কেউ যদি বদ হয়ে ওঠে-তবে সে তো বদ আছে এবং সে যে ভদ্রতা সে জানে না, অনবরত সে কথা তাকে বলে কী লাভ হবে? বরং তা বলে তাকে আরও ক্ষতি করা হয়। উত্তম আদর্শ-চরিত্রের বই তাকে ২/৩ খানা করে পড়তে দাও–তার প্রতি সহানুভূতি পোষণ কর–এমন কি তাকে জানতেও দিও না, তার মঙ্গলের চেষ্টা তুমি করছ। শুধু আরাম, আয়েশের জন্যেই তাকে বই পড়তে দাও। সভাসমিতি, উমভথর, উমভতণরণভডণ এ তাকে নিয়ে যাও। ভালো ভালো লোকের কাছে তাকে নিয়ে যাও। তার স্বভাবের হীনতার বিরুদ্ধে একটা মস্ত ষড়যন্ত্র চলছে–তা তাকে জানতে দিও না।
১ম–যদি বই না পড়ে?
২য়–তাহলে খুব ভালো চরিত্র পরিস্ফুট হয়ে উঠছে, এই ধরনের উপন্যাস পড়তে দাও। কোনো ভালো ইংরেজি গ্রন্থ বা বিদেশী উচ্চাঙ্গের সাহিত্য কোনো বাহানা ধরে তাকে প্রত্যহ একটু একটু পড়াও। যা কিছুতেই কিছু হয় না, দুঃখ করো না, যেহেতু কর্তব্য তোমার শেষ হয়েছে। তোমার যেটুকু করবার দরকার সেটুকু করেছ, বাকিটুকুর জন্যে তুমি দায়ী নও। –অপরাধীকে উপহাস করো না, তার নিন্দাও কারো কাছে করে না,আজ হোক, কাল হোক-একদিন সে তোমার কথা মনে করবেই। অন্তত মরণকালে তোমার কথা মনে করে। একটু চোখের পানি ফেলবেই। তাও কম লাভ নয়।
১ম–যদি কোনো ছেলে অসময়ে পড়া ছেড়ে দেয় কোনো রকমেই তার মাথায় কোনো জ্ঞান প্রবেশ না করে?
২য়–তাকে Common easy Literature পড়তে দাও। আর সে কি কাজের উপযোগী তা লক্ষ্য কর-সেই কাজেই তাকে লাগিয়ে দাও। যে ছেলে স্কুলে ভালো পড়া পারে না সে যে একজন জাতির রক্ষাকর্তা সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি হবে না, তা কে জানে। সে যে একজন ভালো। Watch maker হবে। তাই বা তুমি যেন করে বুঝতে পারবে। কেন নিরন্তর তাকে অপদার্থ বলে গালি দাও, যে যে জায়গায় কাজ করতে খোদা কর্তৃক তৈরি হয়েছে, সেইখানে তাকে দাও, ঠিক মুখে মুখে লেগে যাবে, কোনো গোলমাল থাকবে না। ভবিষ্যৎ জীবনে যার একজন সুদক্ষ কারিগর হবার কথা, দর্শন, বিজ্ঞান, ব্যাকরণ তার মাথায় প্রবেশ নাও করতে পারে সে জন্য কেন তাকে একেবারেই আবর্জনা ভেবে তাড়িয়ে দাও?
১ম–যদি কেউ মাতাল ও লম্পট হয়?
২য়–জবরদস্তি, মারামারি, ভৎর্সনা দ্বারা লম্পট ও বদমাইশকে পথে আনা যায় না। এই পথের ভীষণ পরিণাম। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকারের কথাই তাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলবে। এই অবস্থায় তাকে কখনও স্নেহ বঞ্চিত করো না। নিজে তাকে মুখোমুখি হয়ে কোনো উপদেশ দিও না। তার বন্ধু-বান্ধব দিয়ে তাকে পথে আনতে চেষ্টা করবে, যদি একান্তই অধঃপাতে যায়, তবে কোনো উপায় নাই। সমস্ত সম্পত্তি হেবা করে তার খোরপোষের বন্দোবস্ত শুধু করবে। সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারে, কখনও এ অধিকার তাকে দিও না।
মানুষ অনেক সময় পাপ করে ভারি অনিচ্ছায়। গাছের পাতা যেমন সর্বদা আলোক চায়, পতিত মনুষ্য-আত্মাও তেমনি মুক্তি চায়, আলো চায়, পথ চায়। একটা মহাশক্তি তার দরিদ্র আত্মাকে চেপে ধরে। পতিত ভারি নিঃসহায়, ভারি দরিদ্র, তাকে ভর্ৎসনা না করে, তার অন্তর্নিহিত দীন মনুষ্য আত্মাটিকে প্রেম ও সহানুভূতিতে সাহায্য কর। ডাকাত, তস্কর, পাজী, বদমাইশ সবাই আপন আপন পাপে লজ্জিত থাকে, শয়তানের কবল হতে তার মুক্তির জন্যে তাকে সাহায্য কর।
থামিয়া কহিলেন–দৈনন্দিন জীবনে দেখতে পাবে অনেক মানুষের অনেক ছোট ছোট দোষ ত্রুটি। সেজন্য তাকে ত্যাগ করো না, মানুষ একদিক দিয়ে মন্দ পতিত, অন্যদিকে দিয়ে ভালো উন্নত। কেবলই গুণ মানুষে সম্ভব নয়। মানুষের গুণের দিক দেখ, দোষ দেখ না। আর একটি কথা তর্ক করে কাউকে হারানো যায় না যতক্ষণ না সে নিজে হারে।
.
বিনষ্ট মানুষ
২য় বন্ধু –অল্পবুদ্ধি স্ত্রীলোক, ছেলেবুদ্ধি কন্যার মুখের উপর কখনও বলবে না, “তুমি কী সুন্দর, তোমায় আমি কত ভালবাসি!”
আজ যে নারীকে প্রেমের চোখে স্বর্গের বিদ্যাধরী দল মনে হচ্ছে কাল তার প্রতি আর সে মাদকতা থাকবে না, হয়তো তখন দ্বিতীয় কোনো নারীর রূপ চোখে সুন্দর দেখাবে। মানুষের চোখের নেশা, রূপের মাদকতা রূপের মাদকতা এবং প্রেম বা ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। যে রীকে একবার ভালোবেসেছ, একবার প্রেম করেছ, তাকে আর কখনও ত্যাগ করতে পার না। অন্তরে এবং প্রকাশ্যে তাকে প্রেম কর। তার প্রতি বিশ্বস্ত থাক, নইলে ব্যভিচার করা হবে। চোখকে যে সংযত না করতে পারে, মনকে যে শাসন না করতে পারে–তার প্রেমের তার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। সে কাপুরুষ। তার বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। বন্ধু যে নারী উচ্চবংশোদ্ভূতা, যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তি না থাকে, তাকে বিয়ে করো না। চক্ষু এবং প্রেম মানুষকে অনেক সময় প্রতারণা করে। মোহের বশবর্তী হয়ে আজ যাকে বিয়ে করেছ, কালই তার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবজ্ঞা আসবে। পত্নীর প্রতি অশ্রদ্ধা বা অবজ্ঞা খুবই বিপজ্জনক। এতে পরী অপেক্ষা নিজের চরিত্রের অধিক ক্ষতি হয়।
১ম–তুমি যে বললে, বিনষ্ট হবার খুব সম্ভাবনা তার মানে কী?
২য়–মানুষ যখনই আপন পত্নীর প্রতি প্রেম হারায় তার অসংযত পাপদৃষ্টি এদিক ওদিক পড়ে, তার ক্ষুধিত মন নূতন নূতন নারীর প্রতি ধাবিত হয়। সে সাবধান। লজ্জিত হয়ে নিজের কান নিজে না মলে আপন পত্রীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, তার পাপ স্বীকার না করে তখনই তার মরণ উপস্থিত। বন্ধু নারীর মুখ বিষের মতো মনুষ্যত্বের অন্তর বাহির বিষাক্ত করে। উহা অগ্নির জ্বালায় মনুষ্যকে তাপদগ্ধ করে। উহা অভিশপ্ত নিশ্বাসের ন্যায় সুপবিত্র মানবচিত্তকে বিভ্রান্ত করে। উহা জগতের অভিশাপ। সমস্ত বিশ্বের বাতাসকে নারীর মুখ কলঙ্কিত করেছে, ঠিক, নারীর মুখে তা জীবনবিলাসী গোলাপ পুষ্প। তাকে ঘৃণা কর, ওর স্পর্শ হতে, ওর কটাক্ষ হতে সরে পড়। নারীর পাপ মুখ! নারীর অপবিত্র সুন্দর মুখ মনুষ্যকে সর্বস্বান্ত করে, তাকে পথের ফকির করে পথেই ফেলে যায়। স্বার্থময়, কুহকময়ী নারীর যাদু দৃষ্টি হতে সাবধান।