তবে জামাই-এর শ্বশুর বাড়ির কোনো উপহারের প্রতি লোভ করা ঠিক না। এ দাও, ও দাও, এরূপ কোনো কথা বলে নিজের মর্যাদা বা গুরুত্ব নষ্ট করো না।
মাতা ও পিতার পুরাতন ছোট-বড় আত্মীয়ের সংবাদ রাখা, তাদের সঙ্গে যোগ রাখা, ভদ্রলোকের পক্ষে নিতান্ত দরকার। যে সকল বড়লোক আত্মীয়ের কাছে তাঁদের নাম করা এবং দরিদ্রদেরকে ঘৃণা করা কোনোমতে ঠিক নয়।
অত্যধিক আত্মীয়-প্রীতির ফলে অপরিচিত ব্যক্তি বা অন্যের উপর অত্যাচার করবার স্বভাব কোনো কোনো লোকের আছে–এটা সম্পূর্ণ ইসলামের খেলাপ। তোমার উপর সকলেরই দাবি আছে। নিতান্ত অপরিচিত যে–সেও মনুষ্যরূপে তোমার আত্মীয়-স্বজন যুগ যুগ ধরে তোমার বিপদে ও সুখে সহানুভূতি জানিয়েছে–তোমার জয়ে আনন্দ করেছে–তোমার লাঞ্ছনায় দুঃখে পেয়েছে তাদেরকে ত্যাগ করো না-ভুলো না।
দিবারাত্রি টাকার লোভে পথে পথে ঘুরে বেড়ান–শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা–কারো সঙ্গে কথা বলবারও সময় না পাওয়া মানুষের জীবন নয়, প্রতিদিন কিছু সময় এবাদত বন্দেগীর জন্য ব্যয় করা, অর্থাৎ আল্লাহ সম্বন্ধে, আত্মার অসত্যে, ধ্যান করা, পত্নীর সঙ্গে কিছু সময় আলাপ করা মায়ের সঙ্গে, পরিবারবর্গের সঙ্গে কথা বলা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে হাসি ঠাট্টা বা গল্প আলাপ করা … মাঝে মাঝে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা নিতান্তই দরকার। আত্মীয়তা-লৌকিকতা, এসবও জীবনে দরকার।
পত্নী ও মাতার জীবনকে কাজের টানে নিঃসঙ্গ করে তোলা বড়ই অন্যায়। পত্নী ও মাতার জীবনে যত সময় একটা কঠিন অভাব থাকে সেটি আর কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা হয় না। ব্যস্ততা, কাজ, এর মধ্যে স্মরণ করতেই হবে। পরিবারস্থ ব্যক্তিগণের সঙ্গেও কিছু সময় ব্যয় করতে হবে।
কোনো কোনো অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তির আলাপে ও ভদ্রতায় কোনো প্রাণ নাই। এরা কাজের মতই লৌকিকতা পালন করেন–এঁরা যে কত বড় অমানুষ!
বাড়ির বৈঠকখানা অপরিষ্কার রেখে কখনও বাড়ির মধ্যে সেজে থেকো না, পাছে লোকে ডাক দেয়, পাছে বাড়ির অতিথি আসে–এই ভেবে বাহির বাড়িতে দেখা দিতে ভয় করো না। জেনো, যে অতিথি দেখে ভয় করে–সে নিজেকেও অন্ন দিতে সমর্থ হবে না। যদি কিছু দিনের জন্য অবস্থা খারাপ হয়–সবিনয়ে অতিথির কাছে ক্ষমা চাও-বন্ধু-বান্ধবকে চা বিস্কুট না দিয়ে শ্যামল তৃণবনে এক সঙ্গে অন্তত কিছুক্ষণ গল্প কর-এতে পয়সা খরচ হবে না। মনুষ্য চা-বিস্কুট খেতে চায় না-মনুষ্য চায় প্রাণ, সরল আলাপ, সহানুভূতি। এগুলি বিনামূল্যের দান–এ দিতেও যদি কৃপণতা করতরে বৃথা তোমার জীবন।
সুখ-দুঃখ চক্রের মতো মানুষের জীবনে ঘুরতে থাকে। চিরদিনই যে মানুষ দুঃখী থাকবে, এমন কোনো কথা হতে পারে না। বৈধ যে কোনোভাবে পয়সা অর্জন ক। নিজে খাও, পরিবারগণকে খেতে দাও, সুখী কর-প্রতিবেশীকে দান কর। দরিদ্র থেকো না–দরিদ্র থাকা অন্যায়। মানুষের ভয়ে লোক লজ্জায় সম্মান হারাবার ভয়ে দরিদ্র থেকো না।
নিজের ধূমপানের অভ্যাস না থাকলেও বন্ধু-বান্ধবের জন্য সে ব্যবস্থা করতে হয়। কখনও অতিথি বন্ধু-বান্ধবের সমেনে ধূমপানের অপকারিতা সম্বন্ধে কোনো বক্তৃতা দিও না। সেজন্য সভাগৃহ আছে। পান সবাই খান–সুতরাং পানের দ্বারা বন্ধু-বান্ধবের সংবর্ধনা উত্তম। এ সম্বন্ধে অনেক অবস্থাপন্ন লোকও কৃপণতা করে–সেটি ভালো নয়। অবস্থায় যদি না কুলায়, তবে পান প্রয়োজন নাই। কেউ কেউ বাড়িতে পানের গাছ লাগিয়ে থাকেন, এটি মন্দ কাজ নয়। যখন তখন কাজ চলতে পারে।
খাতির-সম্রম করা ভালো–কিন্তু অত্যাধিক ভালো নয়।
.
পত্নীর-সঙ্গে
২য় বন্ধু কহিলেন–বন্ধু এদেশীয়, লোকদের একটা নিয়ম আছে, তারা অন্যকে চরিত্র বল ও দাম্পত্য ধর্ম অপেক্ষা অধিক মূল্যবান মনে করে। যারা বড় লোক তাদের বউ-এর সঙ্গে বাস করবার অধিকার আছে, বাকি লোকগুলো নামে বিয়ে করবে; কিন্তু তাদের দাম্পত্য ধর্ম পালনের কোনো অধিকার নাই। নামে মাত্র বিয়ে করে পত্নীকে বাড়িতে রেখে বাবু কলকাতায়-বনিতার ঘরে ভাত খায়, চাকরি করে, officiating পত্নী দিয়ে কাজ চালায়, বাড়ীতে এসে দিব্যি তেড়ী কাটা, শাদা-কাপড় পরে। Wrapper গায়ে দিয়ে ভদ্রলোক হয়। অবশ্য হিন্দু সমাজেই এরূপ দেখেছি।
বিবাহের পর নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করা, কোনোমতেই ঠিক নয়। সে দীন মজুর হোক বা রাজা হোক, স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে যদি সংসারের দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়, তাহলে জীবন এত দুঃখময় ও ভার বলে মনে হয় না। সংসারের সমস্ত উদ্বেগ যাতনা পুরুষ নিজের ঘাড়ে নেন বলে সংসারের এত দুঃখময় ও ভার বলে মনে হয় না। সংসারের সমস্ত উদ্বেগ যাতনা পুরুষ নিজের ঘাড়ে নেন বলে সংসার এত অশান্তির ও শূন্যময় মনে হয়। এ দায় গোলাম জাতির, নারী-পুরুষ উভয়কে গোলাম হতে হবে। যারা বাদশাহ ও শূন্যময় মনে হয়। এ দায় গোলাম জাতির নারী-পুরুষ উভয়কে গোলাম হতে হবে। যারা বাদশাহ বা নবাব তাদের বৌ বাক্সবন্দী হয়ে জড়-বিবি। বলতে কি মানব মাত্রেই গোলাম ও দাস–এখানে বাদশাহ বা নবাব হবার কোনোমতে অধিকার করো না। হাত, যেমন, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন–শরীরের ভার নয়-পত্নীও তেমনি স্বামীর পক্ষে ভার নয়,–ওটি শরীরের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিস ওটিকে সঙ্গে রাখতেই হবে-যেখানেই থাক, মাঠে-প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশতলে, পথে, গাছে, জঙ্গলে সর্বত্র স্বামী এবং পত্নী, একসঙ্গে থাক। কোনো ভয় নেই। তবে যেখানে তোমার হাত, সেইখানে যেয়ে দাঁড়িও না–দুঃখ পাবে বলতে কি, দুঃখ। কোনো-কোথাও নেই–নারী-পুরুষ যেখানে একসঙ্গে হাত ধরে দাঁড়ায়, সেখানে মঙ্গল। এবং কল্যাণ আসবেই। পরস্পর হাত ধরে দাড়িও, এই আমার অনুরোধ কোনো সময় একজন আর একজনের হাত ছেড় না। এক মুহূর্তের জন্যে নয়।