১ম–আমি অনেক লোককে দেখেছি, যারা বেশ বই পড়ে, কিন্তু তাদের স্বভাবের কোনো উন্নতি হয় না।
২য়–ও কথা বলো না, কিছু না কিছু হবেই। অবশ্য স্বভাব গঠনের একটা আন্তরিক ইচ্ছা থাকা চাই। নিজের ভালো হতে চেষ্টা না করলে, কে কাকে ঠেলে বড় করতে পারে। মনের উন্নতির ব্যবস্থা করে দিয়েও যদি কোনো ফল না হয়, তাহলে আর দুঃখ করবার কারণ নেই।
১ম–মেয়েরা অনেক সময় মনে করে, বিয়ের জন্যই একটু লেখাপড়া শেখা দরকার। বিয়েটা যখন হয়ে গেছে, তখন ঐসব কাগজ-বই নেড়ে দরকার কী?
২য়–এরূপ চিন্তা অনেক মেয়ে পোষণ করেন বটে।
১ম–কী বয়সের ছেলের সঙ্গে কী বয়সের মেয়ের বিয়ে ভালো?
২য়–মেয়ের বয়স ছেলের অর্ধেক বা ২/১ বৎসরের বেশি হওয়া ভালো।
১ম–এর মানে কী?
২য়–নারীর শরীর পুরুষ অপেক্ষা দৃঢ় এবং বলবান। বর কন্যা এক বয়সের হলে বা। মেয়ের শরীর পুরুষ অপেক্ষা অধিকতর সুগঠিত হলে ছেলের শরীর অল্প সময়ে ভেঙে পড়ে, এতে ছেলে স্বাস্থ্যহীন হয়ে অসময়ে মারা পড়ে। ছেলেরা নিজ নিজ শরীর সম্বন্ধে যদি সতর্ক না হয়, তবে খুবই বিপদের কথা। ঔষধাদি এবং প্রচুর পুষ্টিকর আহার ব্যতীত দাম্পত্য জীবনের মর্যাদা কিছুতেই রক্ষা করা যায় না।
১ম–কোনো কোনো মেয়ে অত্যন্ত কামুকা।
২য়–এ কথা ঠিক নয় ছেলেরাই অধিক অসহিষ্ণু তবে মেয়েদের যদি এরূপ কোনো দুর্বলতা থাকে, তবে সেটা বড়ই দোষের কথা। নারীকে স্বামীর শরীর সম্বন্ধে সর্বদাই সতর্কে চলতে হবে-নইলে সর্বনাশ হবেই। জবরদস্তি, রাগারাগি, মারামারি করে বাধা দেওয়াও ভদ্রতা নয়। কোনো কোনো মেয়ে স্বামীর শরীর সম্বন্ধে একেবারেই উদাসীন।
১ম–কোনো কোনো মেয়ে স্বামীর মুখ ভার দেখলেই অসহ্য বোধ করেন, জিজ্ঞাসা করেন–কী হয়েছে। হাসি-মুখ না করে ছাড়েন না। স্বামীর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও খুব কড়াকড়ি।
২য়–এ গুণ প্রত্যেক মেয়েরই থাকা উচিত। এরূপ না করলে স্বামীর শরীর ঠিক থাকে। অল্প সময়েই ভেঙে পড়ে। অনেকে আলস্য করে ঔষধ-পত্র ব্যবহার করে না। পত্নীর কর্তব্য এ বিষয়ে যথেষ্ট পীড়াপীড়ি করা এবং নিজ হস্তে স্বামীকে ঔষধ খেতে বাধ্য করা।, স্বামীর জীবনটি নারীর জন্য অনেকটা নৌকার মতো-ডুবলে নিজেকেও ডুবতে হবে।
১ম–বাঁদী বৌ গ্রহণ প্রথা কেমন?
২য়–ইহা জঘন্য, ঘৃণিত। ইহাতে পরিবারে বড় অকল্যাণ হয়। বংশের সর্বনাশ হয়, নিজের শরীর-মন অপবিত্র হয়। এরূপ করা কখনও ঠিক না।
কদাচিৎ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই বিবাহ সমর্থন করা যায়, কিন্তু বাদী বৌ গ্রহণ করা বড়ই আপত্তিজনক। কোনো ভদ্রলোকেরই এরূপ কাজ করা উচিত নয়।
১ম–বাদী বৌ গ্রহণ করবার কারণ কী?
২য়–কারণ দুইটি। একটি গৃহের কাজ, অন্যটা কোনো ইতর ঘরের মেয়ের রূপে মুগ্ধ হওয়া।
১ম–গৃহের কী কাজ?
২য়–ধান ভানা, বিবিদের জন্যে পানি আনা, গো-সেবা এবং জ্বাল দেবার জন্য ঘুঁটে তৈরি করা।
১ম–পরিবার প্রতিপালনের জন্য এগুলি তো বিশেষ দরকার।
২য়–পানির জন্যে নিজের মর্যাদা নষ্ট করে একটা বাঁদী বৌ আমদানি করা এবং তাঁর দেওয়া পানি দিয়ে গোসল করা বধূদের পক্ষে বড় অপমানজনক। এর চাইতে মরণ ভালো কোনো কারণে সমান ঘরের সতীন হলে মান-ইজ্জত নষ্ট হয় না। কোনো কোনো ঘরে এমন আছে। কিন্তু একটা ইতর মেয়ে যদি স্বামীর বিছানার অংশীদার হয়, তবে তা সহ্য করা কোনো ভদ্র কন্যার পক্ষে সম্ভব নয়। ধান ভানা, গোবরের ঘুঁটে তৈরি–এ সব নিজে করলেই-বা কি ক্ষতি? অবশ্য যদি সামর্থ্যে এবং সময়ে কুলায়-নইলে অবস্থানুযায়ী গাছ ফেড়ে জ্বালানি কাষ্ঠ সংগ্রহ করে বা ধান বিক্রি করে চাল কেনাই ভালো। নিজে হাতে চাষ করলে বা নারী ধান ভানলে কেউ অভদ্রলোক হয় না ভদ্রলোক হয় মনুষ্যত্ব, চরিত্র বলে এবং জ্ঞানে। তবে যাদের অবস্থায় কুলায় তাদের পক্ষে বধূদের এরূপ কষ্টসাধ্য কাজে যেতে বাধ্য না করা উচিত। যারা নিজেরা ইচ্ছা করে করেন বা যাদের অবস্থায় কুলায় না, তাদের কথা স্বতন্ত্র। সাংসারিক কার্যে পুরুষদের কর্তব্য বধূদের সর্বপ্রকারে সাহায্য করা। নিজেরা বাবুর মতো বসে থেকে বধূদিগকে বলদের মতো খাটান বড়ই অন্যায়।
১ম–তুমি কি একাধিক বিবাহ সমর্থন কর?
২য়–কখনও নয়, কখনও নয়। বিশেষ যুগে বা বিশেষ কারণে একাধিক বিবাহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ে থাকবে, কিন্তু কখনও আদর্শ নয়। তবে বিবাহে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের স্মৃতি থাকা নিতান্ত বাঞ্ছনীয়। এ কাজ অন্যের দ্বারা বা জবরদস্তিতে হওয়া খোদার ইচ্ছা নয়। এরূপ ভাবে পরের ইচ্ছায় বিয়ে হলে চরিত্র বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে। প্রত্যেকের মনের কোণে একটু পাপের দুর্বলতা উঁকিঝুঁকি মারেই। যে জিনিসটা প্রেম, তা মানুষকে অতিশয় পবিত্র করে লোকচক্ষুর অগোচরে। জগতে বাধ্য হয়ে সৎ থাকা বড় কঠিন, অন্তত বাহিরে না হোক, অন্তরে সে ব্যভিচার করবেনই।
১ম–মনের কোণের এই পাপ, দুর্বলতা কি ভালো?
২য়–কখনও নয়, কখনও নয়। যে চক্ষু স্বামী বা পত্নী ছাড়া অন্যের দিকে পাপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, তা বরং তুলে ফেলা ভালো। আত্মা অপবিত্র হওয়া অপেক্ষা একটা চক্ষু নষ্ট হওয়া বরং ভালো।
.
আপন-পর, পারিবারিক গ্রাসাচ্ছাদন
১ম–জগতে কে আপন, কে পর, তা বুঝতে পারি নে।
২য়–পত্নী স্বামীকে এবং স্বামী পত্নীকে নিকটতম আত্মীয় মনে করবে। মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করে সাদীর জন্য অস্থির হয়। এ আল্লাহর ব্যবস্থা এর উপর কথা চলে না। ছেলে বড় হলে, পিতা তাকে ত্যাগ করতে পারেন, কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর চরম বিপদেও কেউ কাউকে ত্যাগ করতে পারেন না। সুখের সময় অনেকেই বন্ধু হয়, দুঃখের সময় সবাই পালায়। পত্নী সকল অবসস্থয়, নিকটে আছেন। ধর্মপুস্তকে যাই লেখা থাক, জগতের কর্মক্ষেত্রে আমরা কোনো দয়া-ধর্ম দেখতে পাই না। যার যার মতো সেই, কেউ যেন কারো। নয়। টাকাটা দিতে একদিন বিলম্ব হলেই মহাজন কটু কথা বলে, ঘরে অন্ন না থাকলে কে তা জিজ্ঞাসা করে? কিছুই নয়, সবই পুস্তকের কথা। মানুষের জীবনের ধর্মের কোনো রঙ নাই।