হে প্রভু, সমস্ত মুসলমান জাতিকে তুমি আশীর্বাদ কর–যেন সত্য করিয়া তাহারা তোমার পরিচয় লাভ করে, দয়াময়, মুসলমান জাতিকে তুমি উদ্ধার কর, তোমার শুভ ইচ্ছা ব্যতীত কখনও তাহারা উদ্ধার লাভ করিবে না। তাহাদিগকে অধর্মাচরণ হইতে রক্ষা কর। প্রভু, মনুষ্য সমাজ হইতে প্রেম কি তুমি তুলিয়া লইয়াছ? যেন বিনয়ে, জ্ঞানে, মনুষ্যত্বে আমরা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করি। যেন দীন-দুঃখীদিগকে ভালবাসি। যেন ধন, ক্ষমতা ও শক্তির গর্বে অন্ধ না হই। আমীন”–
অতঃপর দোয়া কুনুত পাঠ করিলেন–”হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমরা তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি ও তোমারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমাকেই বিশ্বাস করি ও তোমারই ভরসা করি এবং তোমারই নিকট মঙ্গল চাই। আমরা তোমারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমরা অকৃতজ্ঞ নহি, যাহারা তোমার অবাধ্য তাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করি ও তাহাদের নিকট হইতে দূরে থাকি। হে আল্লাহ, আমরা তোমারই বন্দেগী করি ও তোমারই উপাসনা করি এবং তোমাকেই সেজদা করি। তোমারই আরাধনার জন্য একান্ত চেষ্টা করি এবং তোমারই দয়ার। প্রার্থী হই। তোমার শাস্তিকে ভয় করি; নিশ্চয় তোমার শাস্তি কাফেরদের জন্য নির্দিষ্ট আছে।”
অতঃপর আয়তুল কুরসি পাঠ করিলেন,–”আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য নাই। তিনি নিত্য ও জীবন্ত, তাঁহাকে তন্দ্রা বা নিদ্রায় আকর্ষণ করে না। ভূলোক এবং দ্যুলোকে যাহা কিছু আছে, তাহা তাঁহার জন্য। কোনো ব্যক্তি তদীয় বিনানুমতিতে তাহার মুক্তি লাভের জন্য প্রার্থনা করিতে পারে? তাহার ইচ্ছা ব্যতীত মানব তদীয় অনন্ত জ্ঞানের কণামাত্র বুঝিতে পারে না। তাহার সিংহাসন আকাশ হইতে পৃথিবী পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, সুতরাং উহার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত হইতে হয় না, কারণ তিনি মহান ও উচ্চ।”
১ম বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন-দোয়া কুনুতে পাপীদেরকে পরিহার করে চলবার জন্য খোদা তাঁর ভক্তগণকে শিক্ষা দিচ্ছেন।
২য়–খোদার যদি তা-ই উদ্দেশ্য হবে, তা হলে পৃথিবীতে তাঁর পবিত্র বাক্যসমূহ এবং এত পয়গম্বর পাঠাতেন না। কাফের দুরাত্মাদেরকে ভাগ করলে আল্লাহর ধর্ম প্রচার হবে কীরূপে? তাদের কুকার্যের সহায়তা করা, তাদের সঙ্গ উপভোগ করা সাধুদের কার্য নয়। উপাসনাকালে বাড়ির ছেলেরা যদি নিকটে আসে, তবে দাঁত সিটকে তাড়িয়ে দিতে নেই। মনুষ্য জানে না উপাসনা কাকে বলে।
১ম–শুক্রবারের দিন উপাসনাকালে গরীব লোকের ছেলেরা মসজিদের সমানে এসে। খাড়া হয়। তারা একটু টু-শব্দ করলে, নামাজীরা ”শুয়রের বাচ্চা–দূর হও” বলে গালি দেয়।
২য় বন্ধু আবার কহিলেন–মনুষ্য জানে না উপাসনা কাকে বলে–আল্লাহ্ কী চান? তিনি উপাসনা অপেক্ষা প্রেম অধিক ভালোবাসেন।
১ম–হাঁ, তাই।
২য়–পরিবারের কোনো কোনো লোক অনুযোগ করে বলে থাকেন—”অমুক আমাকে একখণ্ড কাপড় কোনোদিন কিনে দেয় নাই, একটু মিছরী কোনোদিন খেতে দেয় নাই, আমি ব্যধিতে পড়লে কেউ জিজ্ঞাসা করল না” কখনও অভিযোগ করবে না। প্রেম চিরকালই মৌন এবং ত্যাগই তার স্বভাব। যে তোমাকে প্রেম করছে, সেও ভালো, যে করে নাই সেও ভালো।
বুড়ারা অনেক সময় তাদের যৌবনকালের কথা ভুলে গিয়ে যুবকদের জীবনের প্রতি কিছুমাত্র সহানুভূতি পোষণ করেন না। যুবকের চালচলন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, হাব-ভাব তারা দুই চোখে দেখতে পারেন না-এটা বড়ই অন্যায়।
বংশের কোনো কোনো লোক আপনজনকে ত্যাগ করে, অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে–এটা বড়ই ভুল আপনজন যতই দুর্বৃত্ত হোক, আসন্ন বিপদে বেদনার চীৎকারে আপনজন ছাড়া কেউ অগ্রসর হতে পারে না। এ কথা সকলেরই মনে রাখা উচিত। মানব সমাজের চির-চলিত বিধান এই। আপনজন যদি আপনজনের প্রতি নিষ্ঠুরাচরণ করে, তা বড়ই অধর্ম।
১ম–আপনজন যদি অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ও কটুভাষী হয়–তা হলে তার উপর কি মন বিরূপ হয় না?
২য়–তা হয়। কাউকে ভালোবাসি বলে যে তাকে নিরন্তর আঘাত করা হবে, তাও ঠিক নয়। বস্তুত নিষ্ঠুরাচরণ, কটু কথা, এসব বড়ই আপত্তিজনক। এরূপ হলে ভালোবাসার ভার কেউ বহন করতে চায় না।
১ম–তুমি কি বলছিলে–”প্রেম চিরকালই মৌন, ত্যাগই তার স্বভাব”। কতকগুলি হৃদয়হীন মানুষ যদি একজন ত্যাগী ও প্রেমিক বলে তার উপর অত্যাচার করে, তা হলে কেমন হবে। একটা লোক ভালো বলে তাকে চিরদিনই মাংসের পরিবর্তে অস্থি দেওয়া; আর বলা–”তুমি বড় ভালো লোক-অস্থি খেতে তোমার আপত্তি নেই, আমরা মাংস খাই”–কী রকম ব্যাপার হয়?
২য়–সংসারে যে এমনটি হয় না, তা নয়। একজনকে চূর্ণ করে নিজে সুবিধে করে নেওয়া অবোধের কাজ। কিন্তু বাস্তবিক প্রেমিক যিনি, তিনি এমনিভাবে চূর্ণ হবেন। মহত্ত্বের এই-ই ভাব। তবে তার প্রতি সবার কর্তব্য কী তাও বলা দরকার। কারো প্রতি নিষ্ঠুর হওয়া ঠিক নয়। যে ত্যাগ স্বীকার করে, তার প্রতি একেবারে মমতাশূন্য হওয়া মানুষের কাজ। নয়। পরস্পরকে অনুভব করা, একজন আর একজনের কষ্ট বোঝাই মনুষ্যত্ব। কার্যে বাক্যে, ব্যবহারে একজন আর একজনের প্রতি মমতা দেখানো আবশ্যক। ছেলে বন্ধু মায়ের সুখ দুঃখের প্রতি নজর রাখবেন, পত্নী স্বামীকে সুখী করতে চেষ্টা করবেন। একজন আর একজনের দোষ-ক্রটি যথাসাধ্য ক্ষমা করবেন। স্বামী পত্নীকে শুধু নারীজীবনের কর্তব্য দেখিয়েই তার প্রেমের পরিচয় দেবেন না–তাকে আপন শক্তিমতো ভালোবাসার উপহার দেবেন। আশ্রিত ছোট প্রিয়জনদেরকে কাপড়-চোপড় কিনে দেবেন, যদি শক্তিতে না কুলায় দেবেন না বা অল্পসল্প দেবেন–তাতে কেউ কিছু মনে করবে না। স্বামীর উপহার পেয়ে। পত্নী কখনও অসন্তোষ প্রকাশ করবেন না বরং খুবই আনন্দ প্রকাশ করবেন। অনবরত নিজের এবং ছেলেদের অভিযোগ নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করবেন না।