২য়–আলু জিনিসটা বেশ ফলে। এর বীজ ২/১ সের লাগিয়ে দিলে ২০-২৫ গুণ ফলে। কফি তৈরি করলেও খাবার কাজ চলে এবং বিক্রি করে দুপয়সা লাভ হয়। এক একটা কফির দাম চার আনা-পাঁচ আনা। আষাঢ় মাসে গৃহস্থের বাড়ি গোয়াল ঘরের গোবরে অতিশয় বিশ্রী দৃশ্য হয়। এতে যেমন স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, মনেরও তেমনি অবনতি ঘটে। একটু দূরে কোনো স্থানে বৃত্তাকার গর্ত করে যদি গোবর, গো-মূত্রগুলি সেখানে জমা করে ঢেকে রাখা হয়, তা হলে সেগুলি ফসলের উৎকৃষ্ট সার হয়, বাড়ির সৌন্দর্যও নষ্ট হয় না। গরুগুলির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
১ম–বাস্তবিক গরুর প্রতি বড়ই অন্যায় ব্যবহার করা হয়। তারা আষাঢ় মাসে বড়ই কষ্টে থাকে।
২য়–অনেক লোক এমন নিষ্ঠুর আছে, যারা গুরুর কল্যাণে বেঁচে থাকে, কিন্তু তাদেরকে পেট ভরে খেতে দেয় না। থাকবার জায়গা দেয় না, থাকবার জায়গা অতিশয় নোংরা করে রাখে। প্রত্যেক ভদ্রলোকের কর্তব্য গরুকে ভালো খেতে দেওয়া এবং ভালো জায়গায় তাদেরকে রাখা।
১ম–গরুর জন্য কী খাদ্য ভালো?
২য়–খড় এবং খইল গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। অনেকে গরুর খাদ্যের জন্য যা দুটি পয়সা খরচ করেন, তা বাজে এবং অতিরিক্ত খরচ মনে করেন। এটা বড়ই ভুল। যে পরিবারে গরুগুলি দেখতে সুশ্রী এবং তাজা-মোটা তাদের অবস্থাও ভালো হয়। যারা দুর্বল শক্তিহীন রোগজীর্ণ গরু দিয়ে কাজ করে, তাদের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মানুষের জন্য যেমন পুষ্টিকর খাদ্য আবশ্যক গরুর জন্যে ঠিক তেমনি ভালো খাবার দরকার। গরুর অযত্ন বড়ই খারাপ, এতে পরিবারে বিলক্ষণ অকল্যাণ হয়।
আর একটি কথা বলে আজকার মতো কথা শেষ করবো, তার পর চলো নামাজ পড়তে যাই।
অনেক পরিবারে বাড়ির কর্তা মারা গেলে মেয়েদের দুঃখের অবধি থাকে না। পুরুষ মানুষ বিহনেও মেয়েরা অন্তঃপুরে থেকেই নাবালক ছেলেরা বড় হওয়া পর্যন্ত কায়ক্লেশে চালিয়ে নিতে পারেন-এমন কতকগুলি বন্দোবস্ত করে যাওয়া চাই। মেয়েরা দশদিক অন্ধকার দেখেন–ভয় পেয়ে পরের বাড়ি, ভাইয়ের বাড়ি, বাপের বাড়ি চলে যান। নিজের স্বামীর ভিটায় স্বাধীনতা রক্ষা করে অপরিসীম কষ্ট সহ্য করা বরং ভালো তবু কারোর মুখাপেক্ষী হওয়া ঠিক নয়। আপন মাতা এবং স্বামী ছাড়া কারোর উপর জোর চলে না–উপদেষ্টা, আত্মীয়, মুরুব্বী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীর নামে মানুষ আপন অন্তরস্থ পাশবিকতার তাড়নায় কেবল আঘাতই করতে থাকে–প্রেম করতে মানুষ অল্পই জানে। আমাদের দেশে অনেক পিতা আছেন যারা দায়ে ঠেকে পিতা হয়ে পড়েছেন, পিতার মর্যাদা রক্ষা করতে চান না–পারেনও না; পিতা বলে বিশেষ আশা ও দাবী করলেও ঠকতে হবে। ভাইও বিয়ের পর যে পরম আত্মীয় থাকেন, এ তো মনে হয় না। পিতা, ভাই বা কোনো নিকট আত্মীয়কে অবলম্বন করাও ঠিক নয়, সবিনয়ে তাদের অনুগ্রহ অস্বীকার করাই ঠিক।
বাড়িতে যদি একটা পানের বরোজ থাকে, তবে বিলক্ষণ লাভ হয়। অসংখ্য গুবাক ও নারিকেল গাছেও লাভ আছে। বেনার ঝাড়ের কাঠি দিয়ে সের, ফুল রাখবার পাত্র, আরও অনেক জিনিস তৈরি হয়। খেজুরের পাতা দিয়ে আসন, শয্যা প্রস্তুত করা যায়–বাঁশের শলা দিয়ে অনেক দ্রব্য প্রস্তুত হয়। কোনো কাজকে অবহেলা বা ঘৃণা করতে নাই। একমাত্র সত্য জীবন গৌরব-কাজে, শিল্পে, কোনো অগৌরব নেই। অধর্মাচরণেই অগৌরব হয়। এই কথাটি প্রত্যেক পরিবারের নারী-পুরুষকে অন্তরের সঙ্গে বিশ্বাস করতে হবে। তা হলে জীবনের পনেরো আনা দুঃখ কমে যাবে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের নানাবিধ শিল্প কাজ শিখে রাখাও উত্তম। আমাদের দেশে অগণিত নারীর লক্ষ লক্ষ হাত একেবারে নিরর্থক হয়ে যাচ্ছে। কত কাজে কত পয়সা যে এরা উপায় করতে পারে, তার ইয়ত্তা নাই।
সেলাই-রিপুর কাজও খুব ভালো। বাড়িতে একটা হ্যাঁন্ড মেশিন থাকলে বিপদের দিনে বিলক্ষণ উপকার হয়। জামা, কোট, কামিজ, ছেলেদের পেনী সেলাই করে দুপয়সা লাভ হয়। কোনো কোনো মেয়ে সামান্য দুঃখে অতিশয় ভয় পান। সাহস ও স্বাধীনতার সম্মুখে সমস্ত দুঃখ দূর হয়ে যায়। যেখানে ভীতি, নৈরাশ্য এবং পরনির্ভরশীলতা, সেইখানেই অপরিমিত লাঞ্ছনা, অপমান ও দুঃখ সইতে হয়। প্রত্যেক মেয়েরই কিছু কিছু প্রাথমিক শিক্ষা থাকা নিতান্ত দরকার। হাতের লেখাটা পুরুষের লেখার মতো সুন্দর হওয়া চাই–স্বামীর কাছে চিঠি লিখিবার মতো জ্ঞান বা হস্তাক্ষরে কোনো লাভ নেই বরং লোকসান। মেয়েদের একটু প্রাথমিক শিক্ষা থাকলে তাদের বিলক্ষণ উপকার হয়, তাদের মনের বল বাড়ে-দুঃখ দেখে ভয় পান না, সংসারের অনেক সমস্যার মীমাংসা করতে পারেন, মানুষের ধোকায় পড়ে সম্মান সঙ্গতি হারিয়ে বসেন না।
অনেক লোক আছে যারা নিয়ত মানুষের কুৎসা রটনা করে, দুঃখী সংসারের প্রতি কোনো সহানুভূতি তাদের নেই। উপহাস, গ্লানি ও ঠাট্টাই তাদের ব্যবসা-এরা জগতের পশু জাতীয় লোক, এদের কথা গ্রাহ্য করতে নেই।
–অধর্মাচারণ, মিথ্যা, শয়তানী, প্রবঞ্চনার দ্বারা যে পরিবার প্রতিষ্ঠিত ঐ পরিবার ঘৃণিত। তাদের মান-সম্মানের কোনো মূল্যই নেই। স্বার্থান্বেষীরা তাদেরকে সালাম করতে পারে। কিন্তু একমাত্র সত্যাশিত পরিবারই, তারা যতই দুঃখী হোক, মানুষের সম্মান ও মর্যাদার পাত্র।