২য় বন্ধু –স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা তো থাকা চাই। দয়া করে বিবাহ, ছোট বাড়িতে বিবাহ, শিক্ষিত-অশিক্ষিতার বিবাহ-এগুলি মোটেই ভালো নয়।
৪. প্রবীণের উপদেশ
প্রবীণের উপদেশ
সাংসারিক জ্ঞান
২য় বন্ধু কহিলেন-বন্ধু, যতই জ্ঞানী হও বা নবীনের উপদেশকে উপহাস করো না, প্রবীণেরা জগতে কত ধাক্কা খেয়ে শিখেন, প্রথম বয়সে তা তুমি কল্পনা করতে পার না। অনেক জ্ঞান, অনেক চিন্তা তোমাকে সংসারের সফলতা দেয় না–যেমন দেয় একটা বোকা মানুষের ঠেকে শেখা অভিজ্ঞতা। ঠেকে শিখে জগতে উন্নতি লাভ করতে হলে একটা জীবনে কুলাবে না, সুতরাং বৃদ্ধ, বয়োজ্যেষ্ঠ, প্রবীণের উপদেশ নিয়ে কাজ করা ক্ষতির কথা নয়।
১ম বন্ধু–কোনো কোনো প্রবীণ শিশু অপেক্ষা অবোধ।
২য় বন্ধু বন্ধু, প্রবীণ বলে নয়–সমস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ কর, জিজ্ঞাসা কর–নিজের জ্ঞানের গর্বে চুপ করে থেক না।মানুষের কাছে কোনো কিছুই গোপন নাই–জিজ্ঞাসা করলেই অবগত হবে পুস্তকের জ্ঞান এবং সাংরারিক জ্ঞান স্বতন্ত্র। মানব। সমাজ পুস্তকের জ্ঞানের পরীক্ষার স্থল। পূর্ব হতে যারা জগতের জ্ঞান লাভ করেছে তাদের লব্ধ জ্ঞান যত পার, সংগ্রহ কর-কখনও লজ্জাবোধ করো না–তাহলে লাভবান হবে না। পিতা-মাতা এবং জ্ঞানবৃদ্ধ বয়োজ্যেষ্ঠ্যের উপদেশ এই জন্যই মেনে চলা নিয়ম। তারা পূর্ব হতেই অনেক কিছু জানেন, শোনেন। যারা জ্ঞানবৃদ্ধ তাদেরও স্মরণ রাখা উচিত। তাদের জ্ঞান, ঘৃণা, উপহাস, ক্রোধ ও কর্কশ ভাষা কেউ গ্রহণ করতে চায় না। এমন কি ছেলে মেয়েরাও তা গ্রহণ করে না। মনুষ্য বিনয় এবং প্রেমে তার কল্যাণের কথা শুনতে চায়-অন্য ভাষায় সে কোনো কিছু শুনতে চায় না।
পরের উপর অতিশয় নির্ভর করাও ভালো নয়–নিজের শক্তিতে বিশ্বাসও আবশ্যক-নইলে কোনো কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। যে যা বলে তাই শোনা যাচ্ছে, নিজের স্বাধীনতা চিত্ত ও শক্তির উপর নির্ভর না করায় মানুষের মনুষ্যত্ব নষ্ট হয়।
মনুষ্যকে জিজ্ঞাসা কর, আলোচনা কর।-গ্রাহ্য কর না কর তা পরের কথা, যার যে বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই, সে বিষয়ে তার কাছে জিজ্ঞাসা করা বা উপদেশ দেওয়া এ দুটিই খারাপ।
.
অধ্যতা
২য় বন্ধু–হুকুম প্রত্যাহার করে না? যা বল তো বলই। হুকুমের ব্যাখ্যা ছোটদের কাছে করো না। একটা হুকুম দিয়ে, তখনই দ্বিতীয় হুকুম দিও না বা এক হুকুমের মধ্যে দ্বিতীয় হুকুমও দিও না। হুকুম মুহূর্তের মধ্যে পালিত হওয়া চাই। এই অভ্যাসটি ছেলেরা শিখবে মাকে দেখে।
১ম বন্ধু–বধূরা যদি স্বামীর অবাধ্য হন, তাহলে বাড়ি সুদ্ধ ছেলে-মেয়েরা অবাধ্য এবং অভদ্র হয়।
২য় বন্ধু–যা বলেছ তা ঠিক। বধূদের উচিত কালবিলম্ব না করে স্বামীর কথা শোনা মাত্র তখনই তা কথাটিই না বলে পালন করা, এতে ছেলেদের চরিত্রে বড্ড সুফল ফলে। ছেলে-মেয়েরা মাকে যা করতে দেখে তা অনুকরণ করে-মা যদি অবশ্য দ্বন্দ্বপ্রিয় ও ঢিলে হন, ছেলে-মেয়েরাও তাই হবে। ফলে, ভবিষ্যৎ জীবন তারা নিজেদের জীবন এবং যাদের স্পর্শে তারা থাকবে, তাদের জীবন দুঃখময় করে তোলে।
১ম বন্ধু –স্বামী যদি অভদ্র হন, তবে পরীর পক্ষে তার কথা তখনই পালন করা কঠিন হয়ে ওঠে।
২য় বন্ধু–হ্যাঁ, তা হয়। অভদ্র মানুষের কথা যখন তখন পালন করতে একটু লজ্জাবোধ হয়–কিন্তু সমস্ত স্বামী সকল সময়েই যে অভদ্র হন, তেমন মনে হয় না। আসল কথা হচ্ছে, কোনো কোনো বন্ধু আসলেই অভদ্র এবং অবাধ্য। এরা পরিবারের সুখ-শান্তি নষ্ট করেন। সংসারের কলহ-অশান্তি সৃষ্টি করেন। বাধ্যতার মধ্যে কোনো সময়েই গোলামের হীনতা নেই–এর মধ্যে একটা স্বার্থপর ভাব আছে। বাধ্যতার অর্থ-সেবা, খেদমত এবং প্রেম।
কথা যখন তখনই পালন করা চাই। ভালোমন্দের ভেব না, কোনো কৈফিয়ৎ ও তলব করো না।
১ম বন্ধুপত্নী যদি কোনো সময় স্বামীকে কোনো কথা বলেন?
২য় বন্ধু–হ্যাঁ, সেবার প্রাণ নিয়ে তিনিও তা পালন করবেন। তবে এখানে স্মরণ রাখতে হবে–সংসারের কত্রী বধূ-সকলকে সুখ দেওয়াই তার কাজ–তার পক্ষে চুপটি করে বসে থাকা এবং স্বামীকে হুকুম করা শোভা পায় না। পত্নীর যদি অসুখ হয়, তার সাহায্য করবার কেউ না থাকে, স্বামী তখন আজ্ঞাবহ ভৃত্যের ন্যায় পীর আজ্ঞা পালন করবেন। স্বামীর পক্ষে উচিত নয়, পত্নীকে অন্যায় ও অসম্ভব হুকুম করেন। পানি দাও, বাতাস কর, ভাত দাও, এরূপ করে না বলে আমার পিপাসা লেগেছে, বড় গরম লেগেছে, বড় ক্ষুধা পেয়েছে ইত্যাদি রকমে কথা বলাই উত্তম। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়কে প্রেম করেন, তাহলে উভয়ে উভয়কে সেবা করতে আনন্দ বোধ করবেনকারো হুকুমের অপেক্ষা কেউ করবেন না।
.
বিবিধ ফল
১ম বন্ধু কহিলেন-বাড়ির কর্তা অনেক সময় আপন দোষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাড়ির নির্দোষীদের উপর চটে ওঠেন, তাদের গালি দেন-এটি বড়ই অন্যায় বরং অত্যাচার। যে পরিবারে কর্তার বিবেচনা নেই, কর্তা যথেচ্ছাচারী এবং তার একাধিপত্য চলতে থাকে, সে পরিবার শীঘ্রই ধ্বংস হবে। পরিবারের সমবেত শক্তিতে পারিবারিক শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হয়। সকলকে অবহেলা করে ঘৃণা করে, চূর্ণ করে একা কর্তার পক্ষে কোনো উন্নতি সম্ভব নয়।
“বন্ধু যে পরিবার আত্মসুখসর্বস্ব, প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখের সঙ্গে যাদের যোগ নাই–তারা যতই বড়লোক হোক–তারা অতিশয় নীচ ও হীন। মনুষ্য মাত্রেই প্রেমিক হবে, পরের কথা ভাববে, প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখের কথা চিন্তা করবে, শুধু নিজের সুখের কথা বলতেই ভাবে।”