যাবৎ না নারীচিত্ত সুগঠিতা হয়ে ওঠে, চিত্ত মার্জিত হয়–তাবৎ তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, পদে পদে বিড়ম্বনা ভোগ করতে হবে। তার দুঃখে প্রাণ অস্থির হয়ে উঠলেও তাকে বুকে তুলে নেওয়া যাবে না।
নারীচিত্তকে সংস্কৃত করে তুলতে সমাজ যে কেনো সচেষ্ট হয় না, তা বলা যায় না। প্রত্যেকেই জীবনের পরম সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত হয়। কিন্তু পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। মেয়েগুলিকে মানুষ করে পরের হাতে সমর্পণ করলে শীঘ্রই সকলে এর ফলভোগ করে, এ, কেউ ভাবতে পারে না।
অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রেম করতেও মন লজ্জিত হয়ে ওঠে–নারী যদি অযোগ্য হয় তবে. কে তাকে প্রেম করে? বাইরের সৌন্দর্য যেমন মানুষকে আকর্ষণ করে, অন্তরের রূপও তেমনি মানুষকে মুগ্ধ করে। যে নারীর চিত্তে রূপ নাই, তার শরীরের সৌন্দর্যে সকলেই মুগ্ধ হয় না, হওয়াও ঠিক নয়। মাকাল ফল দেখে পাগল হলে পরিণামে পস্তাতেই হয়।
.
মেয়েদের সাজসজ্জা ও অলঙ্কার
২য় বন্ধু কহিলেন–বন্ধু, সকল নারীই রূপসী তা নয়। তবে সকল নারীই চিত্তের সৌন্দর্য, অলঙ্কার ভূষণে, বস্ত্রসজ্জা, বেশ-বিন্যাসে নয়নান্দময়ী হতে পারে। মেয়েরা যদি সাজ সজ্জায় অমনোযোগী হয়–তাদের জীবনের সেই একটা অপরাধই। কখনও কোনো মেয়ে বেশ-বিন্যাসে অমনোযোগী হবে না।-কথা ও আলাপ নারীর সৌন্দর্য বর্ধন করে–কিন্তু কথা ও আলাপ করবার ক্ষমতা কারো আয়ত্তাধীন নয়–যেটি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আপনা আপনি হয়।
১ম বন্ধু–কিরূপ অলঙ্কার, বেশ-বিন্যাসে মেয়েদের শোভা বর্ধন করে?
২য় বন্ধু–শিক্ষিত ভদ্রঘরের মেয়েরা যেমন চলে, অন্য মেয়েদেরও তেমনি চলা উচিত। কাপড় পরনের ধরন, বেণী তোলার ধরন আজকাল বদলে গিয়েছে–মেয়েদের সে সব অনুকরণ করতে হবে। জবরদস্তী করে সাবেক কালের ধরনে চলা ঠিক নয়। পুরোনো কালের অলঙ্কার ভূষণ আজকাল পরলে শিক্ষিতেরা পাগল বলবে এবং ঘৃণা করবে।
মুখের ও শরীরের সৌন্দর্য বর্ধনের সাধনা চাই–একে অবহেলা করলে চলবে না। কেউ কেউ অত্যধিক বেশ-বিন্যাস করলে গণিকা বলে ঠাট্টা করে কিন্তু এ তাদের অন্যায় দোষারোপ। বেশ-বিন্যাস করবার অধিকার যদি কারো থাকে, তা সতী নারীদেরই আছে। বেশ্যারা সাজ-সজ্জা করে বিনা অধিকারে-অন্যায় করে। তাদের সজ্জা করবার, সৌন্দর্য বর্ধন করবার কোনো অধিকার নেই।
১ম বন্ধু–যারা দিনরাত্র কাজকর্ম করে তারা কি সাজ-সজ্জা করবে?
২য় বন্ধু–কাজের সময় কাজ করবে–বেশ বিন্যাসের সময় বিন্যাস করবে। কাজ করে বলে দিবারাত গায়ে কোনো ময়লা মেখে থাকা উচিত নয়। নোংরা থাকা নারী জীবনের একটা অপরাধ। পত্নীর প্রতি পুরুষদের এ বিষয়ে সহানুভূতি থাকা চাই। শিক্ষিত পরিবারে মেয়েদের সাজ-সজ্জা দেখে বাড়ির সবাই আনন্দিত হন–অশিক্ষিত পরিবারে সমালোচনা হওয়া অসম্ভব নয়। কাজ করা লজ্জার বিষয় নয় বরং এতে স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষ উপকারের সম্ভাবনা। তবে হৃদয়হীনের মতো দিন রাত্র হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বধূদের জীবন নীরস, কর্মভারক্লিষ্ট এবং আনন্দহীন করে তোলা অত্যাচার বই আর কিছু নয়। বন্ধুরা কাজও করবে, আনন্দ করবে। শুধু কাজে কি মানুষ বাঁচে? এ জীবন যদি কাজের চাপেই শেষ হয়ে গেল–তবে মানুষ আর একে ভোগ করবে কোন সময়? ভোগের দাবিও যুবক যুবতীর আছে। যৌবনের আশীর্বাদ যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ একে ভোগ কর। যৌবনকে বৃথা যেতে দিও না। কারণ জীবনে বসন্ত একবারই আসে–বুড়া হলে মনুষ্য শত চেষ্টাতেও যৌবনের আশীর্বাদ অনুভব করতে পারবে না। যতক্ষণ কুসুমে গন্ধ আছে, ততক্ষণ এর আনন্দ-যৌবনা ভোগ কর-যখন পাতাগুলি বেড়ে যাবে, তখন তার কাউকে বলতে হবে না, মনুষ্য তাকে অবজ্ঞা করে, মাথা না তুলেই চলে যাবে। যুবত যুবতীর প্রেমালাপ দেখে যারা ক্রুদ্ধ হয়, যারা হিংসা করে তারা নিষ্ঠুর। তারা পরস্পরকে ভোগ করুক, তোমরা আনন্দে চেয়ে দেখ–কঠিন দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে তাদের জীবনে নিরানন্দ সৃষ্টি করো না–তাদের প্রেমে বাধা দিও না–কার এ জীবন শীঘ্রই শেষ হবে।
১ম বন্ধু–আচ্ছা, মেয়েরা বেশ বিন্যাস করবে। পুরুষেরা কি কুৎসিত থাকবে?
২য় বন্ধু–সন্ন্যাসী যদি হয়, তবে তা বিয়ের আগে হওয়াই উচিত। বিবাহের পর কুৎসিত পরিচ্ছেদে থাকা, খারাপ করে চুল ছাঁটা, বুড়োর মতো মাথা গুঁজে বসে থাকা, এসব। বড় অন্যায়।
পুরুষেরা মেয়েদের সুশ্রী দেখতে চান, মেয়েরাও তেমনি আপন স্বামীকে সুন্দর করে দেখতে চান। ক্ষমতা নাই বলে নারীর সৌন্দর্যবোধের উপর অত্যাচার করা কোনোমতে। ঠিক নয়। স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকের কর্তব্য নিজেদের রুচি অনুযায়ী চলা অপেক্ষা একজনের
আর একজনের রুচিকে লক্ষ্য করে চলেন। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি এই-ই ভদ্রতা। স্বামী, বেশবাস করতে হলে পত্নীকে জিজ্ঞাসা করা দোষের নয়। পত্নীকে নিজের বেশ সম্বন্ধে, অলঙ্কার সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে স্বামীর উপর নির্ভর করা উত্তম। নিজের ফরমাইস মতো কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করা, নূতন নূতন গহনা আমদানি করা কোনোমতেই ঠিক নয়। নিজের রুচিকে তুষ্ট করা অপেক্ষা স্বামীর চক্ষু ও রুচিকে তুষ্ট করতে পারায়, বধূদের পরম গৌরবের বিষয় মনে করা উচিত।
১ম বন্ধু –পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবান না হলেও এরূপ কখনও হয় না।