২য় বন্ধু–চরিত্রহীন হয়ে, নারী-জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দাবিকে অস্বীকার করে বড় লোক হয়ে লাভ কী? একটা মৌলবীকে জানি, সে বাড়িতে পত্নীকে রেখে বৎসরের পর বৎসর বিদেশে কাটিয়ে দিত-সেখানে সে শুভ বিবাহ করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতো। সে যদি বাড়ি চলে যেত এবং ইসলাম প্রচার না করতো, তাহলে ভালো ছিল। ইসলাম প্রচার মানে, মানুষকে কলেমা পড়ান নয়। ইসলাম প্রচার মানে–মানুষকে ন্যায়বান হতে বলা।
একটা পীর সাহেবকে জানি,–সে নামাজ পড়তো না–ইসলামের জন্য তার ভয়ানক লাফালাফি, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে! রাত্রিতে ঘুম হয় না!–তিনি ছোট বড় সুন্দর বালকদের সঙ্গে কুকার্য করেন।এ আমার চোখে দেখা। তার ঘরে একটা যুবতী পত্নী আছে–দশ বৎসর বাড়ি যান না, আবার আর একটি বিয়ে করবার জন্য ঘটকের সন্ধানে আছেন।
১ম বন্ধু–কী সর্বনাশ!
২য় বন্ধু–হা, সর্বনাশই বটে! জগতের ভিতরটা আলগা করে দেখতে গেলে ঘৃণায় মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। জগতের পাপের জন্য সাধু আত্মাদের আন্তরিক প্রার্থনা চাই-নইলে বহু পাপপূর্ণ পৃথিবীর কী হবে তা জানি না। জগতে চিরকালই পাপ আছে-হয়ত সাধু-আত্মাদের প্রার্থনাতেই জগৎ টিকে আছে। কোনো কোনো নারী স্বামীকে বিশ্বাস করে না। বাপ এবং ভাই এ মাকেই তারা পরম আত্মীয় মনে করে। এরূপ মনে করা নারী-জীবনের গুরুতর অপরাধ। স্বামীকে অবিশ্বাস করো না–তার চেয়ে হাত টেনে ধর-কখনও ছেড় না–এই বিশ্বাসের বলেই তোমার স্বামীর দেহে শক্তি জেগে উঠবে-বরকত আসবে।
কোনো না কোনো শিল্পকাজ নারীর শেখাই চাই। সংসারের কখন কী অবস্থা হয়, তা তো বলা যায় না। নিজের ভার এমন কি স্বামীর ভার তার সাবিত্রীর মতো নিজেকেও বহন। করতে হবে। স্বামীর ঘাড়ের উপর বৎসর বৎসর নূতন নূতন পুত্র বা কন্যার চাপান এবং তার মেরুদণ্ড দুমুড়ে দেওয়াই পত্নীর জীবনের সাধনা নয়। নারী কি নারী ধর্ম-নারী নিজের জীবনের সার্থকতা ও বিশেষত যেদিন অনুভব করবে ”সেদিন বড় আনন্দেন দিন”।
পীড়িত স্বামী ২য় বন্ধু কহিলেন–একটি নারী সুখের সময় স্বামীর পরম বন্ধু ছিলেন-তারপর স্বামী যখন পীড়িত হলেন, তখন তিনি নাকে কাপড় দিয়ে সরে গেলেন। তার মলমূত্র দেখে তার ভারি ঘেন্না বোধ হতে লাগল। চিরদিনের বিধবা কোনো ভ্রাতার দুঃখে পানি ফেললেন–প্রাণপণে দিবারাত্র ভ্রাতার সেবা করলেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর সেই নারী স্বামীর সম্পত্তি নিয়ে আনন্দে আর এক ব্যক্তির অঙ্কশায়িনী হলেন। যে সমস্ত নারী স্বামীর সুখের বন্ধু, লাভের সময় কোর্টে (Court) নিজের স্বামী বলে দাবি করেন। পীড়ার সময় স্বামীতে ত্যাগ করেন–হয়তো আল্লাহর কাছে তার বিচার হবে–মনুষ্য সমাজে তাদের বিচার না হোক।
“দুঃখেই প্রেমের পরীক্ষা হয়। দুঃখে প্রেমিকের সমস্ত ঘুমন্ত প্রেম উথলিয়ে উঠে। দুঃখের সময় যে প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় না, যে প্রেম চুপ করে থাকে–সে প্রেমকে বিশ্বাস নেই। সে প্রেমের কোনো মূল্য নেই।”
“নারী সমস্ত প্রাণ দিয়ে আপন স্বামীকে প্রেম করুক–তাকে সমস্ত প্রাণ দিয়ে পূজা করুক। এর দ্বারাই স্বামী ও পত্নীর সম্বন্ধে–স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধে মাংসের ক্ষুধার উপর নির্ভর করে না। যেখানে মাংসের ক্ষুধা নারী-পুরুষকে মিলিত করে না থায় কোনো শান্তি নেই,–তা কতকটা অপবিত্র মিলন।
অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার, দুঃখবরণ, এটি অবোধ পশুভাবে আচ্ছন্ন আত্মার দ্বারা সম্ভব নয়। কোনো কোনো উচ্চ বংশীয়া নারী, শিক্ষা ছাড়াও আপন আপন বংশের প্রভাব অনুসারে কতকগুলি সদগুণ লাভ করেন–সেগুলি দয়া, মহত্ব, প্রেম, সহানুভূতি, বিনয়, ক্ষমা। বহু শিক্ষালাভ করেও সে গুণগুলি আপন আপন স্বভাবে পরিস্ফুট করে ভোলা কঠিন সেজন্যে উচ্চবংশীয়া নারীকে পত্নীরূপে পাওয়া খুব সুবিধার কথা। প্রেম মানুষকে ত্যাগী এবং দুঃখবরণ করতে শিক্ষা দেয়–দুঃখের বিষয়, প্রেম জিনিসটা নারীচিত্তে জন্মাবার কোনো সুবিধা এদেশে দেওয়া হয় না–সেটা নারী জীবনে ভয়ানক অসভ্যতা ও ধর্মহীনতা বলে সবাই মনে করে না। পুরুষের মন সম্বন্ধেও এই কথা সত্য। কোনো নারীর প্রতি ভালোভাবে কোনো পুরুষের মন আকৃষ্ট হলেও লোকে তাকে শয়তান ও অসভ্য বলে থাকে। আমাদের এই দেশে দম্পতি বন্ধনে কোনো প্রাণ নেই–প্রেমের স্বাধীন সহজ প্রকাশ নেই।-একটা নীরস কঠিন জীবনের ধারা। নর-নারীর মনের উপর একটা অন্যায় অত্যাচারই চলেছে।
.
কৃপণতা
২য় বন্ধু, কহিলেন-বন্ধু, কোনো কোনো মানুষ এত কৃপণ যে তারা কারো পাতায় ভাত দিতে হলে হিসাব করে–এই ভাতগুলির দাম দুই আনা। যারা দরিদ্র তাদের মনে এই ধরনের হিসাব জন্মান সম্ভব হতে পারে, কিন্তু যারা ধনী, তাদের এই প্রকারের আচরণে খুবই ঘৃণা হয়।
১ম বন্ধু–এরূপ ম্লেচ্ছ না হলে কি টাকা হয়?
২য় বন্ধু–মানুষকে অন্নবস্ত্র দেবার জন্যে, মানুষকে সমাদর করবার জন্যেই টাকা। টাকা হয়ে যদি মানুষ এমন ইতর হয়, তবে তার দরিদ্র থাকা উত্তম। প্রত্যেক কাজেরই সীমা আছে-অতিরিক্ত দানশীলতা বা পয়সার অপব্যয় করা ভালো নয়।
–তাতে কেউ অসন্তুষ্ট হয়ে না। যার ঘরে অন্ন নেই, তার পক্ষে কোনো অর্থশালী আত্মীয়কে বস্ত্র উপহার দেওয়া উচিত–এ কথা আমি কখনও বলি না। কিন্তু যা সঙ্গতি আছে, সে যদি প্রয়োজনের সময় চোখ কান ঝুঁজে সরে যায় সেটা দেখতে ভালো দেখায় না।