‘কোনো ফল হবে না, বৃথা চেষ্টা।‘
১ম বন্ধু একটু থেমে জিজ্ঞাসা করিলেন–প্রতিদিনকার জীবনে নারীর কী কী দুঃস্বভাবের পরিচয় পাওয়া যায়?
২য়–নারীর কতকগুলি সাধারণ দোষ আছে। সেগুলি শুধু একজনের দোষ নয়–এ হচ্ছে শিক্ষার অভাবের দরুন। আমি বলে যাচ্ছি। তুমি শোন
বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকা। সকাল বেলাতেই বিষ-মুখ করে বের হওয়া অর্থাৎ ঝগড়া মুখে করে বের হওয়া। যার সামনেই বসা তার কাছেই অপরের নিন্দা করা। জিনিসপত্র অগোছালো করে রাখা। ইচ্ছা করে কানে না শোনা। প্রাণহীন জিনিসের উপর রাগ করা। ক্রোধে দরজায় ধাক্কা মারা। ৰাক্সের উপর জিনিসপত্র রাখা। ছেলেমেয়েদের কাছে স্বামীকে খেলো করা-এটি গুরুতর অপরাধ। ছেলেকে তিরস্কার করলে ছেলের শিক্ষকের উপর রাগা। নিজের ছেলেমেয়ের দোষ না দেখা। জোরে হি হি করে হাসা। বেশি চিৎকার করে গৃহের শান্তি নষ্ট করা। বিচার না করে কথা বলা পর মুহূর্তে আবার আর এক কথা বলা। জিনিসপত্র আলগা রাখা। ঘরে গরমের সময় ঠাণ্ডা পানির বন্দোবস্ত রাখা। পড়াশুনায় বিরক্ত হওয়া সকল লোককে খেলো মনে করা। স্বামীর কাছে বাড়ির আর সকলের নিন্দা করা। স্বামীর ইচ্ছার বিপরীত চলা। তাকে বুঝতে চেষ্টা না করা। নোংরা থাকা। স্বামীর খাবার এবং তার সুখ-সুবিধার কোনো খোঁজ না রাখা–তার সঙ্গে আলাপ না করা। স্বামীকে অগ্রাহ্য করা। ছেলেমেয়েদের যখন তখন খেতে দেওয়া। যখন তখন বাজে লোকের সামনে নববধূদের স্বামীর সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়।
২য়–নারী যতই রূপসী, বিদুষী এবং বংশে শ্ৰেষ্ঠা হউক না কেন স্বামীকে মুরুব্বী বলে মেনে চলা উচিত।
১ম–আমি একটি ঘটনা জানি ভারী মর্মস্পর্শী।
২য়–কী রকম?
১ম–একটা ভালো বংশের মেয়ে দেখতে ভারি সুন্দর। কি যে সুন্দরী তা আর কি বলবো। তার একটা যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। যুবকটি লেখাপড়া না জানলেও তার স্বভাবটি বড় ভালো। মেয়েটি এর এই নিরীহ প্রকৃতিতে কিছুতেই তৃপ্তি লাভ করতে পারল না। স্বামীকে অন্তরের সঙ্গে ঘৃণা করতে লাগল। যুবকটি কত করে তাকে ভালোবাসতে চায়, মেয়েটি ঘৃণায় তার দিকে ফিরে তাকায় না।
২য়–নারী জীবনের এই অহঙ্কার তাদের সর্বনাশের কারণ, তবে একটি কথা বিবেচনা করতে হবে। পিতামাতার কর্তব্য কোনো বিরুদ্ধ রুচির লোকের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে না দেন-তাতে মেয়েদের অবোধ মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে–তারা কোনোকালে স্বামীকে ভালোবাসতে পারে না। আপন ভাগ্যে তুষ্ট থাকাই ভালো কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেরূপ হয় না।
১ম–বিরুদ্ধ রুচির অর্থ কী?
২য়–একটি সুন্দর ফুটফুটে চঞ্চল হাস্যরসিক মেয়ের সঙ্গে একটা ধাঙ্গড় অভ্যাস ছেলের বিয়ে না হওয়াই ভালো।
১ম–শুধু সৎস্বভাব হলেই চলবে না।
২য়–শুধু সৎ মানে একটা নিরীহ বোকা মানুষও হতে পারে। তাকে লোকে প্রশংসা করতে পারে। কিন্তু তাকে নিয়ে মনুষ্য তৃপ্তি লাভ করতে পারে না। বিবাহিতদের একজন আর একজনকে ভোগ করতে চায়। স্বামী স্ত্রীর একজন আর একজনের নিকট উপাদেয়, মধুর, স্নিগ্ধ, সুন্দর, মোহন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবেন। একজনের আর একজনের রুচি অনুযায়ী হতে হবে। নইলে প্রণয় সম্ভব নয়। একজন সাহিত্যিক হয়তো তার পত্নীকে পছন্দ করে না। পত্নীর অপবিত্র মনে পিপাসা হয়তো একটা পাষণ্ড লোককে আকাক্ষা করে। দম্পতির যা ধর্ম–তা স্বামী-স্ত্রীকে পালন করতেই হবে। নইলে বিরোধ হবেই। কোনো যুবকের বউ যদি যোগিনীর মতো ব্রত পালন আরম্ভ করেন, দিবারাত্র তপজপ, মোরাকাবা মোশাহেদায় ডুবে থাকেন, বৃথা জিন্দেগি বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন, হাসি তপজপ মোরাকাবার ধ্যান যে দোষের–তা বলছি না, দাম্পত্য ধর্ম পালন করাও স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম! এরূপ না করলে হয় স্বামী, না হয় পরী একজন আর একজনের মনের উপর অত্যাচার করবেন। মোটা বুদ্ধির লোকেরা এসব বুঝতে পারে না। শরীরের মতো মনুষের মনও খোরাক চায়–মনের খোরাক আনন্দ, প্রীতিরস, বাধ্যতা, সহৃদয়তা, সহানুভূতি, আলাপ গল্প। এক কথায় দম্পতির ধর্ম একজন আর একজনকে তৃপ্তি দেওয়া। দম্পতির একজনের আর একজনের প্রতি দ্বিতীয় কোনো ধর্ম নাই। বিবেকের কথা, ধর্ম এসব অন্যের কাছে প্রচার করে-স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের কাছে এসবই যথেষ্ট নয়।
১ম–একটি মেয়ের কথা জানি, সে বেশ বই পড়তো–তা দেখে তাঁর স্বামী বিরক্ত হতো। বলতো-বই-টই পড়লে চলবে না।
২য়–তাই তো বলছিলাম। দু’জনই এক ভাবের লোক হওয়া চাই। ঐ মেয়েটির যদি একটি শিক্ষিত ছেলের সঙ্গে বিয়ে হতো, তাহলে তার কত কদরই না হতো। অসভ্য যুবকটি লেখাপড়ার মর্যাদা বোঝে না, সে তো রাগবেই। তার চিন্তা, রুচি-কদর্য, সে উচ্চ জীবনের আশীর্বাদ ভোগ করতে পারে না। ভালো মেয়ের ভাগ্যে যদি একটা ধাঙ্গড় স্বামী জোটে, তার মতো দুঃখের বিষয় আর নেই। এসব বিষয় পূর্ব হতে বাপ-মায়ের বিবেচনা করা উচিত। কোনো কোনো পিতামাতা এতই দুর্বুদ্ধি ও প্রাণহীন যে, ওরা ছেলেমেয়েদের আশা-আকাঙ্ক্ষা কিছুই বোঝেন না, জবরদস্তি করে যা হয় একটা করেন।
১ম–এরূপ বিয়ে কি সিদ্ধ হয়?
২য়–কখনই না। অন্তর কেউ কাকে স্বীকার না করলে বিয়ে ঠিক হয় না, এরূপ বিয়ে জবরদস্তি ও ব্যভিচার ছাড়া কিছু নয়।
১ম–এরূপ বিয়ে কি ভেঙ্গে দেওয়া উচিত?