২য়–যাকে একবার হৃদয় দেওয়া হয়েছে, তাকে আর কোনো মতে ত্যাগ করা চলে। এরূপ করলে নারীর ভাগ্য আরও দুঃখময় হয়ে ওঠে।
১ম–নারী স্বভাবের যেসব দোষ-ত্রুটির কথা বললে, ওগুলো অনবরত ধরতে থাকলে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি দিনরাত্রি সমালোচনা করতে থাকলে তাদের জীবন কি বিষময় হয়ে ওঠে না।
২য়–স্বামীর পক্ষে নিরন্তর পত্নীর দোষ-ত্রুটি ধরা পড়াই অভদ্রতা। অনবরত সমালোচনা করলে মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট হয়। জীবন গঠনে পত্নীকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। বই-পুস্তকের উন্নত চরিত্রের আদর্শ সম্মুখে ধরে তার আত্মান্নতির সুবিধা করে দেওয়া, ছাড়া, মুখের উপর দিবারাত্রি ভুল ধরলে পারিবারিক জীবন নীরস, প্রাণহীন ও প্রেমহীন হয়ে পড়ে। ছেলেবেলায় মা-বাপের কিংবা স্কুলে শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীর ভর্ৎসনায় উপকার হয়–কিন্তু বিবাহিতা হওয়া মাত্র নারীকে আর ভর্ৎসনা করা চলে না। নিজের চিন্তা করে নিজেকে গঠন করে তোলবার অবসর মানুষকে দিতে হবে।
১ম–ভর্ৎসনায় কি কোনোই কাজ হয় না?
২য়–অতি সামান্য ইশারা-ইঙ্গিত একেবারে ব্যর্থ হয় না। কঠিন রূঢ় ভর্ৎসনায় কিছু। ফল হলেও সে ফলের কোনো মূল্য নেই, সে ফল অন্তঃসারশূন্য।
১ম–এমন মেয়ে কি নেই, যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী-কোনো মতে নিজদিগকে দোষী মনে করেন না? নিজের স্বভাব গঠনের কোনো চেষ্টাই করেন না?
২য়–যারা নিতান্তই অশিক্ষিতা, তারা কিছুই ভাবে না। একইভাবে জীবন কাটায়। সেজন্য কোনো অশিক্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করা খুবই বিপদের কথা। জীবনের দুঃখ এতে বেড়েই ওঠে, বংশেরও কোনো উন্নতি হয় না। দীন মানসিকতা, মন্দ রুচির মেয়েদের পেটের ছেলেপেলেও মন্দ রুচির হয়। বই পড়তে পারে, মামুলি লেখা সহজে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, এরূপ বিদ্যাবুদ্ধি মেয়েদের থাকা চাই-ই-চাই। মেয়েরা কতকটা মাঠের জমির মতো। যেমন জমি তৈরি হবে, ফসলও ঠিক তেমনি হবে। এ সত্য কথা দেশের লোক চিন্তা করে না। মেয়েদের শিক্ষা, তাদের মনরূপ ক্ষেত্রের উৎকর্ষ সাধনের কোনো চেষ্টা নাই, অথচ লোকে ইচ্ছা করে বংশের ছেলেরা জজ, ব্যারিস্টার দেশপূজ্য হোক; কবি, সাহিত্যিক, ধনী, ব্যবসায়ী হোক–এরূপ আশা করা বাতুলতামাত্র। মেয়েদের মনের উন্নতি, তাদের বই-পুস্তক পড়বার অবসর করে দেওয়া–সকলেই একটা বাজে কাজ মনে করেন। এ যে কত বড় বোকামি, তা আর বলে কি হবে। ক্ষেত্র সব সময় সতেজ, রসালো, শক্তিপূর্ণ ও পবিত্র থাকা চাই, নইলে বংশ বা জাতির কোনো মতেই মঙ্গল নাই।
১ম–অনেক লেখাপড়া জানা মেয়ে অসভ্য হয়ে থাকে, অনেক মূর্খ মেয়েকে খুব সভ্য, বিনয়ী, স্বামীর অনুগত এবং ভদ্র হতে দেখেছি–এ মানে কী?
২য়–যে সমস্ত মূৰ্থ মেয়েকে সভ্য দেখেছ–তারা তাদের মাতার বা বংশের চরিত্র প্রভাব লাভ করে থাকেন। লেখা পড়া বা বিদ্যার শক্তি কোনো সময় বংশের প্রভাবকে অতিক্রম করে উঠতে পারে না–সেজন্য অনেক গোলমাল হয়। তাছাড়া অল্প বিদ্যা অনেক সময় কোনো কাজে আসে না।
১ম–এই যে ‘বংশ প্রভাব’ কথাটি বললে, এটি শুনতে বড় কানে বাজে।
২য়–তা ঠিক। কথাটি সত্য, কিন্তু তাই বলে কথায় কথায় বংশ প্রভাব উল্লেখ করা অভদ্রতা নয়। বরং ‘বংশের দোষ’ এই কথাটি কখনও মুখে প্রকাশ করা ঠিক নয়।
১ম–বধুদের মনের উন্নতির জন্যে কী কী উপায় অবলম্বন করতে হবে?
২য়–প্রত্যেক পরিবারে মেয়েদের মনের উন্নতির জন্য একটা বিশেষ বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। বিশেষ সময়ের জন্য তাদের মনের সঙ্গে একটা স্বতন্ত্র স্ত্রী-পাঠ্য সাহিত্যের যোগ হওয়া চাই-ই-চাই।
১ম–নিরন্তর মেয়েরা বাজে কাজে ব্যস্ত থাকে–এর সুবিধা হবে কী?
২য়–হ্যাঁ, মানুষ এতই কাজে ব্যস্ত যে, তাদের নামাজ পড়বারও অবসর নেই! কী পরিতাপ! জাতির অধঃপতন কেন হবে না? আমি বেশ বুঝতে পাচ্ছি, মানুষ নামাজ পড়ে শাসন আর বেত্রাঘাতের ভয়ে-নইলে তাও পড়তো না। নামাজের সঙ্গে আত্মোন্নতির যে এতখানি যোগ আছে, তা যদি সবাই বুঝতো, তা হলে আর আত্মোন্নতির ব্যাপারে সময় ব্যয় করাকে কেউ সময় নষ্ট বল মনে করতো না। মনের উন্নতির চেষ্টা, স্বভাব গঠনের সাধনা–এবাদত ছাড়া আর কিছু নয়। মুসলমান মেয়েরা কি কোরান পাঠ করে না? এও কি সময় নষ্ট?-কোরান জিনিসটা কী?–একি সাহিত্য নয়-আত্মোন্নতির প্রকৃষ্ট পথ নয়?-কোরআন লোকে বোঝো না বলে খোদার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়-আত্মোন্নতির তিলার্ধ পরিমাণ সাহায্য হয় না। মুসলমান মেয়েরা যদি কোরান বুঝে পাঠ করতো, তা হলে কী যে সুন্দর হতো, তা আর বলবার নয়।
১ম–শুধু কোরান পড়লেই তো হয়, আর অন্য কিছু পড়বার দরকার কী?
২য়–মানুষ শুধু খোদার কালাম হৃদয়ে ধারণ করতে পারে না, স্বভাবের অন্তর্গত করতে। সক্ষম হয় না। যখন পৃথিবীর সাহিত্যটা খোদার কালামের ধ্বনি এবং প্রতিধ্বনি–সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান কবিতা, কাব্য উপন্যাসের মঙ্গলময় মূর্তিতে মানব-চিত্তকে নাড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সাহিত্যিকেরা গানে-গল্পে, রূপে-রসে এলাহীর কালাম অভিনব ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছন–বিভিন্ন রুচির লোকের উপযোগী করে। সেইজন্য সাহিত্যকে সব দিক দিয়ে গ্রহণ করতে চেষ্টা করতে হবে। এইভাবেই মানবাত্মার মঙ্গল ভালোভাবে হয়।