তারপর ধরুন, ধোঁয়া ছেড়ে, আর একটা দিক। সহ্যশক্তির একটা সীমা আছে; আবার মানুষের ক্ষেত্রে, তা নেইও। জন্তুজানোয়ারদের মধ্যে মানুষই সবচেয়ে বড় জন্তু কিনা। মানুষের সহ্যশক্তি তো অসীম–অনন্ত! বিশেষত যে খুন করেনি, তার! ধোঁয়া ছেড়ে, বার্লিনে ঢুকে দ্বিতীয় দফার নিউ জেনারেশন সৈন্যরা কী করেছিল, রাশিয়া তো তা স্বীকার করেনি। রেড আর্মি কিছু করতে পারে না, যথা রেপ।ইটালিতে ঢুকে ভারতীয় সৈন্যরা রেপ করেনি। আমার বন্ধু অনিরুদ্ধ লাহিড়ীর মত কি জানেন? মেম বলে ভরসা পায়নি। কিন্তু, আমেরিকানরা। করেছে। অনিচ্ছুক এনলিস্টেড জি আইরা ভিয়েতনামে কি করেছিল, তার অন্তত ছিটেফোটা ল্যান্সডেলের দ্য পেন্টাগন পেপার্সবইতে আছে। আমার কাছে আছে বইটা–পড়ে দেখবেন।
বীভৎস! মাই-লাইতে বাড়ি-বাড়ি ঢুকে জি আই-রা মেয়েদের ন্যাংটো করে সার্চ করত। তারপর বলত, একটুও বাড়িয়ে বলছিনা, এ-সবই সরকারি নথি, এবার তোমাদের ভ্যাজাইনা সার্চ হবে। বলে রেপ করত। ধোঁয়া ছেড়ে, একজন জি আই খুনের ব্যাপারে মা আর মেয়েকে উলঙ্গ করে ক্যাম্পে হাঁটিয়ে এনেছে : কনফেস করো কিন্তু মেয়েটা তো খুন করেনি। সে কিছু জানে না। একজন সৈন্যের হাতে জ্বলন্ত লাইটার তুলে দিয়ে লেফটেন্যান্ট বললেন, ওর পিউবিকহেয়ারগুলো জ্বালিয়ে দাও। মা মেয়েকে বলল, বল, খুন করেছি। কিন্তু মেয়েটা দাঁড়িয়ে রইল চুপ করে। কী বলবে। তার তো বলার কিছু নেই! তখন দিল জ্বালিয়ে।
কী হল, কাঁপছেন কেন আপনি? দারওয়াজা, এক গ্লাস পানি ল্যাও।
জল এলে এক চুমুকে আমি সবটা খেয়ে ফেললাম। বেশ খানিকটা উপচে পড়ল টেবিলে।
সেদিকে দৃকপাত না করে সত্যবান বলে চললেন, সেদিন সেল মিটিং-এ ঘটনাটা রেফার করে বললাম, তা একজন ইন্নোসেন্টের যদি এতখানি এনডিওরেন্স থাকে, একজন কালপ্রিটেরই বা থাকবে না কেন। সেও তো মানুষ। মেটাবলিজম একই। কাজেই ওসব টর্চার মেথড ফেথড একদম বাজে। অবসোলিট। ধোঁয়া ছেড়ে, আই জি ক্রাইম আমার বক্তব্য খুব অ্যাপ্রিসিয়েট করলেন। মুসৌরির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশানে ওঁকে লেকচার দিতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে দেখলাম, ওদের কাগজে যা বেরিয়েছে, উনি আমার লাইনেই বলছেন।
প্রকাণ্ড অ্যাশট্রেতে সিগারেট পিষতে পিষতে স্লিভ সরিয়ে সত্যবান কজিতে ঘড়ি দেখলেন।মনে হয়, একঘণ্টা বহুক্ষণ পেরিয়ে গেছে। সত্যবান হেসে জানতে চাইলেন, কী! আজ আপনি কিছু বললেন না যে!
পিউবিক হেয়ারে অগ্নিসংযোগের পর থেকে আমি আর কিছু শুনতে পাইনি। শুধু ওঁর গল-অস্থির ওঠানামা দেখে গেছি।
আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
এমন একটা ইশারার জন্যেই যেন এতক্ষণ গুটিয়ে চুপ করে শুয়ে ছিল আমার সকল স্নায়ু। উনি লিলিহহা! বলামাত্র নেড়ি কুকুরের মতন তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল ওঁর ওপর।
আপনি আমাকে কবে অ্যারেস্টকরছেন? ওঁর চোখে চোখ রেখে আমি জানতে চাইলাম।
১১. দ্য কন্টিনেন্ট অফ সার্সি
উনি এটা আশা করেননি। এই অসৌজন্য।
একটু থতমত হয়ে গেলেন বটে। তা বলে পাঁচপেঁচি, গড়পড়তা পুলিস অফিসারের মতন ওঁর চোখের তারাদুটো যে হঠাৎ পাথরে পরিণত হল, তা না। এদিক-ওদিক ওঁর দৃষ্টি ঘুরে বেড়াল কিছুক্ষণ। তারপর যখন তাকালেন, দেখলাম দৃষ্টি আরও কোমল হয়েছে। সস্নেহে বললেন, এত তাড়া কীসের?
আমি বললাম, দেখুন আমার অ্যালিবাই নেই।
না থাক। সেটাই নেসেসারিলি প্রমাণ করে না যে, আপনিই ক্রাইমটা করেছেন।
কিন্তু যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আজ আমি তোমায় ছাড়ব না।
আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানতে চাইলাম, কাগজে বেরিয়েছে আমিই প্রাইম সাসপেক্ট। কেন? আমি এর কৈফিয়ত চাই।
তাতে কী হয়েছে। জবাবদিহির সুরে সত্যবান বললেন, তাতে কী হয়েছে। ছাগলে কী না খায় আর কাগজে কী না বলে। আমিই বলেছি কাগজকে।
কেন? যেন আমার হক, আমি উত্তর দাবি করি।
আমার আজকের রুখে-দাঁড়ানো দেখে উনি এখনও অপ্রস্তুত। ওঁর দৃষ্টি ব্যথিত। এঁর এতদিনের সৌজন্য ও সকল সহৃদয়তাকে চ্যালেঞ্জ করে আমি কি অবিচার করছি তার ওপর? নাকি, এটা ওর মুখোশ? এমন তো নয় যে, খুনিকে না ধরতে পারলে শেষ পর্যন্ত, সাবস্ট্যানসিয়াল ক্ল তথা সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্সের জোরে চালান দেবে বলে ও আমাকে এভাবে জিইয়ে রেখেছে? যদি তাই হয়, তাহলে এই ঢ্যামনামির আমি আজ শেষ দেখব।
সত্যবান বললেন, ওটা একটা ক্ল্যাসিকাল মেথড আমাদের। এখনও কাজ দেয়। রিয়েল কালপ্রিট নিশ্চিন্ত থাকে। অন্তত, অ্যালার্ট আর থাকে না।
আজকের ইভিনিং স্টারে বেরিয়েছে, আমি নাকি কনফেস করেছি বিদ্রুপে সরু হয়ে আসে আমার ঠোট, এটাও কি আপনি বলেছেন? আপনার মেথডটা ক্ল্যাসিকাল না মর্ডান সার?
ওরা একটু বাড়িয়ে লিরেছে। কিন্তু কনফেস তো আপনি করেছেন।
এই তো মুখোশ খুলছে। একটু একটু করে। এসো, বাছাধন।
কনফেস? আমি! টেবিল ছেড়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি উঠে দাঁড়াই, হোয়াট ডু ইউ মিন!
বেশ খানিকটা গ্যাপ দিয়ে সত্যবান আবার একটা সিগারেট ধরালেন। প্যাকেটটা সেই থেকে টেবিলে পড়ে। যখন ইচ্ছা আমি নিতে পারি, উনি বলে রেখেছেন।
স্ত্রীকে মার্ডার করার জন্যে একটা ব্লু-প্রিন্ট তো আপনি তৈরি করেছিলেন — বাবু। সত্যবান বলে গেলেন, করেননি? ব্যাঙ্ক অফ টোকিওর চন্দনবাবু যেদিন এলফিনে আপনাকে বললেন, ওদের দলের একজন মহিলা বদ্রীনাথ থেকে নামার সময় ঘোড়াসুদু খাদে পড়ে গিয়েছিল, পরের দিন ফোন করে আপনি চন্দনবাবুকে, আজকাল একটা ঘোড়ার দাম কত জেনে আপনাকে জানাতে বলেছিলেন। বলেননি? চন্দনবাবু রেসে যান। রেসের মাঠ থেকে জেনে চন্দনবাবু আপনাকে জানান। জানাননি? আসলে এলফিনেই আপনার মাথায় এটা ফ্ল্যাশ করে যে তাহলে তো আপনার স্ত্রীও ওভাবে পড়ে যেতে পারেন, ঘোড়াসুদু! তাই না?