১ম–তাহলে কি ধর্ম নাই?
২য়–রসুলুল্লাহ্ যদি এসে বলেন–আমি ক্ষুধার্ত, আমি পীড়িত-তাহলে অনেকেই সম্ভব দরুদ পড়তে পড়তে পালিয়ে যাবে। বক্তৃতা ক্ষেত্রে অনেকেই ভাই ভাই বলেন, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে একটু ত্যাগ স্বীকার করতে তাঁরা চান না।
১ম–তা হলে কে আপন, কে পর?
২য়–নিজের বাহুবলই বড় বল। বিপদে মাতা এবং পত্নী পার্শ্বে থাকেন। যারা জগতে বন্ধু হয়ে আসন উজ্জ্বল করে বসে থাকেন, তাদের উপর কোনো ভরসা করো না। সর্বদাই নিজের কাছা ও কোচা ঠিক রাখা উচিত। দুঃখ ও সত্যকে অতি অল্প মা ই শ্রদ্ধা করে। চোর, বদমাইশ ও দুষ্টের জন্য মানুষ কাঁদে, দীন-দুঃখীকে কেউ জিজ্ঞাসা করে না।
১ম–যা বল্লে, তা অতি কঠিন কথা।
২য়–জগতের এই অবস্থা বুঝেও নিজের অবস্থা ঠিক রেখে যতটা সম্ভব মানুষকে বিপদে আপদে সাহয্য করা উচিত, সেইটেই ধর্ম। টাকা তোমার কাছে আছে, সে টাকা যে শুধু তোমারই এ কথা মনে না করা উচিত।
মানুষকে, পরকে অন্তরে ভালোবেসো, মানুষের দুর্বলতা ও দারিদ্রকে উপহাস করো না। মানুষ অনেক সময় সাধু ও দানশীল প্রেমিক জনকে মিথ্যা কথা বলে, সে কথাও জেনে রাখা উচিত। জগতে বোকা হওয়াও ঠিক নয়। জগতে থাকতে হলে জগতের জ্ঞান থাকা। চাই। অপরিমিত এবং অন্যায় দানও ভালো নয়, তাতে আলস্যপরায়ণ ও কর্মবিমুখ লোকের। প্রশ্রয় দেওয়া হয়।
১ম–অনেক সময় সংসারে পিতা-পুত্রে কলহ হয়।
২য়–এর কারণ, পরস্পরে সহানুভূতির অভাব। পরিবারে জ্ঞান, বিবেচনা ও ধর্মভাবের অভাব। নিজে উপায় করতে না পারলে, পিতাও ভালোবাসে না। তাতে তাকে দোষ দেওয়া চলে না। পুত্র সেয়ানা হলে, তারও বিবেচনা করা উচিত, আপন স্ত্রী-পুত্রের ভার বৃদ্ধ পিতার স্কন্ধে চাপিয়ে দিলে তার বিলক্ষণ কষ্ট হয়। বুড়াকালে মানুষ বিশ্রাম করতে চায়, তখন তাকে উপার্জনের জন্য সংসারে ভাবনা ভাবতে বাধ্য করা ঠিক নয়। সংসারে সকলেরই সহিষ্ণু হয়ে, মিলেমিশে যাতে ভালো হয়–তাই করা উচিত। ঝগড়া-কলহ করা, পেছনে পেছনে কথা বলা এসব পরিবারে অবনতির কারণ।
১ম–বিয়ে কোন্ সময় করা উচিত?
২য়–নিজে যোগ্য হয়ে তারপর বিয়ে করা উচতি। না হলে অর্থাভাব, মনোমালিন্য, আহার ও চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারাতে হয়। মাতৃস্নেহ, পিতৃস্নেহ, ভ্রাতা ও বোনের সঙ্গে মমতার বন্ধন–এ সব চিরদিন থাকে না। নিজকে জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে, কারো সঙ্গে মমতার বন্ধন থাকে না। পিতামাতা চিরদিনই তোমাকে খাওয়াতে পরাতে পারেন না। তাঁরাও কিন্তু আশা করেন।-এ কথা অপ্রীতিকর হলেও, সংসারে সময় হলে চিন্তা করা দরকার।
১ম–কীভাবে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়? মানব-জীবনে অর্থাগমের পথ কী?
২য়–শুধু শুধু ঘুরে বেড়ান বড়ই অন্যায়। তাকে লোকে লক্ষীছাড়া ও পাগল বলে। অপরের এমন কি নিকট আত্মীয়ের আশ্রিত হয়ে, নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকলে ইজ্জত নষ্ট হয়। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয়ে অর্থাগমের পথ দেখা উচিত। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে থেকো না। চিরদিন নিজেকে নির্ভরশীল শিশু মনে করো না। পিতার কর্তব্য শেষ হলেই আর তার কাছে কিছু আশা করো না।
১ম–বর্তমানে অর্থাগমের পথ কী?
২য়–প্রথম দিনেই যে মানুষ লক্ষপতি হয়, তা নয়। বর্তমানে অনেকেই চাকরির আশা করে, কিন্তু সকল মানুষই যে চাকরির যোগ্য তা নয়। ঘুষ খেয়ে, চুরি করে, অনেকে ভুড়ি মোটা করে সত্য, কিন্তু অবৈধ পথে, নৃশংস কার্যের দ্বারা জীবনকে উন্নত করবার চেষ্টা বড়ই ঘৃণিত। অনেক কাজ আছে দেশে, তার কোনো একটাকে অবলম্ব করলেই পয়সা হবে। নিজের রুচি অনুযায়ী কোনো ব্যবসা অবলম্বন কর। কাজ যতই ছোট হোক, তাতে জাত যায় না। সাধুতার সঙ্গে কোনো স্বাধীন ব্যবসা করলেই জীবনের অভাব-অভিযোগের মীমাংসা হবে। এটা থুয়ে ওটা, ওটা ধুয়ে এটা-এরূপ করলে জীবনে উন্নতি করা যায় না। কৃষি, বস্ত্রবয়ন, সেকরার কাজ, মিস্ত্রীর কাজ, স্বদেশজাত শিল্প-বাণিজ্য চালানী কারবার,–যার যেমন রুচি ও বুদ্ধি সে তাই করবে।
১ম–দ্রলোকের ছেলে এ সব কাজ করলে লোকে কি বলবে?–এতে কী সম্মান বাড়ে?
২য়–ঐ তো আমাদের ভুল ধারণা। চাঁদের আলো সব জায়গাতেই পড়ে তাতে চন্দ্রালোকের গৌরব নষ্ট হয় না। ভদ্র সন্তান, যোগ শিক্ষিত ব্যক্তি যে কাজই করুক–তাতে তার সম্মান নষ্ট হয় না। সম্মান নিজের মনের ভিতর। দুর্বল-হৃদয় ব্যক্তিরাই বিবেক ও .আপন বিচার-বুদ্ধি অপেক্ষা মানুষকে বেশি ভয় করে। এতকাল এসব কাজ অশিক্ষিত লোকেরা করেছে বলে, এসব কাজকে লোকে ছোট মনে করে দ্ৰ শিক্ষিত লোক এসব কাজে ঢুকলেই কাজের গৌরব বেড়ে যবে। ল্যাঙ্কাশায়ারের তাঁতীরাই বিলেতের রাজা। ব্যবসা-বুদ্ধি সহজ বিষয় নয়। যে জাতির ব্যবসা-বুদ্ধি বেশি, তারাই জাতিসমূহের উপর কর্তৃত্ব করে। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, আধুনিক উন্নত প্রণালীতে কৃষিতে মন দেওয়াও আমাদের উচিত। নূতন লোকের পক্ষে প্রথমে অনেক অসুবিধা ভোগ করতে হয়, কিন্তু না ঠতে শিখলে জেতা যায় না। অনেক কিছু প্রাথমিক অসুবিধা দেখেই পালিয়ে যান, হতাশ হন-এসব অপরিপক্ক লোকের প্রকৃতি। উন্নতি ও মঙ্গলের পথ বাধা নই, প্রস্তুত নাই–পথ বেঁধে নিতে হবে, প্রস্তুত করে নিতে হবে। এতদিন দেশের কোনো কোনো চাকরীতে মোটা ঘুষ পাবার ও এক রাত্রিতে বড় হবার সুবিধা ছিল, এ সুবিধা এখন আর নাই। এই দুইটি সুবিধাকে গ্রামের লোকেরা বহু জন্মের ভাগ্যফল মনে করত, এখন আর চাকরীতে মায়া নাই। ধর্ম ও বিবেকবান লোক এহেন ইতর-বৃত্তির সাহায্যে পরিবার প্রতিপালন করতে ঘৃণা বোধ করেন।