১ম–কোনো কোনো পরিবারে বৌকে কোনো উপহার দিলে রাগ করে।
২য়–আমি তো পূর্বে বলেছি বধূর সুখ-সুবিধা আনন্দ-স্বচ্ছন্দ্যের প্রতি হিংসা পোষণ করা কোনো কোনো পরিবারে স্বভাব। বিয়ের পরই ছেলেদেরকে বাজে লোক মনে করা অন্যায়, এ ভদ্রলোকদের কাজ নয়। পরিবারের প্রত্যেকে যদি নিজের স্বার্থটা বেশি বোঝেন, সে পরিবারে কখনও শান্তি হয় না। একজনের জামা ছিঁড়ে গিয়েছে, যার আছে সেটাই আপাতত নিয়ে কাজ চালান যেতে পারে, কাপড় নষ্ট হবে বলে স্বার্থপরের মতো বাক্সবন্দী করে রাখা ঠিক নয়। একজনের ধুতিটা ময়লা হয়েছে, কোথাও যেতে হবে, যার ধোয়া ধুতি আছে, বের করে দাও–কোনো নীচতার পরিচয় দিও না। ছাতা সেরে রাখা ভালো নয়। বাড়ির কোনো বৌ কোথাও যাবে, অন্য বৌয়ের গহনা সে পরে যাক, তাতে সকলেরই আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। উদারতা, সহানুভূতি, পরকে সুখী করবার ইচ্ছা এগুলো পরিবারকে স্বর্গীয়ভাবে পুষ্ট করে তোলে। কারো দ্বারা যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তা নিয়ে কচকচি করা বা অসন্তোষ প্রকাশ করাও ঠিক নয়।
বিশ্বাসে বিশ্বাস বাড়ে, প্রেমে প্রেম বাড়ে। তুমি যদি আমাকে বিশ্বস না কর আমিও তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই নে। তুমি যদি আমাকে একটুখানি প্রেম কর, আমি তার পরিবর্তে দ্বিগুণ প্রেম করি, পরিবারে একজন আর একজনকে বিশ্বাস এবং প্রেম করবে।
পত্নীকে স্বামী কোনো সময়ে মুখোমুখি হয়ে বলবে না–তুমি সত্য হও, স্বামীভক্ত হও, আমাকে প্রেম কর। পরী যেন কখনও বুঝতে না পারে স্বামী তার স্বভাব-চরিত্র লক্ষ করেছেন, স্বামী তাকে ঘৃণা করেন। প্রেম প্রদর্শনের ব্যাপারে মানুষ কখনও ইচ্ছা করে না, কেউ তার উপর গুরুগিরি করে, কেউ তাকে প্রেম করতে শিক্ষা দেয়। মানুষকে সোজা কিছু বলে প্রকারান্তরে শিক্ষা দেওয়া ভালো। শিশুর জন্য সোজা উপদেশ ভালো। একটু বয়স বেশি হলে তাকে প্রকারান্তরে শিক্ষা দেওয়া ঠিক। এমনকি নারীচরিত্র গঠনের বই সম্ভব হলে নিজে না কিনে অপরের হস্ত দিয়ে উপহার দেওয়াই ভালো। কোনো উপদেশ দিতে যেও না, বরং ভালোবাস।
১ম–যে নারীর মোটেই ভালো হবার ইচ্ছে নেই, মন যার পাষাণ অথবা ভাবহীন। জড়পদার্থ, তাকে কী করে নিজের মতো করে নেওয়া যায়?
২য়তা করা যায় না। নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ ধর্ম কী? তা আমি পূর্বেই বলেছি, সে কথা সকল নারীরই মনে রাখা উচিত।
১ম–দোষ ধরা প্রবৃত্তিটি কেমন?
২য়–এটি বড়ই খারাপ। অনবরত দোষ ধরলে, কাজের সমালোচনা করলে, মানুষের বুদ্ধি থাকলেও তার লোপ হয়। কোনো কোনো পরিবারে এরূপ লোকের অভাব নেই। ছেলেদের সামান্য ত্রুটিতে গালি দেওয়া, মারতে ওঠা, বৌকে উঠতে বসতে কথার খোঁচা মারা বড়ই খারাপ।
বউয়ের কর্তব্য তারা যেন সর্বদা লক্ষ রাখেন, যে ভুল একবার হয়েছে তা যেন পুনরায়
হয়। মানুষ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের দোষ-ত্রুটি, ভুল সংশোধন করতে চেষ্টা করে, তা হলে নিশ্চয় তাতে সফল হওয়া যায়। যে সমস্ত নারী আত্মমর্যাদাজ্ঞাসম্পন্ন, তারা। নিশ্চয়ই এ সম্বন্ধে সতর্ক হন। কেউ মুখে বলুক আর নাই বলুক, কোনরকমে নিজের বুঝতে পারলেই সতর্ক হতে হবে। অনবরত একটি ভুল করতে থাকলে পরিবারস্থ সকলে যারপরনাই দুঃখিত ও বিরক্ত হন।
১ম–যদি কেউ এমন হয়, কিছুতেই নিজের দোষ-ত্রুটি বুঝতে পারে না, পুনঃপুনঃ একটি ভুল করে?
২য়–তা হলে তাকে ক্ষমা করতে হবে। ভুল মানুষ করতে পারে। কিন্তু তার জন্যে অনুতাপ প্রকাশ করলে আর কোনো দোষ থাকে না। বিনয়ী হবার এবং দুঃখ প্রকাশ করবার অধিকার মূখেরও আছে। বস্তুত মানব চরিত্রের এই দুইটিই শ্রেষ্ঠ ভূষণ। খোদা দাম্ভিক সাধুকে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু বিনয়ী পাপীকে ক্ষমা করবেন। নারী বিদূষীশ্রেষ্ঠা এবং শক্তিবতী হলেও প্রেম আকর্ষণের এই দুইটিই উত্তম অস্ত্র। মনুষ্য বিনয়কে প্রেম করে চুম্বন। করে, মাথায় এবং হৃদয়ে রাখে–ক্রোধ এবং হঠকারিতা দেখলে ভয়ে পালিয়ে যায়। প্রেম। জিনিসটা আত্মা হতে আসে, এর উপর জবরদস্তি চলে না।
.
গৃহস্থালী
২য় বন্ধু বলিলেন–বন্ধু, মেয়েদের হাতে সুচ সূতা থাকবেই। যে জামাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, তাতে সুঁই দিয়ে মেরামত করলে, আরও ছয় মাস চলবে। মাসে মাসে নূতন জামা, কাপড়, জুতো পরলেই যে পরিবারে মর্যদা দ্রুতবেগে বাড়তে থাকে এরূপ মনে করা বড়ই ভুল। বাড়িতে রিপু করা ছেঁড়া জামা পরলে, তাতে কোনো দোষ হয় না। লোকে যদি গরিব মনে করে করুক। কোন পরিবার মর্যাদাসম্পন্ন তা লোকের বুঝতে বাকি থাকে না। নিত্য জামা কাপড় পরলেই কি, না পরলেই কি! যে বিছানার চাঁদরটি এক জায়গায় একটুখানি ছেঁড়া মতো হয়েছে, বিলম্ব না করে তখনই তাকে সেলাই করে ফেলা উচিত। বধূর একটুখানি মনোযোগ, একটুখানি সতর্কতায় পরিবারের বহু কল্যাণ হয়। স্বামীর অল্পেই স্বচ্ছলতা আসে। বধূ যদি অমনোযোগী হন, স্বামী বা পরিবারের সুখ-দুঃখে অভাব-অনটনে কিছুমাত্র সহানুভূতি না থাকে, তবে তা বড়ই দোষের কথা। অতিথির মতো পরের বাড়িতে আসা, নিজের সুখ ও ভোগটুকু নিয়ে ব্যস্ত থাকা, এরূপ ব্যবহার ভালো নয়।
পরিবারে যদি অনেক মানুষ থাকে, তবে কাজ নিয়ে কখনও ঠেলাঠেলি করা ভালো নয়। যার শরীরে শক্তি আসে, সে কাজ করুক, যে শুয়ে থাকে, সে থাকুক। কখনও ঝগড়া ঝটি ভালো নয়।