১ম বন্ধু–মেয়ে দেখবার অধিকার কি আমাদের আছে?
২য় বন্ধু–হ্যাঁ, এটা ছুন্নত-শুধু ছুন্নত নয়-এটা ফরজ, অসম্মতিতে বিয়ে হলে সে বিয়ে জায়েজ হয় না–তা হারাম।
১ম বন্ধু–সম্মতি হয় বই কি?
২য় বন্ধু–যার ‘না’ বলার কোনো অধিকার নাই–তার অসম্মতির কোনো মূল্য নাই। তাকে জিজ্ঞাসা করা একটা প্রহসন মাত্র। আল্লাহর বিধানের সঙ্গে চালাকী!
১ম বন্ধু–তা ঠিক।
২য় বন্ধু–আসল কথা মেয়ের বাপের চালাকী। কোনো রকমে ঢেকেঢুকে গোপন করে গরু পার করা গোছের। মেয়ের সৌন্দর্য ও গুণ সম্বন্ধে তাদের নিজেদেরই সঙ্গেই থাকে, কোনো রকমে ফাঁক দিয়ে একটা দলিলের দাবিতে আটকে ফেলা, তার পর বন্ধন যখন খুলবার উপায় নেই, খুব কঠিন হয়েছে, তখন মেয়ে দেখা যেতে পারে।
ছেলেদের উচিত তারা যেন কখনও দূরদেশে বিয়ে না করে–আপন আপন গ্রামে জানা-শোনা, দেখা মেয়েকে বিয়ে করে–নইলে প্রতারিত হবার বিলক্ষণ সম্ভাবনা; কিংবা নিজের মামাতো বোন নিজের আত্মীয়-স্বজনের দেখা-শুনা মেয়েকে বিবাহ করা উচিত-অন্যথায় জীবনে বিয়ে না করাই ঠিক। অনর্থক জীবনকে ব্যর্থ ও অর্থশূন্য করে লাভ নেই। জগতে ভূতের বেগার খাটার লাভ নেই। জীবনটি অতিশয় দীর্ঘ-এটিকে সহজে ফাঁকি দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়–বিবাহ ব্যপারে এই যে ফাঁকি, প্রবঞ্চনা চলেছে–এতে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি–অথচ কেউ তা অনুভব করে না। কী করে যে তরুণ প্রাণের উপর অভিভাবকেরা এত বড় গুরুতর অত্যাচার করেন তা ঠিক বুঝতে পারা যায় না। বলছিলাম, বিবাহ ব্যাপারে যে প্রবঞ্চনা চলেছে–তাতে উভয় পক্ষেরই দারুণ ক্ষতি। কোনো মেয়ের বিয়ে এ জগতে কোনোদিন আটকায় নি, আটকাবেও না। কারো না কারো চোখে সে সুন্দর দেখাবেই।বুঝতে হবে, সেই তার স্বামী। চোখে যদি না লাগে, ও রুচিতে যদি মন তুষ্ট হয় তাহলে সৌন্দর্যের মূল্য এক পয়সাও নয়। কখনও দুজনার। আত্মীয়তা বন্ধন হবে না-একজনের কথা আর একজনের কাছে কখনও ভালো লাগে না। প্রাণের টানে কেউ কারো সেবা কবে না; ভালবাসবে না–পত্নী পীড়িত স্বামীর শিয়রে বসে রাত্রির পর রাত্রি কাটিয়ে দিবেন, রাস্তায় পরের স্বামীকে দেখবার জন্যে জানালার ফাঁকে গিয়ে উঁকি মারবে না–গোপনে গোপনে একজন আর একজনের অমঙ্গল চাবে না।
১ম বন্ধু–পরস্পরের প্রেমের সঞ্চার হয়ে বিয়ে হয়েছে–তারপর তারা ব্যভিচার। করেছে। এরূপ দেখা যায় নাকি?
২য় বন্ধু–হ্যাঁ, এরূপও হয়। এই ক্ষেত্রেই তাদেরকে অপরাধী বলে ধরা যাবে। কিন্তু যেখানে জবরদস্তি বিয়ে, সেখানে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, গোপনে চিঠি লিখি লেখে, তাকে বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। তবে মানুষের মধ্যে শয়তান ও শয়তানী আছে-তাদের সম্বন্ধে সুরুচি বিধি-ব্যবস্থা, ধর্ম-ভয়, আইন-কানুন কোনো কাজে আসে না।
.
মা
২য় বন্ধু কহিলেন-মা-মাকে প্রশংসা করে অনেকেই অনেক কথা লেখেন ও বলেন, তা তাদের অন্তরের কথা কি না জানি না। মাকে মনুষ্য ঠিক চেনে না, জানে না।
মায়ের প্রাণ, মায়ের সুগভীর ভালবাসা কেউ অনুভব করতে পারে না। মা সন্তানকে যেরূপভাবে প্রেম করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করবার ক্ষমতা আমার নেই। তা অতি আশ্চর্য ও বিস্ময় উৎপাদক, মাতা যদি মস্তকে জুতো দিয়ে আঘাত করেন কোনো কথা বলো না–যেহেতু, সন্তানের প্রতি প্রেম সত্য এবং অপরিসীম। পত্নী যদি তোমার মাতা সম্বন্ধে নিন্দা করেন, পত্নীর উপর বিরূপ হয়ো না, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রেমে কখনও সন্দেহ করো না। এইভাবে মাতা-পুত্রে বিচ্ছেদ আসে। মায়ের সত্য নিবিড় গভীর প্রেমে অবিশ্বাস জন্মে। এইভাবে সন্তান মায়ের কাছে অপরিসীম পাপ করে। যে পাপ করে–তার তুলনা নাই। জীবনের কোনো পুণ্য তা ঢাকতে পারে কি না জানি না।
সমস্ত বিশ্ব একদিকে, মায়ের কাছে সন্তান আর একদিকে। আবার বলি, মাতা সন্তানকে কি চক্ষে দেখে, তা কল্পনাও করতে পারে না।
মা যদি বেশ্যা, শয়তানী, মানুষ, হত্যকারিণী হয়, তবুও মাতৃরূপে সন্তানের কাছে তিনি মহামাননীয়া। নারী যদি পিশাচিনী হয়, তার মাতৃমূর্তিকে অশ্রদ্ধা করতে চাই না।
অনেক সময় বড় হলে, ছেলেপিলের বাপ হলে লোকে মাকে বলে–”চুপ করে থাক, কথা বলো না।”
মা পাগল হলেও কখনও তাকে কঠিন কথা বলো না। নিজে যদি ধনী, সম্মান হও, তাহলে মাকে বেশি করে সম্মান করবে–কি জানি, মা যদি সন্দেহ করে ছেলে অহঙ্কারী হয়েছে, তাহলে ছেলের পক্ষে বড়ই লজ্জার কথা হবে; বরং তার সঙ্গে এমনভাবে চলবে, যেন তিনি তোমাকে ভর্ৎসনা করতে ভয় বা সঙ্কোচ না করেন।
৩. শিশুর উল্লাস
শিশুর উল্লাস
ছেলেদের জীবন
২য় বন্ধু কহিলেন–শিশু উল্লাসে-আনন্দে দেখে বিরক্ত হয়ো না। মানুষ বড় নিষ্ঠুর। শিশুর মুখের হাসি, তার উল্লাস মানুষ সহ্য করতে পারে না তাকে মারতে যায়–কাটতে যায়, দানবের দৃষ্টিতে তার দৃষ্টি নিষ্ঠুর করে তোলে। শিশুর সঙ্গে স্নেহ-মধুর ব্যবহারই ভালো, কারণ ত্রুর দৃষ্টি দেখে, অশ্রদ্ধার ব্যবহার দেখে, কঠিন কথা শুনে-সে ক্রুর দৃষ্টি ফেলতে শেখে, মানুষকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে-কঠিন কথা বলতে শেখে। মানুষই শিশুকে খারাপ করে প্রতিনিয়ত অন্যায় করে শিশুকে হারামজাদা, শয়তান, পাজী বলে–তারা নিজে কত বড় নিষ্ঠুর, শয়তান ও হারামজাদা, তা একটুও চিন্তা করে না। যদি নামাজ পড়তে থাক, শিশু যদি নিকটে গোলমাল করতে থাকে তবে দাঁত সিটকিয়ে বললো না–”দূর হ শয়তানের দল, আমি এবাদতে আছি–বিরক্ত করিস না”–যে এমন কথা বলে, তার এবাদত বৃথা। সে জানে না, এবাদত কাকে বলে? সত্যই মানুষ জানে না-এবাদত কাকে বলে। এবাদত তাদের জীবনকে গঠন করে তোলে না, তাদের মনুষ্যত্বকে জাগায় না, তাদের ভালোমন্দ বুঝবার ক্ষমতা দেয় না। অথবা, কোরান পাঠ ও নামাজের উদ্দেশ্যে তাই। শুধু আরত নামাজের উদ্দেশ্যে নয়–এই জন্যই আমরা মৃত্যুর পথে অগ্রসর হচ্ছি। জীবনকে পূর্ণ সর্বাঙ্গসুন্দর বহুমুখী করে তোলবার কোনো চেষ্টা নাই।