সঙ্গীত কী?-এই কি আশা-বিশ্বাস শক্তির বাণী নয়?–উহা কি চিরউদাসী চিরবিবাগী পরম দুঃখের সার্থক, প্রেমযোগী শ্বাশত সত্যপুরুষের স্বভাব নয়! উহা কি চিরনির্মলের সুরভি নিশ্বাসের মতো নয়।
আপন স্বামীর চিত্তবিনোদনের জন্য বিবাহিতা নারী গান গাইতে পারে, যেখানে সেখানে দেখিয়ে মজলিশ গুলজার করে বেয়াদবের মতো গান করা ঠিক নয়। অবিবাহিতা কুমারীরা বিশেষ ভদ্র সমাজে, বিশেষ কোনো পবিত্র মাহফিলে গজল বা উত্তম আধ্যাত্মিক ভাবপূর্ণ গান গাইতে পারে–তাতে দোষ নেই।-আনমনে মানুষ নীরস কঠিন অপ্রেমিক শান্তিদাতা এবং ভীষণ মনে করে। খোদা সম্বন্ধে মনে এরূপ চিন্তা পোষণ করা মহাপাপ এবং কুফরীখোদা চিরসুন্দর, মধুর, স্নিগ্ধ, টোরলের মতো পেলব, তিনি রূপ, রস, ফুলের মতো নির্মল, শুদ্ধ গন্ধময়। সঙ্গীতের ধারায় তার গন্ধ ভেসে আসে। যে সমস্ত গান, শয়তানী ভাবপূর্ণ, অপবিত্র, উজ্জ্বলতা ও সংযমহীনতার প্রকাশ পায় তা শয়তান সমাজের জন্য; এবং তা সর্বদা বর্জন করতে হবে।
অতঃপর দুই বন্ধু রাস্তায় বেড়াইতে বাহির হইলেন, বেড়াইতে বেড়াইতে কহিলেন–বন্ধু সময়ের পূর্বে কখনও কথা বলতে নেই।
১ম –কী রকম?
২য় –ওষ্ঠ কথা বলে। যে কথার সঙ্গে অন্তরের যোগ নেই, মন যে কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করে।
আবার কহিলেন–কতকগুলি লোক সময় কাটে না, তাই কথা বলে–মিথ্যা কথা বলে।
১ম–কী রকম?
২য়–যেমন একজন জিজ্ঞাসা করলেন–গরুটা কি বিক্রয় করবে?-হ্যাঁ করবো। প্রশ্ন কত টাকা?
উত্তর–দশ টাকা।
প্রশ্নকর্তা–তাহলে আমাকেই দিন।
উত্তরদাতা–বেশ, তুমি লও।
প্র. ক–হা এস।
সময় কালে মাথা চুলকিয়ে বলা, আমার কোনো অমত নেই, তবে কি না আমি ভেবেছিলাম, তুমি গল্প কর।-ইত্যাদি।
যারা পরের নিন্দা তোমার কাছে করে, তারা নিশ্চয়ই তোমার নিন্দা অপরের কাছে করবে।
১ম–জগতের বন্ধুত্ব স্বার্থের খাতিরে।
২য়–ঠিক কথা। সর্বদা সত্যকে লক্ষ্য রেখে চলাই ঠিক, তাতে কেউ শত্রু হোক, কেউ মিত্র হোক–গ্রাহ্য করা উচিত নয়। সর্বদাই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের বন্ধু হবে।
১ম–সত্যকে সমর্থন করাই পরম লাভ। আর বেশি দরকার কী?
২য়–বিচারপ্রার্থীকে কখনও অসম্মান করো না–তাকে সমাদর কর, তার কথা শোন এবং তার জন্যে সংগ্রাম কর।
১ম–ন্যায়কে সমর্থন করতে পারাই পরম লাভ।
২য়–কখনও রূঢ় কথা বলো না। যে রূঢ় কথা বলে তাকে মানুষ ঘৃণা করে, খোদাও তাকে ঘৃণা করেন। তার অর্থ ও ক্ষমতা বৃথা।
১ম–তাই।
২য়–নামাজের সময় শিশুদেরকে গালি দিয়ে তাড়িয়ে দিও না। মানুষের উপর ক্রুদ্ধ মুখভঙ্গি করো না–তাতে নামাজ নষ্ট হয়।
১ম–হ্যাঁ, ঠিক।
২য়–ধর্মের নামে মানুষকে ঠকিও না, ইহা মূঢ়ের কাজ।
১ম–হ্যাঁ, তাই।
২য়–মানব-সেবার উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু জীবিকার জন্যে চাকরি করো না। এরূপ চাকরি অবৈধ এবং অপবিত্র।
১ম–হ্যাঁ, তাই।
২য়–বিবাহ কার্যে তাড়াহুড়ো করো না। অবৈধ অর্থে ধর্মকার্য করো না। যার কিছু অর্থ অপবিত্র, তার সকল অর্থই অপবিত্র। প্রতিবেশীকে প্রেম কর। অধর্মকে আশ্রয় করে কখনও জাগতিক উন্নতির আশঙ্কা করো না। শেষ জীবনে সাধু হবার আকাঙ্ক্ষা পাপ করো না। পাপ সংসারের মর্যাদা ঘৃণিত।
.
কনিষ্ঠদের সঙ্গে বিরোধ
২য় বন্ধু কহিলেন-বন্ধু, কনিষ্ঠদের সঙ্গে বিরোধ অনেক পরিবারেই হয়ে থাকে। পরিবারের এ একটা অতি শোচনীয় কাহিনী। পিতা-দিবা রাত্র বলে, “এই হতভাগার কাছে ছেলেটা যাবে না।” জ্যেষ্ঠ ভাই ছোট ভাই সম্বন্ধে পত্নীকে বলছেন–”এই নরাধম পাষণ্ড মরে না।”
১ম–বাস্তবিক পরিবারের একটা অতি শোচনীয় দিকই বটে। এর যে মীমাংসা তা জানা যায় না।
২য়–মানুষ জীবন সম্বন্ধে কখন নিরাশা পোষণ করতে নেই। পাজি, শুয়োর বলা, গালাগালি দেওয়া, জাহান্নামি বলা খুব সহজ। মুরুব্বী সাজতে এক পয়সা ব্যয় হয় না। এতুটুকু সাধনা প্রয়োজন না। দুর্বৃত্ত, দুরাচারকে সহানুভূতি না করা, তাকে মঙ্গল ও মহত্ত্বের পথে আকর্ষণ করা। তাকে প্রেম করা অতিশয় কঠিন। মনুষ্য নিজে যে কতখানি ধড়িবাজ অপদার্থ, তা চিন্তা করে না। অন্যকে সে উচ্চ গলায় ধড়িবাজ বলতে নিপুণ। মানুষকে দিও, তাকে বড় করতে চেষ্টা করো প্রেমে তাকে আকর্ষণ কর; যদি যোগ্যতা না থাকে তবে সে দোষ তোমার।
জগতে এমন কি জিনিস আছে যা নিরর্থক। মনুষ্য জীবন কি নিরর্থক হতে পারে?
যে নিম্নস্তরের লোক সে মানুষ্যের ভুল ধরে তত বেশি। বাহাদুরি দেখাতে সিদ্ধহস্ত। ব্যাপারটি সমাজের মনুষ্য চরিত্রকে লক্ষ করলেই বুঝতে পারবে। যোগ্য পরিচালনের অভাবে কত জীবনই না ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত মিস্ত্রীর হাতে পড়লে, একই কাঠ যেমন সুন্দর জিনিসে পরিণত হয়, ঠিক সেই কাঠখানি মন্দ মিস্ত্রীর হাতে একটা কদর্য জিনিসে পরিণত হবে। অনেক সময় কাঠখানিই খারাপ হয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের উপর তম্বী করবার আগে নিজেদের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করো, তোমরা নিজে তাই তো পাও। তোমাদের নিজেদেরই তো যথেষ্ট শেখবার আছে। তোমরা নিজেরাই দরিদ্র-মনুষ্য জীবনের দায়িত্ব তোমরা গ্রহণ করতে জান না।
১ম–পরিবারের মধ্যে যদি কারো স্বভাব বদ হয়ে ওঠে, তখন কী করা যায়?
২য়–মানুষ যতই কোনো দুরাচার নীচাশয় হোক না–ক্রুদ্ধ হয়ো না–সেটাকে একটা সত্য এটর্ড বলেই ধরে নিতে হবে। কী করে তার মঙ্গল করা যায় সেই চেষ্টা কর।