বাস্তবিক এরপর যুবকটির স্বভাবে আশ্চর্য পরিবর্তন দেখা গেল। তার স্বভাবের সমস্ত হিংস্রভাব দূর হয়ে গেল। সে নিজের সমস্ত দোষ-ত্রুটি একে একে বর্জন করতে লাগল। ক্রমে ক্রমে তার প্রশংসা চতুর্দিকে হতে লাগল। সে অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্থ উপার্জনে মন দিল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সে একজন অর্থশালী লোক হয়ে পড়ল। তারপর সেই বালিকা তাকে খুব আনন্দের সঙ্গে বিয়ে করলো।
পুরুষের চরিত্রে মেয়েদের শক্তি অসাধারণ। এই গুপ্ত রহস্য যেদিন আমাদের দেশের মেয়েরা বুঝবে, সেইদিন জাতির যথার্থ কল্যাণ হবে। মেয়েদের প্রভাবে পুরুষ পিশাচ হয়, তাদেরই প্রভাবে পুরুষ কর্মশীল, চরিত্রবান এবং সর্ব প্রকার কল্যাণ লাভ করে।
১ম–আমাদের দেশের মেয়েরা পুরুষের পায়ের বেড়ী।
২য় বন্ধু–নারী পুরুষের জীবনের ভার না হয়ে বরং আশীর্বাদ হবে, এইটেই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। শুধু কামুকতার জন্য নারী ব্যবহৃত হবে, এই মানসিকতা যারা পোষণ করে তারা নিতান্তই ভুল করে। কামুকতার বর্তিকা যেমন, পুরুষের জীবনে নারীও তেমন। নারীও মানব জীবনের আশীর্বাদ। এই নারী জীবনকে যারা সার্থক ও সুন্দর করে তুলতে চেষ্টা করে না তারা পাগল। নারীর কী কর্তব্য, জাতি গঠনে, যাদের স্পর্শে সে থাকে তাদের সম্বন্ধে আপন প্রিয়তম স্বামী সম্বন্ধে সে তার জীবনকে কতখানি সার্থক করতে পারে–এ জ্ঞান তার নেই।
১ম–নারী তো দাসী–সে কেবল কাজ করবে, সেবা করবে, হুকুম পালন করবে–তার কি আর কোনো কাজ আছে? তার জীবনের আর কি কোনো বিশেষত্ব আছে?
২য়–হ্যাঁ, নারীজীবন এদেশের যেমন বিশেষত্বহীন, এমনটি আর কোথাও নয়। পুরুষের-চাইতে নারী জীবনের মূল্য বেশি। নারীর চরিত্র-প্রভাব সমস্ত জাতির জীবনে পড়ে। নারী যদি জ্ঞানবতী হতো, তাহলে বুঝতে পারত তার জীবনের মূল্য কত বেশি, তার কর্তব্য কী-তার জীবনের বিশেষত্ব কী? শুধু সন্তান প্রসব করা, শুধু কামনার বস্তু হওয়া নারীর কাজ নয়,অথচ নারীকে শুধু ধারণাই দেওয়া হয়।
.
পিতামাতার দাবি পরচর্চা
১ম–বন্ধু। আমি একটা ছেলেকে জানি, সে তার বুড়ো বাপকে টাকা দেয় না, বলে বাপ বড় গরিব।
২য়–কেন, এরূপ হবার মানে কী? বাপের কোনো খবর নেয় না? সে কি নিজের ছেলেকে ভালোবাসে না।
১ম–হ্যাঁ, বাসে বইকি, কোলে করে, চুমো খায়।
২য়–বটে! তুমি কিছু শুনেছ না কি?
১ম–হ্যাঁ, বাপ আবার বিয়ে করেছে এই তার অপরাধ।
২য়–সে কি? বড় অন্যায় কথা। বাপ যদি বিপত্নীক হয়ে আবার বিয়ে করতে চান, তাতে কারো বাধা দেওয়া উচিত নয়। এমন কি মাকেও বাধা দেওয়া উচিত নয়, সেটা নিছক কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছু নয়।
১ম–মাতাপিতার সহিত পুত্রের সম্বন্ধ কী?
২য়–মাতাপিতা পুত্রকন্যাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন। তারপর আর কোনো কর্তব্য নাই।
১ম–পুত্রের কর্তব্য কী?
২য় –বিত্তশালী পুত্র মাতাপিতাকে প্রতিপালন করবে। এটা করা ফরজ। মাতপিতা যদি অবস্থাপন্ন হন, তবু নিজের আয়ের কিছু কিছু মাতা এবং পিতাকে পৃথক করে বা অবস্থা বুঝে একসঙ্গে দিতে হবে। পুত্রের অবস্থা যদি খারাপ হয়, তাহলে ধনী পিতামাতাকে কিছু না দিলেও দোষ নাই।
১ম–দরিদ্র পিতামাতাকে ত্যাগ করা কীরূপ?
২য়–এ মহাপাপ। কাপুরুষতা মনুষ্যত্বের পক্ষে লজ্জাজনক।
১ম–পিতামাতা যদি দুষ্ট ও বদমাইশ হন, তাহলে কি তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে না?
২য়–না, কখনও নহে। তাঁদের সঙ্গে সম্বন্ধ না রাখতে পার, কথা না বলেতে পার, কিন্তু তাঁদের খরচপত্র যোগাতে হবে। পিতা মন্দ হতে পারেন, কিন্তু মাতা পিশাচী হলেও তার প্রেমে কখনও সন্দেহ করো না।
১ম–পিতার খামখেয়ালীর জন্য অর্থ যোগান কীরূপ?
২য়–পিতার মোকদ্দমার খরচ, মারামারির খরচ, কিংবা কোনো খেয়ালী বাহুল্য খরচ পুত্র বহন করতে বাধ্য নয়। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগতভাবে সমাজ, মানুষ ও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। একজন আর একজনের খেয়াল মেনে চলতে পারে না। তবে মোটের উপর বিরোধ জিনিসটা ভালো নয়। মুরুব্বীদের কর্তব্য সেয়ানা স্বাধীন পুত্র-কন্যাদের উপর অত্যধিক প্রাধান্য না দেখানো। ছোটদের কর্তব্য মুরুব্বীদেরকে যথাসম্ভব সম্রম করে চলা।
১ম–বাল্যকালের শিক্ষার দোষেই ছেলেমেয়েদের স্বভাব গঠিত হয়। ছেলেমেয়েদের স্বভাব মন্দ হয়। তবে সে কথা না বলাই ভালো। সমস্ত পুত্রকন্যাই জগতে নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
১ম–এই জন্যই উপযুক্ত শিক্ষকের হস্তে ছেলেমেয়েদের চরিত্র-গঠনের ভার দেওয়া উচিত।
২য়–দেশের পিতামাতা ছেলেদের মনের মনুষ্যত্ব জাগাবার কোনো বন্দোবস্ত করেন। তার ফলে ছেলেরা লেখাপড়া শেখে; কিন্তু বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার স্বার্থপর, নিষ্ঠুর, অনুদার, আত্মসুখানুসন্ধানেৎসু, মিথ্যাবাদী, প্রগলভ, অপবিত্রচিত্ত, অর্থলোভী এবং দাম্ভিক হয়ে ওঠে। ধিক এরূপ পিতামাতা।
১ম–আচ্ছা কোনো কোনো লোক মনে আঘাত পেয়ে সামনা সামনি উত্তর দিতে না পেরে অপরের কাছে যেয়ে মনের গরম প্রকাশ করে এবং তার সঙ্গে পরম বন্ধুত্বের ভাব দেখায়।
২য়–পরনিন্দা, পরচর্চা, ক্রোধ পোষণ-এসব ভালো নয়। যা হয় সবিনয়ে সামনা সামনি বলাই ভালো। তবে মূর্খ ও সত্যবর্জিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলবে
–নিন্দাকার্যটি জীবনের ব্যবসা করে নেওয়া ঠিক নয়। যথাসাধ্য মানুষের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর। দোষ-গুণে মনুষ্য-স্বভাব গঠিত। সমস্ত মানুষকে যথাসম্ভব উত্তম মনে করতে চেষ্টা কর।