১ম–পচা মেয়েদের কি বিয়ে হবে না?
২য়–হ্যাঁ, হবে বইকি! কাক, কুকুর এরা পচা জিনিসগুলো মহা উপাদেয় বলে গ্রহণ করে। যার যেমন রুচি, সে তেমন পরী গ্রহণ করবে। যার শুঁটকি খাবার অভ্যাস নাই তার। সামনে শুঁটকির ডিস্ রাখলে তাকে জীবন্ত মেরে ফেলা হবে অথচ যা কোনো গৃহিণী কতকষ্টে বেঁধেছেন তার কেন সমাদর হবে না।
১ম–দেখেশুনে বিয়ে করবার উপায় কী?
২য়–আপন মাতা বা কোনো নিকট আত্মীয়ার সঙ্গে মেয়েকে কিছুদিন ভাবি শ্বশুরবাড়ি বাস করতে হবে। নইলে মেয়ের স্বভাব-চরিত্র সম্বন্ধে কোনো কিছু জানা যাবে না।
১ম–তাতে সবাই আপত্তি তুলবে।
২য়–এতে কী আপত্তি তা বুঝি না। নিজের কোনো আত্মীয়ের ভাবি শ্বশুর বাড়িতে –যেয়ে যদি ২/১০ দিন অতিথি হয়ে থাকেন, তাতে বিশেষ আপত্তির কী আছে, জানি নে।
১ম–ছেলে যদি বিয়ের আগে মেয়েকে দেখে, তা কী দোষের?
২য়–এটি ছুন্নত, তবে আমাদের দেশে চলন নেই। আপন আত্মীয়দের মাঝে বিয়ে হলে, মেয়ে দেখাতে বিশেষ বাধা হয় না। এমন কি পূর্ব হতেই অনেক সময় দেখাশুনা পরিচয় হয়েই থাকে।
১ম–তুমি যে ২/১ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের অনুরাগের কথা বলেছ, তার অর্থ কী?
২য়–হ্যাঁ বলছি অনুরাগের অভাবে রূপবতী সর্বগুণালঙ্কৃত নারী চোখে কুৎসিত দেখায়। অনুরাগের ফলে খুব মন্দ মেয়েও কারো কারো চোখে অতি সুন্দর বলে মনে হয়। কোনো কোনো ভদ্রলোক মেয়ে দেখানো খুব অপমানের কথা মনে করেন; কিন্তু তাদের এতে অপমান বোধ করা ঠিক নয়। বিয়ে দেবার পর যদি মেয়েকে চিরদিন অবহেলিত হয়ে থাকতে হয়, তবে সে বেদনা মেয়ের বাপ-মাকে বেশি ভোগ করতে হয়। এমন শোকাবহ দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিয়ের পরই অনেক জামাতা পত্নী ত্যাগ করে; বেশ্যাগত হয়, যুবতী পীর প্রতি ফিরেও তাকায় না–এই মর্মান্তিক দৃশ্য কে সহ্য করতে পারে? এমনও দেখা যায়, অনেক স্বামী তার সুন্দরী পত্নীর দিকে ফিরেও তাকায় না–কোনো কু-চেহারার নারীর প্রতি আসক্ত। এর শেষ ফল অতি ভয়ানক। স্বাস্থ্যনাশ, আয়ুক্ষয়, অকাল মৃত্যু। এই মহাপাপের প্রশ্রয় কেন যে দেশের পিতামাতা দেন তা বুঝি না। অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে, জামাতাকে গালি দিয়ে তারা মনকে সান্ত্বনা দেন। ভদ্রভাবে নিজেদের দৃষ্টির সম্মুখে রেখে ছেলেমেয়ে পরস্পরের সম্মতি গ্রহণ করলে যে কী অপমান, কী ক্ষতি হয়-তা বুঝি না। যারা এরূপ গোড়ামির পরিচয় দেন তাঁরা অতিশয় মূর্খ, আপন পুত্র কন্যার প্রতি নিষ্ঠুর। একাধিক বিবাহের কারণ কী জান! পরস্পর পরিচয় ও অনুরাগের অভাবে পুরুষদের মন সর্বদাই অতৃপ্ত থাকে। ফলে পুরুষেরা একাধিক পত্নী গ্রহণ করে, ভাবে এতেই তৃপ্তি পাওয়া যাবে, কিন্তু অনুরাগের অভাব সহস্র রমণীকে ভোগ করলেও কামনার তৃপ্তি হয় না বরং এ অগ্নি উত্তরোত্তর আরও বেড়ে চলে। যে নারীর স্বামীর প্রতি অনুরাগ জন্মে না, তার মনও অপবিত্র থাকে, পর্দা প্রথার কল্যাণে তাদের পক্ষে বিশেষ ভয়ের কারণ নেই, কিন্তু কিছুমাত্র সুযোগ হয়ে উঠলে অতি অল্প লোকেই আপন জীবনের কোনো না কোনো সময় পরনারীতে রত হন–এর একমাত্র কারণ পত্নীর প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধার অভাব। অনুরাগ ব্যতীত সেটি সম্ভব নয়। বিবাহের পূর্বে অনুরাগ যেমন জন্মে, বিবাহের পর সেরূপ জন্মে না, যে জিনিস আমার প্রত্যাখ্যান করবার স্বাধীনতা নাই যাকে হারাবার কোনো উপায় নাই তার প্রতি সুগভীর প্রেম এবং শ্রদ্ধা জাগে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক জায়গায় বাস করার দরুণ বহু বৎসরে নারী পুরুষে একটা আকর্ষণ ও মমতা জমে ওঠে বটে, কিন্তু তার নাম প্রণয়।ওরূপ হওয়া মনের চিত্তের মামুলী স্বভাব। স্বামীস্ত্রীতে মামুলী স্বভাবকে অতিক্রম করে। কল্পনা ও স্বপ্নরাজ্যের একটা অতি নিবিড়, প্রীতি, অতি প্রাণারাম, মাদকতাপূর্ণ স্নিগ্ধ ভাব জমে ওঠে, সেইটেই চাই।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীকে ভালোবাসার কোনো সুযোগ বা অধিকার দেওয়া হয়। পত্নী নির্বাচনের ভার শুধু ব্যাটাছেলেদেরই আছে, স্বামী নির্বাচনের ক্ষমতা মেয়েদের নাই। তারা বলে, পুরুষছেলের আবার কী দেখবে! পুরুষছেলে আর সোনার দলা!-তার নাক থাক আর না থাক! সে চোর, অসভ্য, গালকাটা হোক!
যে স্বামী পত্নীর আন্তরিক অনুরাগ লাভ করে না–তার অনুদিন আয়ুক্ষয় হতে থাকে, –স্বামীর প্রতি অনুরাগহীন মেয়েদের সহিত সহবাসে পুরুষের বিলক্ষণ ক্ষতির কারণ হয়।
দাম্পত্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান অনুরাগ। এছাড়া দাম্পত্য-জীবন একটা মূল্যহীন কথা ছাড়া আর কিছু নয়।
.
নারীর গান
১ম বন্ধু–বন্ধু, গান গাওয়া কেমন?
২য়–খুব ভালো।
১ম–নারী যদি গান গায়?
২য় –তাতে তো দোষ নেই।
১ম –লাভ কী?
২য় –এই তাপদগ্ধ, দুঃখময় শোক-জ্বালাময় সংসার যদি একটুখানি শান্তি সম্ভব, তবে তা গানেই লাভ হয়। এই মরুময় সংসারে বাঁচবার একুটখানি আকর্ষণ নাই। যারা পশু জীবন যাপন করে, তাদের কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু যারা একটুখানি ঊর্ধ্বে ওঠেন তারা জগতের উলঙ্গ শ্রীহীন মূর্তি দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্মীছাড়া সংসারে একমাত্র আকর্ষণ খোদার কাজ করা, দরিদ্রের সেবা, খোদার রাজ্য বিস্তার করা, জগতের দুঃখের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং পত্নীর প্রেম। পত্নী যদি সঙ্গীতের সুমধুর ধ্বনিতে স্বামীর প্রাণে শান্তি, আশা, উৎসাহ, শক্তি, বিশ্বাস আনতে পারেন, তবে তা কখনও দোষের নয়। বরং খুব ভালো! বস্তুত পত্নী সর্বপ্রকারে স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করবেন, তার মনুষ্যত্ব এবং জীবনকে সার্থক এবং সফল করবেন। স্বামী সংগ্রাম করবেন-পত্নী তার হাতে অস্ত্র যোগাবেন, তাকে অন্ন দেবেন, তার ক্লান্ত ওষ্ঠে সুশীতল বারি দেবেন–আপন অঞ্চল দিয়ে বাতাস করবেন। নারী জীবনের এইই মহা সার্থকতা। এই জগৎ একটা সংগ্রামের ক্ষেত্র বৈ তো নয়–পাপে এবং পুণ্যে, আনন্দে-দুঃখে, দুর্বলে এবং সবলে। শয়তানে এবং দেবতায়! জীবনের সমস্ত ধারাটা একটা নারী। নারী-জীবন কী সুন্দর! কী মহাজীবন তার, তার সেবা কী মহিমাময়!