যে পাপিনী নারীর কটাক্ষে পাগল হয়েছে; দিগহারা হয়েছে, তার রক্ষা নাই, নরক হতে নরকে যে ছুটে বেড়াবে, তার শান্তি নেই। তার সুখ নেই, পাপিনী সুন্দরীর দেহ সর্বদাই বিয়ের উৎস–তাহা দগ্ধ করে কেবল পিপাসা বাড়ায়। মৃত্যুর বিভীষিকায় পথিককে উদ্ভ্রান্ত করে, মাতাল করে, পাগল করে। সর্বদাই সাধ্বী নারীতে ডুবে থাকে, তাকেই ভালবাস-নির্লজ্জের ন্যায় ভালবাস, সাধ্বী নারীর মুখে জগতের আশীর্বাদ, মানুষের আয়ু-স্বাস্থ্য শান্তি, শক্তি, জীবন ও আনন্দের কারণ। যে পরম নিত্য সত্যের পরিচয় পেতে চায়–তাকে প্রথমে নারীকেই দেখতে হবে। নারীকে ত্যাগ করে, নারীকে উপহাস, অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করে কেউ খোদাকে পাবে না। খোদার স্বরূপ পরিপূর্ণভাবে নারীতে ফুটে উঠেছে। মন যদি পত্নীতে ক্লান্ত হয়ে থাকে, চক্ষু যদি পাপ পথে হাঁটে, তবে সে চোখ তুলে ফেলে দাও। হৃদয় যদি অন্য নারীর প্রতি পাপভরে আনত হয়, তবে সে হৃদয়ে শলাকা বিদ্ধ কর। আপন আপন পত্নীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, পাপ স্বীকার কর এবং শান্তি গ্রহণ কর।
পতিতা কুহকিনী নারীর সংখ্যাধিক্যে পৃথিবী ছেয়ে গেছে। এদের পাপ পদভাবে ধরণী ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর মানব-সমাজের পক্ষে যুদ্ধবিগ্রহ, নারীভয়, দুর্ভিক্ষ অপেক্ষা এদের অস্তিত্বই সমূহ বিপদের কারণ হয়ে পড়েছে। এদের অগ্নিনিশ্বাস হতে মনুষ্য। সমাজকে রক্ষা করতে হলে সাধ্বী নারী-সমাজকেই ব্যস্ত হতে হবে চিন্তিত হতে হবে। ধরণীর সমস্ত পথ অলিগলি, আলো-বাতাস বিঘ্নসঙ্কুল হয়ে পড়েছে। অতএব নারীকে বলি–হে নারী! তোমরা আপন স্বামীকে অতিশয় সন্তর্পণে রক্ষা কর। স্বামী হারার মতো মহাবিপদ নারী জীবনে আর নাই। জগতের সমস্ত ধন-সম্পদ হারিয়ে যাক, একটা মনুষ্য আত্মা যেন না হারায়-আপন আপন স্বামীকে তোমরা কখনও হারিও না।
নারী আপন বিপদের কথা মোটেই জানে না। তার কোন সময় যে কী সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে সে সম্বন্ধে সে মোটেই সজাগ ও সতর্ক নয়। তার ঘরে সিঁদ দেবার জন্যে কুহকিনী নারী, চারদিকে জাল বুনে রেখেছে, যে-কোনো মুহূর্তে সে জালে কোনো দুর্বলচিত্ত এমন কি সবলচিত্ত পুরুষও আটকা পড়ে জীবন, যৌবন, ধর্ম, মনুষ্যত্ব, স্বাস্থ্য, অর্থ, চরিত্র, স্ত্রী-পুত্র সব হারাতে পারে।
তারপর বললেন–সমস্ত সতী সাধ্বী নারীকে আজ বেশ্যা (?) হতে হবে।
১ম–কী বলছো? কী কথা বলছো, কী কথা বল যে, কী ভয়ানক কথা বল হে?
২য়–হা, ঠিক কথাই বলছি। নইলে রক্ষা নেই। সমস্ত মানুষই বিনষ্ট হবে?
১ম–কী রকম?
২য়–তুমি জান না এক সময়ে এক সাধ্বী নারী ক্রন্দন করতে করতে এক বুজুর্গ, মস্তান ফকিরের কাছে যেয়ে বললেন—”মহারাজ, আমার স্বামী বেশ্যাসক্ত হয়েছে, কুহকময়ী নারীর পাপমুখ তাঁকে হরণ করেছে; আমার প্রতি দয়া করুন।“ বুজর্গ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন—”তোর স্বামী বেশ্যাসক্ত হয়েছে, তুইও যেয়ে খানকী হ।”
পীরের কথা শুনে সাধ্বী অবাক হলেন, এত বড় অসম্ভব কথা পীরের মুখে। প্রতিবাদ করার তো উপায় নাই। নারী বাড়ি এসে কেবলই ভাবতে লাগলেন। পীরের হুকুম না মানলে চলবে না। বাস্তবিকই একদিন তিনি কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরসহ ছদ্মবেশে যে শহরে তার স্বামী নেশায় মেতেছিলেন সেই শহরে যেয়ে উপস্থিত হলেন, তরপর সেখানে এক বাড়ি ভাড়া করে চতুর্দিকে প্রচার করে দিলেন-এক মহাসুন্দরী নাচওয়ালী এখানে এসেছে যার ইচ্ছে তিনি উপযুক্ত মূল্য দিয়ে তার সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। সদাগরের ছদ্মবেশিনী পত্নী দরজায় বাদী-দাসী রেখে দিলেন। কত লম্পট, কত বড় লোক আমীর এসে বিবির দরাজায় হানা দিলেন। দাসী গিয়ে বিবির কাছে চিঠি পাঠালেন। বিবি সবাইকে ফিরিয়ে দিলেন। সবাই ম্লানমুখে নাচওয়ালীর দরজা হতে ফিরে গেলেন।
একদিন এক সদাগর এসে দরজায় তার নিবেদন জানালেন। বিবি চিঠি পেয়ে বুঝতে পারলে–এইবার তার ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে। ইনিই তার স্বামী, এইবার তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। বিবি বলে পাঠালেন-যদি বহু হাজার টাকা দিতে পার তবে বিবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বদমাইশ সদাগরের আর তো কোনো কাজ ছিল না, কোথায় কোন সুন্দরী আছে, তার সন্ধান নেওয়াই ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। এক মহাসুন্দরী নাচওয়ালীর সংবাদ পেয়ে তার মাথা ঘুরে গেল। সমস্ত কাজ ত্যাগ করে তিনি এই নূতন বিবির সঙ্গে দেখা করতে এলেন; কিন্তু শুনলেন বিবির সঙ্গে দেখা করতে হলে লাগবে বেসুমার টাকা। কিন্তু তা বলে। কি হবে। এই সুন্দরীর প্রেম লাভ করতেই হবে নইলে জীবন তার ব্যর্থ! সদাগরের যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে-মাল, জাহাজ যা কিছু সব বিক্রি করে-পঞ্চাশটি হাজার টাকা নজর দিয়ে বিবির সঙ্গে দেখা করলেন। এদিকে বেশ্যারূপী সদাগরপত্নী দিনরাত্র আল্লা আল্লা করছেন। এবাদত করছেন তার খোদার কাছে কাঁদাকাটা করে বলছেন খোদা আমার স্বামীকে মিলিয়ে দাও।
সদাগর ছদ্মবেশী বিবির সঙ্গে দেখা করলেন। কাতর ভাবে তার প্রণয় প্রার্থনা করলেন, ছদ্মবেশী নারী জাঁকালো পোশাক রং বেরং এর ঢং করে নিজের স্বামীকে মুগ্ধ করে বললেন–আচ্ছা, আমরা যখন উভয়ে উভয়ের প্রেম মজেছি তখন আর এখানে থাকা কেন, চল আমার তোমার বাড়িতে যাই, সারা দিনটা প্রেমে আনন্দে এক সঙ্গে কাটিয়ে দেব–জীবন আমাদের কী সুখেরই হবে। সদাগরকে আর পায় কে? জীবনে কী মহাসৌভাগ্য লাভ। যার প্রণয় লাভ করতে শত শত লোক ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে–সেই নারী তার প্রেমপ্রার্থী!