.
স্ত্রীলোকদের সাংসারিক আহার
১ম বন্ধু–কোনো কোনো পরিবার স্ত্রীলোকের আহার সম্বন্ধে বড়ই অমনোযোগী।
২য়–এরূপ পরিবার ধ্বংস হউক। যে পরিবারে নারীর অসম্মান হয়, সে স্থান হইতে আল্লাহর রহমত দূর হয়।
১ম–এরূপ কেন হয়?
২য়–অনেক সময় মেয়েরা নিজে কিছু না খেয়ে স্বামী ও পুত্রদেরকে সবকিছু দিয়ে ফেলেন। এমন কি বাড়ির মেয়ে যারা, দাসী যারা, তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না–এটা হৃদয়হীনতার পরিচয় দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
১ম–কিন্তু মেয়েরা যদি নিজ হস্তে নিজের অংশ জোর করে আদায় করেন, তাহলে তাদের নিন্দা চতুর্দিকে প্রচারিত হয়।
২য়–কোনো কাজেরই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। একেবারে না খাওয়া কিংবা বাড়ির কর্তার প্রতি বিশেষ মনোযোগী না হওয়া দুটিই দোষের। বাড়ির কর্তার শরীরটি ঠিক না থাকলে সমস্ত সংসারটাই অচল হয়ে পড়ে, সুতরাং তার সম্বন্ধে বিশেষ যত্ন নেওয়া চাই। আবার মেয়েরা যদি কিছু না খায়; অত্যধিক পরিশ্রমে, এর উপর ব্যাধি ও সন্তান প্রসবের আঘাতে তাদের শরীর অল্প সময়ের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ির কর্তার কর্তব্য মেয়েদের খাদ্যাদি সম্বন্ধে বিশেষ নজর রাখা।
১ম–টানাটানির সংসারে এবং একান্নভুক্ত পরিবারে কতগুলি লোকের এরূপ কষ্টই হয়ে থাকে যেখানে সকলের একজনের উপর নির্ভর করে, সেখানে একান্নভুক্ত পরিবারে কোনো অসুবিধা হয় না। তাতে প্রত্যেকেরই মনুষ্যত্ব ও কর্মশক্তি জাগ্রত হয়, পরিবারে কারো উপর অযথা অত্যাচার হয় না।
১ম–পরিবারের খরচপত্র সম্বন্ধে হিসাব রাখা কেমন?
২য়–এইটি দরকার। হিসাব না রাখা মুসলমান সমাজের একটি মস্ত বড় দোষ। সংসারের আয়-ব্যয়ের সহিত রীতিমতো হিসাব রাখা চাই। আয়-ব্যয় এর বিল কত এসব ঠিক রাখতে হবে। এর প্রভাবে পরিবারে, নানা প্রকার বিশৃঙ্খলা, মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়–অনেক অবিচারও হয়। প্রত্যেক পরিবারের কর্তব্য নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা। সব সময় পরিবারের Financial অবস্থা চোখের সামনে রাখেন।
১ম–পরিবারের কেউ যদি পীড়িত, দরিদ্র হয়ে পড়েন, তার সম্বন্ধে কী করতে হবে?
২য়–তার সম্বন্ধে প্রত্যেকেরই বিবেচনা করা কর্তব্য। তার অভাব-অভিযোগ পূরণ করতে হবে। কর্মহীন থাকলে সৎ পরামর্শ দিয়ে বা অর্থ সাহায্য করে তার জীবনের একটি গতি করে দিতে হবে। বস্তুত নিষ্ঠুরের ন্যায় চোখ-কান বুজে বসে থাকা উচিত নয়। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও প্রেম, এরই নাম ইসলাম। একটু থামিয়া কহিলেন–বন্ধু জীবন সম্বন্ধে এটু সূক্ষ্ম কথা বলে দিচ্ছি, মনে করে রেখ। কখনও সময়ের পূর্বে পর্যন্ত বিচলিত হয়ো নানা মরে ভূত হয়ো না;-পূর্ব হতেই ভীত হয়ো না-শেষ পর্যন্ত দেখো! ভবিষ্যৎ কী হয় বলা যায় না!–ছোট বড় সকল কাজেই এই নিয়ম।
১ম–কোনো কোনো পরিবার মেয়েদের কাপড়চোপড় সম্বন্ধে বড়ই টানাটানি করে।
২য়–নিজেদের পোশক-পরিচ্ছেদ যথেষ্ট আর মেয়েদের বেলায় যত অভাবের উল্লেখ এ অত্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। বুদ্ধিমান বিবেচনাশীল কর্তা যিনি তাঁরই এ সম্বন্ধে বিবেচনা চাই।
.
অবস্থার উন্নতি
২য় বন্ধু–কোনো পরিবার যদি বাড়িতে দালান-কোঠা দেয়, টাকা উপায় করে-তাকে অযথা বিশেষ প্রশংসা করতে পারি না। নিম্নস্তরের লোকদের কাজে পার্থিব উন্নতি খুব প্রশংসার বিষয় এর উল্লেখযোগ্য ঘটনা সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি কখনও কোনো জাগতিক ভাবে অর্থশালী লোক সম্বন্ধে বলো না–অমুক তোক বেশ উন্নতি করেছে।
১ম–তা আমি কখনও বলি না।
২য়–অসত্য, অন্যায়, মিথ্যাকে আশ্রয় করে যারা বড় লোক হয়–তারা কখনও ভদ্রলোক নয়, তাদের বাড়ির মেয়েরা সোনার গহনা পরুক। জাগতিক প্রাধান্যের জন্য কখনও অপবিত্র পথ অবলম্বন করে বড়লোক হতে নাই–কারণ জীবন ক্ষণস্থায়ী। আত্মাকে বিনষ্ট করে ২/৪ লোকের প্রশংসিত দৃষ্টি লাভ করে কী লাভ? ধর্ম প্রচারের জন্যে মানবসেবার জন্যে, আল্লাহকে প্রচার করবার জন্যে অর্থশালী হওয়া যায়–তাছাড়া লোককে জব্দ করব, জমিদারি করব এইসব উদ্দেশ্যে বড়লোক হতে ইচ্ছা করা হারাম। সত্যের পূজারী জ্ঞানের সাধক হয়ে দরিদ্র জীবন-যাপন করা বরং উত্তম।
১ম–অর্থ সঞ্চয় করা কেমন, বিপন্ন মানুষের কাছে ঋণ করা কেমন?
২য়–খোদার কার্য কর। তিনি তোমার যা কিছু জগতে প্রয়োজন তা দেবেন, দিবারাত্রি যদি টাকার ভাবনা ভাবলে, উপসনায় বসতে যদি জাগতিক অর্থ সম্পদের চিন্তা করলে, তাহলে তোমার খোদার চিন্তা কীভাবে হবে? বস্তুত দিবারাত্রি ‘হায় অন্ন’ ‘হায় অন্ন’ করতে থাকে।-এটা ধার্মিক জনের কাজ নয়। জীবনের কর্তব্য পালন কর। জাগতিক আকারে মীমাংসা হবে। নিশ্চয়ই হবে। খোদা মানুষের কার্যে কখনও মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেন নাই। আর যদি নাই হয়–তাতেও দুঃখ নাই।
১ম–তাহলে অর্থচিন্তা মোটেই করতে নেই?
২য়–আমি কি তাই বলছি? কতকগুলি লোক আছে যারা দিবারাত্রি অর্থের চিন্তায় থাকে, সেইটে দোষের। নীরবে মুখ বুজে কাজ করে যাও, অর্থ উপায়ের পথ দেখ। মহাপুরুষেরা বলেছেন অদ্য অদ্যকার জন্য, কল্যকার জন্য কল্যকার চিন্তাই যথেষ্ট। কল্যকার কথা ভাবতে নেই। কার্যক্ষেত্রে ঠিক এরূপভাবে মানুষ চলতে পারে না। ধর্মহীন লোকদের কাছে যাতে হাত পাততে না হয়, এজন্য কিছু কিছু সঞ্চয় করে রাখতে হবে। অভাবে মনুষ্যত্ব থাকে না–মনের উদারতা নষ্ট হয়, নিঃসম্বল কদৰ্পর্কহীন হয়ে পরের কাছে হাত পাতা গৃহস্থের পক্ষে বড়ই লজ্জা ও অপমানের কথা। অর্থশালী লোকেরা অনেক সময় হৃদয়হীন ও কটুভাষী হয়, কিন্তু এ সব দোষ যদি বড়লোকদের নাও থাকে, তবে তারা জগতের মহা-উপকারী ও সম্মানিত বান্দা। মহাপুরুষেরা বড়লোকদের কুস্বভাব ও হীনতা দেখে অর্থকে ঘৃণা করেছেন; কিন্তু সচ্ছল জিনিসটা নিন্দনীয় নয়, বরং এটি প্রত্যেক পরিবারের জন্য নিতান্ত প্রয়োজন। এটির অভাব বড়ই দোষের। জমিদারি, গাড়ি, ঘোড়া, রৌশন চৌকি, পাল্কি, চেয়ার এসব প্রয়োজন নাই। বেহুদা বে-আন্দাজি খরচ এবং অতিশয় কৃপণতা উভয়ই দোষের।