরব নাই। মুসলমান সমাজের উন্নতি পথের একটা বাধা হচ্ছে এই যে, আমাদের পরিবারের লোকদের আত্মোন্নতি বা চরিত্র গঠনের কোনো বন্দোবস্ত নেই। বাড়িতে একটা ‘Holy and Virtuou’s Atmosphere build’ (হোলী অ্যান্ড ভারচুয়াস এ্যাটোমোসেফেয়ার বিড়) করতে হবে।
১ম–পরিবারে একজনে অনেক সময় আর একজনের কথা শোনেন না–এর মানে কী?
২য়–এর মানে কর্তার চরিত্রশক্তির অভাব; গৃহিণী এজন্য দায়ী। যে জাতি আপন আপন পরিবার শৃঙ্খলার সঙ্গে চালাতে পারে। কর্তা ও গৃহিণী উভয়েরই চরিত্রবল ও জ্ঞানের অভাববশত পরিবারে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। ছেলেরা কথা শোনে না, দাসদাসীরা বিদ্রোহী হয়। এক ভাই আর এক ভাই-এর কথা শোনে না।
১ম–এর প্রতিকার সম্বন্ধে কিছু বল।
২য়–সংক্ষেপে কিছু বলছি। মোটামুটি এইগুলি মনে রাখলেই কাজ হবে। ছোটদের সঙ্গে অধিক চেঁচামেচি করা ঠিক নয়। একজন একটি হুকুম দিলে, দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির পক্ষে তার প্রতিবাদ করা ঠিক নয়, কিংবা তখন আর একটা হুকুম দিতে নাই। ছেলেদের সামনে স্বামী-স্ত্রীতে প্রতিবাদ করা ঠিক নয়, কিংবা তখন আর একটা হুকম দিতে নাই। ছেলেদের সামনে স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া নিষেধ। পত্নী নিজের ছেলে-মেয়েদের মঙ্গলের জন্য স্বামীর কোনো কথার প্রতিবাদ করবেন না। স্বামীর ইচ্ছা অবিলম্বে পালন করবেন, ছেলমেয়েরা যা দেখবে তাই শিখবে। উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ তাদের শিক্ষার জন্য ভারি উপকারী। মাকে সর্ব প্রকারে পিতার বাধ্য দেখলে, অবাধ্যকতা কী জিনিস তা তারা মোটেই টের পাবে না। একটা হুকুম একবার, বড় জোর দুবার বলবে, কখনও ৫/৭ বার বলবে না। যেমন ”বাজারে যাও” এই কথাটি কখনও দু’বারের অধিক বলবে না। কখনও অসহিষ্ণু হয়ো না। যদি অবাধ্য হয়, তবে অনেকক্ষণ পর শাস্তি দেবে। কিন্তু-দুবারের অধিক কোনো হুকুমই দেবে না। অনেক সময় অবাধ্য হলে, কথা না শুনলে বা প্রতিবাদ করলে কিছুই বলবে না–আন্তরিক অনিচ্ছার উপর জবরদস্তি ভালো নয়। হুকুম না শুনলেও চলবে–ছোটদের এরূপ কল্পনা করবার সুযোগ দিও না। ছোট যে, সে বড়কে সম্মান করবে-এই সম্মান। করবার শিক্ষা মধুর করে দিতে হবে। সৎশিক্ষা ক্রোধের সঙ্গে দেবে না।
ছেলে যা শোনে, যা দেখে তাই করে। উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ উত্তম। আপনি করে কথা বল”–এই কথা না বলে নিজেরা ছেলেদের সঙ্গে আদবের সঙ্গে কথা বললেই কাজ অধিক হয়। শিশুদিগকে প্রাতে নিজেরাই ছালাম করবে, তাহলে তারা উপদেশ দেবার পূর্বেই ছালাম করা শিক্ষা করবে।
ঘোটর কাছে কখনও বড়র নিন্দা করো না–এটা যার পর নাই বোকামি। ছোট যে সে বড়কে খুব ভদ্রতার সঙ্গে সম্বোধন করবে। ছোটর সম্মুখে কখনও বড়োর অপমান বা অসম্মান করবে না। বাল্যকাল হতে পরিবার এইভাবে গঠিত হয়ে উঠলে শেষকালে পরিবারে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অশান্তি উপস্থিত হয় না। স্মরণ রেখো, অবাধ্যতাই পরিবারের অশান্তির একমাত্র কারণ।