যা বলছিলাম-শিশুকে মানুষ করে তোলাও আল্লাহর এবাদত। জ্ঞানের সাধনা, মনুষ্যত্বের সাধনা, আল্লাহর কসম বান্দার সেবা, এ বড়ই এবাদত, এটা ভালো করে মনে করা চাই। বলতে কি, এইটেই আসল এবাদত। প্রাণহীন দেহ যেমন কিছু নয়–প্রাণহীন রোজা নামাজ অর্থাৎ যে রোজা নামাজ জীবনের উপর কোনো কাজ করে না-তা কিছু নয়।
শিশুকে মানুষ করে তোলবার জন্য কত দেশের কত পণ্ডিত কত কথা বলছেন, কত চিন্তা করছেন-তার ইয়ত্তা নেই। বস্তুত এ বিষয়ে মানুষের অনেক কিছু চিন্তা করবার আছেনইলে শিশুকে কিছুতেই বড় করে তোলা যাবে না। শুধু রোজা-নামাজ ছাড়া আর কিছু ভাবনার নেই, চিন্তা করবার নেই, ‘সাধনার আর কিছু নেই–আমল’ এখতেয়ার করবারও প্রয়োজন নেই–এই সর্বনেশে চিন্তার ধারা সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। কতক গুলি মানুষ রোজা-নামাজের নামে আবৃত্তি করে আল্লাহর বাক্য-তাদের জীবনকে গঠন করে তোলে না।
ছেলেদেরকে কর্মঠ, শক্তিশালী করে গড়ে তোলবার প্রচেষ্টা করা-বাপ মায়ের কর্তব্য। পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে, তাদেরকে বিপজ্জনক কাজের মধ্যে ফেলে দাও তাদের শক্তি জাগুক। ননীর পুতুল করে ঘরের মধ্যে ভরে রেখ না–এর ফল খারাপ। যখন তারা পিতৃমাতৃহীন হবে, তখন তাদের দুঃখের শেষ থাকবে না। বেঁচে থাকতেই তোমরা আপন আপন সন্তানের কাছে মরে যাও। মানুষের ভিতরে কত শক্তি, কত টেনশন, কত বৃদ্ধি আছে, তা মানুষ জানে না। অভিভাবকদের সম্বন্ধে হাত রেখে চলবার মত শিশু ছেলেদের জীবন আর নাই। বাপ-মায়ের এই মায়া ছেলেদেরকে আরও বিপন্ন করে। নিষ্ঠুরের মতো তাদেরকে ত্যাগ করো না–পিছনে দাঁড়িয়ে থেকে বল-কাজ হাসিল করে পানির মধ্যে ফেলে দাও–ডুবছে দেখলেই দৌড়ে যেয়ে হাত ধর। তার আগে ধরো না। আপন শক্তিতে সে মাটির সন্ধান করতে পারে কি না দেখ।
শিশু বয়স থেকেই ছেলেদের জীবনকে এমনিভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করো না।
ছেলেরা কোনো কাজ করতে যেয়ে যদি কিছু লোকসান করে–দুঃখে করো না, লোকসান ভেব না। মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হলে লোকসানই দিতে হবে।
২য় বন্ধু কহিলেন–পরিবারে প্রত্যেকেকে যদি সংসারের উপর অধিকার না দেওয়া যায়, তাদেরকে যদি বুঝতে না দেওয়া যায়–সংসারের উপর তাদেরও দাবি আছে, সে সংসারে কারো মায়া বসে না। কোনো জিনিস নষ্ট হলেও সেদিকে কেউ ফিরে তাকায় না। আমার ঘর আমার দুয়ার আমার ধান–আমার ক্ষেত, এসব না বলাই ভালো–প্রত্যেককে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করা, এর ফলে বড়ই খারাপ। শাসনের সংসার অপেক্ষা প্রেমের সংসারই উত্তম। এমন কি, দাস দাসীকেও বুঝতে দিও না–সংসারের সে কেউ নয়। তার সংসারের উপর দাবি নাই। বরং তাকে বুঝতে দাও, যেন সংসারের সুখ-দুঃখ লাভ লোকসান আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তার বিশেষ যোগ আছে। নিজের মালিক, সংসারের হর্তাকর্তা বিধাতা। তা সবাই জানে–তবু যা ইচ্ছা তাই করতে পার–এই কথা কখনও মুখে প্রকাশ করো না বরং আল্লা যে মানুষগুলির ভার তোমার উপর দিয়েছেন–তাদের জীবনে সুখ ও আনন্দ দেওয়া, তাদের জীবনকে কর্তব্যপরায়ণ এবং সার্থক করে তোলা এইটেই তোমার ভাবা উচিত। Disport এর মতো ব্যবহার করা বড়ই অন্যায়-তাকে কেউ ভালবাসে না–এমন কি পত্নীও তাকে ভালবাসে না। শুধু অর্থ দ্বারা মানুষকে বশীভূত করা যায় না-মানুষ অন্ন চায় এবং তার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমও চায়।
১ম বন্ধু–যে পরিবারে দুই পত্নী–সে পরিবারের কখনও শ্রীবৃদ্ধি হয় না-সংসারে কেউ কাউকে ভালবাসে না। বিশ্বাস করে না–প্রত্যেকেই স্বার্থপর হয়।
২য় বন্ধু–কথাটা ঠিক। সতীনকে, সতীনের পুত্রকে কি ভালবাসা যায় না? প্রেমহীন, ধর্মহীনরাই এ আপন, ও নয়, এই কথা ভাবে। বিমাতা বৈমাত্রের ভ্রাতা, এসব কথার কোনো মূল্য নেই। মানুষ শয়তানীভাবে পূর্ণ, এই জন্যেই বিরোধ করে-প্রেম করতে ঝুটা বোধ করে।
.
পত্নীর সম্বন্ধে গাম্ভীর্য রক্ষা
২য় বন্ধু কহিলেন–বন্ধু, যদি পত্নী অশিক্ষিত ও অল্পবয়স্ক হয়, তবে তার সঙ্গে সরলতার প্রসার দিও না। বাক্যে গাম্ভীর্য নষ্ট করো না।
১ম বন্ধু–কেন, যাকে ভালবাসি, তার সামনে গম্ভীর হয়ে থাকা কেমন কথা!
২য় বন্ধু –শুধু ভালবেসে সুখী হয় না–যে ভালবাসা পেতে চায়, যে নারীর মানসিক। শক্তি দৃষ্টি দিতে জানে না,কখন কী ব্যবহার করতে হয়, কী কথা বলতে হয় বোঝে না। সে পত্নী হলেও বন্ধু হবার যোগ্য হয় না। ছেলেরা বড় বড় বই পড়ে, আদর্শ পত্নীর একটা ধারণা করে কার্যক্ষেত্রে সে আদর্শ প্রতিমার সাক্ষাৎ না পেয়ে হাড়ে হাড়ে চটে ওঠে। সমাজের মেয়েগুলিকে আদর্শ পত্নীরূপে গড়ে তুলতে হলে, একটু সংযম এবং গাম্ভীর্য চাই। ছেলেমানুষের সঙ্গে এ রকমটা করলে যেমন তার সর্বনাশ হয় ছেলেমানুষ পত্নীকেও সংযমহীন ব্যবহারের মাথায় তুলে দিলে তার সর্বনাশ হয়–নিজেরও ক্ষতি হয়।
অনবরত বকাবকি করাও ঠিক নয়–তাতে অবোধ মনুষ্য-শিশু বিদ্রোহী হয়। শিশু ও ছেলেমানুষ পত্নী একই কথা। একটুখানি সংযম অভ্যাস কর, একটু রয়ে-সয়ে চল। তার পর ধরা দিও।
কোনো অপরাধ করলেও তা পুনঃপুনঃ আঘাত করো না। আঘাতের দ্বারা কোনো কোনো দোষ সংশোধন হয় না–অন্তরে অন্তরে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে। অসন্তুষ্ট নারী কিছু পারুক, আর না পারুক, সন্তানগুলিকে বাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করতে চেষ্টা করে-এ বড় কঠিন কথা।