১ম–তা হলে এর উপায় কী?
২য়–যুগের প্রভাবকে মেনে চলতে হবে। আর বাস্তবিক ভেবে দেখতে গেলে ছেলেদের মনে নারী সম্বন্ধে এই নবীন অনুভূতিকে উপেক্ষা এবং অশ্রদ্ধা করা চলে না।
১ম–মেয়েরা যেখানে বিদ্রোহিণী হন, সেখানে কী ব্যবস্থা?
২য়–মেয়েরা বিদ্রোহিনী হলে আর উপায় নেই। কিযে করতে হবে, তা তো জানি নে। পত্নী হবার দায়িত্ব ঘাড়ে নেবার আগে মেয়েদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষিতা হলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের কর্তব্য বধূরা বুঝতে পারবেন। অবোধের কোনো চিন্তা নেই, কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই। সে যা ইচ্ছে তাই করে। তার কাছে ভালো-মন্দ কোনো কথার মূল্য নেই। নিজের লোকসান কিছু বোঝে না। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষিতা মেয়েদের কাছে যা আশা করা যায়, তা পাওয়া যায় না–তা বলে শিক্ষার দোষ দেওয়া চলে না। নারী জীবনের জন্য বিশেষ কতগুলি শিক্ষা দরকার-পুরুষের শিক্ষা তার জন্যে যথেষ্ট নয়। নারীর প্রধান শিক্ষার বিষয় হচ্ছে যে প্রেম ও ত্যাগে মহিমান্বিতা হবে-এইটেই হচ্ছে নারী জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা। নারী সর্বপ্রকারে স্বামীর অনুগত্য হবে, এমন ভাব দেখাবে যেন স্বামী ছাড়া সে আর কিছু জানে না। নারীর ইহাই ধর্ম। যে নারী বিদ্রোহিণী, স্বামীর অবাধ্য, স্বামীকে প্রেম করে না, স্বামীকে বাক্যে এবং ব্যবহারে তুষ্ট করে না, সে নারী ধর্মকে অবমাননা করে, সে নারী যে সংসারে থাকে, সে সংসারের অকল্যাণ হয়, তার নিজেরও মঙ্গল হয় না।
নারীর পক্ষে ক্রোধ অমার্জনীয় অপরাধ। আঁখিজলই নারী মুখের শোভা। ক্রোধ নারীর পক্ষে হারাম।
নারী কখনও বাপের বাড়ি থাকবে না। স্বামী নিতান্ত দরিদ্র হলেও স্বামীকে বুকে করে বৃক্ষতলে কাল কাটাবে, তথাপি পিতৃগৃহে যাবে না। নারীর জন্য পিতৃগৃহ অমঙ্গল স্থান। স্বামীর ভিটাই নারীর শোভা ও মর্যাদা বর্ধন করে।
১ম–আচ্ছা স্বামী যদি পত্নীকে ভালো না বাসে?
২য়–তবু নারী স্বামীকে প্রেম করবে। প্রেম করতে যেয়ে যদি নারীর প্রাণ যায়, সেও ভালো। পিশাচ ব্যতীত সাত্যিকারের প্রেমকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। স্বামী যদি আঘাত করে, সে আঘাত মাথা পেতে নেবে। প্রেম করতে ক্রটি করবে না প্রেম বুকের মধ্যে থাকলে চলবে না, বাক্যে এবং ব্যবহারে তার পরিচয় চাই। নারী নিজেকে কখনও হীন মনে করবে না, প্রেমের দ্বারা সে দুর্দান্ত স্বামী-শিশুকে নিজের করে নেবে। যদি সে স্বামীকে ত্যাগ করবার সুবিধা না পায়, তবু তাকে নিজের আত্মার তৃপ্তির জন্যে আন্তরিক প্রেম করবে এবং তার কোনো প্রতিদান চাইবে না। এইখানে নারী কত বড়, তা তার স্বামী। অনুভব না করুক, খোদা দেখেবেন। নারী কখনও স্বামীকে অভিশাপ দেবে না স্বামীর নিন্দা করবে না–নারীর পক্ষে তা মহাপাপ।
১ম–স্বামী যদি পত্নীকে তাড়িয়ে দেন?
২য়–সে কিছুতেই যাবে না। আপন সন্তানকে যেমন নারী কিছুতেই ত্যাগ করে না, পত্নীও স্বামীকে ত্যাগ করবে না। স্বামী পিশাচ হতে পারে, কিন্তু সে কথা পূর্বে জেনে নেওয়া উচিত ছিল। একবার স্বামী হলে আর তাকে কোনো মতে অগ্রাহ্য করা যাবে না। সে গুণে পত্নী ভক্তি বা শ্রদ্ধার পাত্র নয়। পিতার দোষ যেমন পুত্রের দেখবার দরকার নেই, স্বামীর দোষ-ত্রুটি সমালোচনা করবার অধিকারও নারীর নেই। সম্বন্ধেই সে নারীর পূজনীয়।
১ম–এর কোনো যুক্তি-তর্ক হতে জানবে তার স্বামী কেমন হবে?
২য়–নারীকে এ সুযোগ দিতে হবে, জবরদস্তি করে তাকে কবুল বলানো অধর্ম।
১ম–নারীর উপর যদি অপরিসীম অত্যাচার-অবিচার হতে থাকে, তার কি কোনো প্রতিকার নেই-তার জীবন কি ব্যর্থ হয়ে যাবে?
২য়–নারীর পবিত্র দেহ স্বামীর, বর্তমানে স্বামী ছাড়া অন্য কারোর দ্বারা কলঙ্কিত হবে। নারী কোনো রকমে স্বামীকে ত্যাগ করবে না। বিবাহ বন্ধন কোনোরূপেই ছিন্ন হবে না।
১ম–পত্নীকে স্বামী ত্যাগ করতে পারে কেন?
২য়–নারী ব্যভিচারিণী হলে স্বামী তাকে ত্যাগ করবে। যার সঙ্গে সে ব্যভিচার করে, তার সঙ্গেই তার বিবাহ হওয়া উচিত।
১ম–পত্নী স্বামীকে ত্যাগ করতে পারে না?
২য়–স্বামীর যদি কোনো সংবাদ না পাওয়া যায়, একেবারে যদি নিরুদ্দেশ হয়, দিনান্তে তাকে চোখের দেখা না পাওয়া যায়, স্বামী পত্নীর সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রাখে, স্বামীর যদি কোনো সন্ধান না পাওয়া যায়, তবে ত্যাগ করা যায়। তাকে অপরিচিত এবং নিষ্ঠুর মনে করে পত্নী তাকে ত্যাগ করবে।
১ম–বিধবা নারী কী করবে?
২য়–তিনি ইচ্ছে করলে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন, তাতে কোনো দোষ নেই। সন্তানবতী হলে স্বামীর গৃহে থাকতে পারেন,–যেমন খুশি।
১ম–তুমি যে বললে স্বামীর অবহেলা নারী সহ্য করবে। স্বামীর কী কোনো দায়িত্ব নেই?
২য়–আমি তো পূর্বেই বলেছি–পত্নীর সঙ্গে স্বামী কীরূপ ব্যবহার করবে। নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্যে এর চাইতে বড় কথা আরকে বলেছে? বস্তুতঃ পূর্ব হইতে ভেবে-চিন্তে বিয়ে করা উচিত। বিয়ে করে আর ক্রোধ বা দুঃখ প্রকাশ করা ঠিক নয়। নারীকে কোনো রকমে অমর্যাদা করা ঠিক নয়। যেহেতু নারী আশ্রিতা, নির্ভরশীল এবং অতিথি।
১ম–শাশুড়ী ও বধূতে অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ হয়, তার কি করা যায়?
২য়–কোনো কোনো শাশুড়ীর মত এই যে, বৌকে শিক্ষা না দিলে সে সংসার চালাবে কী করে? সে পরিপক্ব হবে কীভাবে? এ যুক্তি ঠিক নয়। মেয়েকে সর্বপ্রকারের শিক্ষা দেবার ভার তার বাপ-মায়ের উপর। শ্বশুরবাড়িতে মেয়েরা সবাইকে ভালোবাসবে এবং ভালোবাসা পাবে। শ্বশুরবাড়ি যদি তার পক্ষে একটা তাড়নার ক্ষেত্র এবং স্কুল ঘর হয়ে ওঠে, তবে বড় দুঃখের কথা। বিয়ের পূর্বেই মেয়েদেরকে সর্বপ্রকার শিক্ষা দিতে হবে, নইলে তার নিজের জীবন দুঃখময় হবে। যাদের স্পর্শে সে যাবে তাদের জীবনও দুঃখময় করে তুলবে। নিতান্ত শিশু বয়সের মেয়েকে বিয়ে না দেওয়াই ঠিক। মেয়ে শ্বশুর বাড়ির উপযুক্ত হয়েছে কি না, এজন্য রীতিমত একটা পরীক্ষা হওয়া উচিত। মেয়েদের জীবনের জন্য বাপ-মায়ের কিছুমাত্র দায়িত্বজ্ঞান নেই, এ বড়ই অন্যায় কথা। তার আদব-কায়দা, গৃহস্থালী জ্ঞান, শ্বশুর-শাশুড়ী, স্বামী, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ব্যবহার, বাক্যালাপ জ্ঞান, জিনিসপত্র শৃঙ্খলার সঙ্গে রক্ষা, সন্তান পালন, অল্প অল্প সেলাই কার্য–এ সব বিষয়ে তার অল্প-বিস্তর জ্ঞান থাকা চাই। তা ছাড়া তার বুদ্ধির উন্মেষ, এটু চিন্তাশক্তি, ভালোমন্দ জ্ঞান। এ সবও থাকা চাই।