রহমত আলি ভিস্তি সাহেব প্রথম আল্লা ও রসুলকে ধন্যবাদ দেন।
তিনি বলেন, মাননীয় মজলিশ, আমাদের সকলের ইমানের বলে ইনশাল্লা আমরা আল্লা, রসুল, আর আমাদের পথপ্রদর্শক আবু আলা মওদুদির নির্দেশিত পথে ঠিক মত আগাইতেছি। কিন্তু দ্যাশ এখনো কাফেরদের হাতে, তাই আমাদের কাফেরদের ড্যামক্র্যাসি মানতে হয়, ইলেকশন করতে হয়। ইসলামি বিপ্লবের সময় আইজও আসে নাই, ইলেকশন করতে করতে একদিন আমরা ইসলামি বিপ্লব ঘটাইব। তারপর আর ইলেকশন থাকব না, ড্যামক্র্যাসি থাকব না; থাকব আল্লার শাসন।
সবাই বলে, আলহামদুলিল্লা।
মওলানা রহমত আলি ভিস্তি বলতে থাকেন, সারা দেশে আমাদের মুত্তাফিক ভাইরা রেডি হইতেছে, আর দেরি নাই, রোকন ভাইরা রেডি হইতেছে, মোমেনিন সালেহিন ভাইরা রেডি হইতেছে, বিপ্লব ঘটিবেই ঘটিবে। তখন আর আমাদের কাফেরদের ইলেকশন করতে হবে না। দেশে চলবে আল্লার শাসন, চলবে আমাদের রাজবংশের শাসন।
সবাই বলে, আলহামদুলিল্লা।
ভিস্তি সাহেব বলতে থাকেন, আমাদের পথপ্রদর্শক পরম শ্রদ্ধেয় আমিরে আমির আপনাদের জানাইয়াছেন যে আমাদের মুরুব্বিরা এইবার নতুন ইশারা দিয়াছেন, আমাদেরও সেই ইশারা ধরে বিপ্লবের পথে আগাইয়া যাইতে হবে। অইবার আমরা শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের সঙ্গে আছিলাম, তারপর আমরা তাহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, অন্দোলনে আমরা ছিলাম জনগণমন রাজবংশের সঙ্গে; তাগো সঙ্গে থাকিবার ফলে আমাদের অনেক লাভ হইয়াছে। এখন আর তাহারা আমাদের রাজাকার বলিয়া নিন্দা করে না। তাহারাই আমাদের বড় বিপদ, তাহারা আমাদের সঙ্গে থাকিলে আমাদের কোনো বিপদ নাই।
মওলানা এস এম কোরবান জানতে চান, তাহাদের অই হিন্দু বুদ্ধিজীবী কুত্তাগুলি ত আমাদের পাছে লাগিয়াই আছে, তাহার কী হইবে?
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, অইগুলি পলিটিক্স বোঝে না, অইগুলি আছে চিল্লানের লিগা, ঘেউওঘউ করনের জইন্যে, কিছু খাওনের লিগা, অইগুলির চিল্লানের জইন্যেই আমরা উপরে উঠিতেছি, ইসলামের প্রসার হইতেছে, আমাদের প্রসার হইতেছে। ওইগুলিও আমাদের ডরে এখন ভিতরে ভিতরে মুসলমান হইতেছে, ওইগুলিরে ভয় পাইবার কিছু নাই।
রহমত আলি ভিস্তি দু-তিন গেলাশ পানি পান করেন।
তারপর তিনি বলতে থাকেন, এইবার আমাদের অবস্থা অনেক ভাল, এইবার সত্তর আশিটা সিট আমরা নিজেরাই পাইব, আর আমাদের গোপনে অ্যালাইয়েন্সে আসতে হইবে জনগণমন রাজবংশের সহিত। মনে হইতেছে তাহারাই এইবার ম্যাজরিটি হইবে, তাহাদের সঙ্গে থাকিলেই ভাল; আমাদের মুরুব্বিরাও সেই ইশারাই দিয়াছেন।
সবাই বলেন, আলহামদুলিল্লা, ইশারা মতোই আমাদের চলিতে হবে, তাহা হলেই আমরা আল্লার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, আমরা নিজেরা এইবার ক্ষমতায় যাইতে পারব না, কিন্তু কারা ক্ষমতায় যাইবে তাহা নির্ভর করিবে আমাদের উপর, আমরা তাহাদের আমাদের পথে চালাইব। আমাদের দেখতে হবে কিসে আমাদের লাভ বেশি।
মওলানা সলিমুল্লা জিজ্ঞেস করেন, আমাদের শিবিরের ভাইরা, সালেহিন ভাইরা কী ভূমিকা পালন করিবে? ইলেকশনে তাহাদের কীভাবে কাজে লাগাইব।
রহমত আলি ভিস্তি বলেন, তাহারা আমাদের সিপাহি, আল্লার নামে তাহাদের আমরা যা করিতে বলিব, তাহারা তাহাই করিবে।
তাঁদের মজলিশে সিদ্ধান্ত হয় আমির ও নায়েবে আমির রাজবংশের মঙ্গলের জন্যে যা ভালো মনে করবেন, তা করবেন, যাদের সাথে বসার তাদের সাথে বসবেন, যাদের সাথে দাঁড়ানোর তাদের সাথে দাঁড়াবেন; আর তারা যা আদেশ করবেন, তা সবাই আল্লার নামে পালন করবে।
আমরা জনগণরা এখন খুবই ক্লান্ত; দু-তিন বছর রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে, গলা চুরমার করে শ্লোগান দিয়ে, বাসে আর ট্রাকে আর গাড়িতে দাউদাউ আগুন জ্বালিয়ে, পুলিশের টিয়ার গ্যাস আর গুলি আর লাঠির বাড়ি খেয়ে, আমরা এখন খুবই শ্রান্ত; আমাদের খেলা শেষ হয়েছে, আমাদের দিয়ে তারা যা খেলাতে চেয়েছেন তা খেলে আমরা এখন আধাঘুমন্ত; এখন আর আমাদের খেলার নেই। আমাদের কাজ এখন খেলা দেখা, আমাদের কাজ এখন আমাদের রাজারা কেমন খেলেন, সেই মজা উপভোগ করা। কোনো টিকেট কিনতে হচ্ছে না, স্টেডিয়ামে যেতে হচ্ছে না; আমরা রাজাদের খেলা দেখছি আর হাততালি দিয়ে মজা পাচ্ছি। খেলুন, আমাদের রাজারা খেলুন; আমরা দেখি।
কিন্তু আমরা, মূর্খ জনগণরা, গরিব মানুষ, আমাদের অতো মজা দেখার সময় কোথায়? অতো আমোদপ্রমোদ হাডুডু কুকুৎ রঙতামাসা উপভোগের উপায় কই আমাদের? আমরা ব্যস্ত আমাদের সবচেয়ে বড়ো কাজে, মরমর দেহটাকে বাঁচিয়ে রাখার কাজে; বাঁচাই আমাদের সবচেয়ে বড়ো কাজ। আমাদের আমরা না বাঁচালে কে বাঁচাবে, আমাদের কে আছে? দেহটার ভেতর মধু আছে, তাই ওটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আমরা দিনরাত বিষ খাই; আর এই আকাশ বাতাস মেঘ নদী রোদ ধান আর রাতের বেলা একটু আধটু সুখ ছেড়ে কার সেই পারে চলে যেতে ইচ্ছে করে? আমরা আছি আমাদের দুঃখকষ্টে, আমাদের দুঃখকষ্টই আমাদের জীবনের রঙতামাসা, তাতেই আমরা মজে আছি, রাজারা আছেন তাদের সুখেসম্পদে। তারা আরো ক্ষমতা না পেলে দুঃখ না পান, তাঁদের শরীর জ্বালা করতে থাকে, একশো বছর সিংহাসনে না থাকতে পারলে কষ্ট পান, আরো সম্পদ না পেলে দুঃখ পান, তাঁদের দেহে আগুন জ্বলতে থাকে; তাদের দুঃখ আর আমাদের দুঃখ ভিন্ন। তাদের দুঃখ সোনা দিয়ে তৈরি, আমাদের কষ্ট পচা খড়কুটোয়। রাজারা চিরকাল রাজা থাকবেন আমরা চিরকাল আমরা থাকবো, এটা কে না জানে, রাজারা ও আমরা কোনো দিন এক হবে না।
চমৎকার খুব ভাল লাগলো