তোমাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে, আমার গলায় হাত বুলোতে বুলোতে রওশন বলে, প্রাণভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমি তো তোমার সামনেই বসে আছি, রওশন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না? আমি বলি।
রওশন হাসে, আর বলে, না, শুধু তোমার মুখ দেখছি, তোমাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। তারপর বলে, আমি একটু তোমাকে দেখি?
কীভাবে তুমি দেখতে চাও? আমি বলি।
আমার ইচ্ছে করে জামা খুলে তোমাকে দেখতে, আমার খুব ইচ্ছে করে, রওশন বলে, মনে হয় জামার ভেতরে তুমি আরো সুন্দর।
আমার লজ্জা লাগবে, রওশন, আমি বলি।
কিন্তু আমার যে দেখতে ইচ্ছে করে, রওশন বলে, একটু দেখি?
দেখো, আমি বলি।
রওশন একটি একটি করে আমার জামার বোতাম খোলে, আর ডান হাত আমার বুকের ওপর বুলোতে থাকে। রওশন জামাটি খুলে নিতে পারে না, আমি মাথার ওপর। দিয়ে খুলে জামাটি রওশনের হাতে দিই। নিচে গেঞ্জিও আছে, রওশন নিজেই আস্তে। আস্তে গেঞ্জিটি খোলে। শীতকাল, কিন্তু আমার শীত লাগছে না। আমি ভুলে যাচ্ছি আমি কোথায় আছি। রওশন আস্তে আস্তে হাত বুলোতে থাকে আমার শরীরে; আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকি।
তোমার শরীর কী যে সুন্দর, রওশন বলে। আমি কথা বলি না।
তোমার এ-তিলটি তুমি কখনো দেখো নি, আমার পিঠের এক জায়গায় আঙুল রেখে রওশন বলে, তিলটি আমি দেখলাম। তিলটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওই তিলটি তোমাকে দিলাম, আমি বলি।
রওশন আমার বুকে আঙুল দিয়ে একটু ঘষে, আর বলে, দেখো, কী সুন্দর লাল হয়ে উঠলো; এই লালটুকু আমার।
রওশনের মুখের দিকে আমি তাকিয়ে দেখি তার চোখ জুড়ে স্বপ্ন ভাসছে, সে হয়তো আমার শরীর দেখছে না, অন্য কিছু দেখছে, দেখতে দেখতে তারও চোখ অন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জানো, তোমার শরীর আমি দিনের পর দিন ধরে দেখতে পারি, রওশন বলে, দেখে দেখে আমার সাধ মিটবে না।
রওশন, তুমি আর কতোক্ষণ দেখবে? আমি বলি, আমার ঘুম পাচ্ছে।
তুমি ঘুমোও আর আমি তোমাকে দেখি, রওশন বলে, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
তারপর যে আমি আর কোনোদিন ঘুমাতে পারবে না, আমি বলি।
কেনো? রওশন জানতে চায়।
আমি জানি না, আমি বলি।
রওশন আমার শরীরে হাত বুলোতে থাকে, আর বলে, কী যে সুন্দর, কী যে সুন্দর, সারাজীবন চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
আমি রওশনকে ডাকি, রওশন।
রওশন বলে, কী?
তোমাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে, আমি বলি, তোমাকে দেখতে আমার খুব ইচ্ছে করছে।
রওশন বলে, সত্যিই তুমি দেখতে চাও?
চাই, আমি বলি।
তাহলে দেখো, বলে রওশন চোখ বোজে, এবং বলে, তবে ছুঁয়ো না আমাকে।
আচ্ছা, আমি বলি।
কিন্তু আমি কী করবো বুঝতে পারি না, যেনো আমি খুব গরিব, আমার সামনে। কোনো দেবতা মণিমাণিক্যের সিন্দুক হাজির করে খুলে দেখতে বলছে, কিন্তু আমি খুলতে জানি না। আমার হাত থেকে বারবার সোনার চাবি মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, তুলতে গিয়ে আবার পড়ে যাচ্ছে; সোনার চাবি তুলতে তুলতে আমার সারা জীবন কেটে যাবে, আমি কোনো দিন সিন্দুক খুলে দেখতে পারবো না।
রওশন বলছে, তুমি দেখবে না?
দেখবো, আমি বলি।
রওশনের কামিজের পেছনে স্বপ্নের ঘোরে বারবার পথ হারিয়ে ফেলতে ফেলতে। আমি হাত বুলোই; বোতামগুলোকে একেকটি সোনার তালা মনে হয়; একটি একটি করে খুলতে চেষ্টা করি আমি, আমার আঙুল কাঁপতে থাকে, সারা শরীর কাঁপতে থাকে, রওশন চোখ বুজে আছে, একটি একটি করে সিন্দুকের সোনার তালা খুলছি আমি। আমি রওশনের কামিজ টেনে নিচের দিকে নামাই, মনে হয় হাত দিয়ে আমি মেঘ সরিয়ে দিচ্ছি, আমার হাত কাঁপতে থাকে। রওশনের ধবধবে কাঁধ থেকে আমার চোখে চাঁদের বন্যার মতো মাংসের আলো ঢুকতে থাকে। রওশন একটুও নড়ে না। আমি কামিজের মেঘ টেনে আরো নিচে নামাই; আমার চোখের সামনে দুটি চাঁদ জ্বলে ওঠে, দুটি শুভ্র পদ্ম স্থির হয়ে ফুটে ওঠে। বাঁ দিকের চাঁদটিকে একটু ছোটো মনে হয় ডান। দিকের চাঁদের থেকে। মহাকালের মুখোমুখি আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে ওই চাঁদ, ওই পদ্ম; কিন্তু রওশন ছুঁতে নিষেধ করেছে, আমি ছুঁই না; আমি শুধু অন্ধ চোখ দিয়ে যুগল চাঁদ যুগল পদ্ম দেখতে থাকি। আমার। চামড়া ফেটে শরীরের সব দিক থেকে রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরোতে চায়; পদ্মার ঢেউয়ের ওপর আমি একটি ছোট্ট নৌকো প্রাণপণে চেষ্টা করতে থাকি নিজেকে সমস্ত ঢেউয়ের। মধ্যে স্থির করে রাখতে।
তুমি কি আমাকে দেখছো? রওশন জিজ্ঞেস করে।
দেখছি, আমি বলি, কিন্তু মনে হচ্ছে আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো? রওশন বলে, এবং চোখ খুলে আমার মুখের দিকে তাকায়।
আমি রওশনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
তোমার কি শুধু এটুকুই দেখতে ইচ্ছে করছে? রওশন বলে, আমার কিন্তু তোমাকে পুরোপুরি দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমিও তোমাকে পুরোপুরি দেখতে চাই, আমি বলি।
রওশন চোখ বোজে, আমি রওশনের সালোয়ার মেঘের মতো টেনে সরিয়ে মেঝেতে রাখি। জ্যোত্সার বন্যায় খাট ভেসে যায়, ঘর ভরে যায়।
আমি চোখ বুজি, রওশন আমার লুঙ্গি সরিয়ে মেঝেতে রাখে।
আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকাই।
তুমি সুন্দর, রওশন বলে।
তুমি সুন্দর, আমি বলি।
আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, কেউ কাউকে ছুঁইছি না, দেখছি একজন আরেকজনকে, দেখতে দেখতে অন্ধ হয়ে যাচ্ছি।
আমাদের শরীর নিয়ে আমরা কী করবো? আমি বলি।